Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Clay Lamps

যন্ত্রের চাকা ঘুরছে কুম্ভপাড়ায়

স্থানীয় বাসিন্দা গোকুলচন্দ্র দাস, রণজিৎ দাসেরা জানালেন, ইলেকট্রিক মোটর-চাক আসার পর ব্যবসায় গতি বেড়েছে। তাঁরা আরও জানালেন, সালকিয়া থেকে তাঁরা অর্ডার দিয়ে এই জাতীয় মোটরচালিত চাক কিনে এনেছেন।

মোটর চালিত চাক এখন ঘরে ঘরে।

মোটর চালিত চাক এখন ঘরে ঘরে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হলদিয়া শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:১২
Share: Save:

হলদিয়া মহকুমার সুতাহাটার বাবুপুরের কুম্ভপাড়ায় এখন চূড়ান্ত ব্যস্ততা। ঘরে ঘরে তৈরি হচ্ছে নানা ধরনের প্রদীপ।

সামনেই আলোর উৎসব দীপাবলি। তার আগে কাজের চাপ সামলাতে, কুমোরপাড়ায় গিয়ে দেখা গেল ছেলে-বুড়ো সকলে মিলে হাত লাগিয়েছেন কাজে। এই এলাকায় রয়েছে একাধিক ভাটি। ভাটিতে পুড়ছে নানা ধরনের প্রদীপ, মাটির সরা, চায়ের ভাঁড়, কলসিও। ভাটিতে আগুন দিচ্ছিলেন সঞ্জয় প্রামাণিক। সঞ্জয় বলছিলেন, ‘‘মাঝে বেশ কিছুদিন চিনা প্রদীপের কারণে ব্যবসা মার খেয়েছিল। আমরা অনেকেই ভেবেছিলাম পেশা পরিবর্তন করব। কিন্তু ইদানিং দেখছি মাটির জিনিস কেনার রেওয়াজ বেড়েছে।’’ তিনি জানালেন, দীপাবলির সময় অনেকেই হাজার হাজার মাটির প্রদীপ বায়না করছেন। এক একটি বাড়িতে প্রায় হাজার দশেক প্রদীপ তৈরি হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা গোকুলচন্দ্র দাস, রণজিৎ দাসেরা জানালেন, ইলেকট্রিক মোটর-চাক আসার পর ব্যবসায় গতি বেড়েছে। তাঁরা আরও জানালেন, সালকিয়া থেকে তাঁরা অর্ডার দিয়ে এই জাতীয় মোটরচালিত চাক কিনে এনেছেন। প্রতিমা প্রামাণিক ও সচিন প্রামাণিক দুই শিল্পী বাড়িতেই মোটরচালিত চাক দিয়ে কাজ করছেন। জানা গেল, প্রদীপের পিস প্রতি দর এক টাকা। ঘট লক্ষ্মীরও চাহিদা এই পুজোয় বেশি ছিল। ঘট আসন, দাঁড়ানো লক্ষ্মীর ভাঁড়, গণেশ, কলসি, দই ভাঁড়, ধুনুচি— সব তৈরি হচ্ছে এই বাবুপুরে। প্রতিমা জানান, বড় প্রদীপ ১০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।

শিল্পী জন্মেজয় দাসের বয়স প্রায় ৭০। তিনি পুরনো দিনের মানুষ। তাই তাঁর বাড়িতেই রয়েছে হাতে ঘোরানো চাক। তিনি ব্যবহার করেন প্রাচীন সেই শিল্পশৈলী। তবে গোটা গ্রামের বেশিরভাগ বাড়িতেই পরিতক্ত যন্ত্র হিসেবে স্থান পেয়েছে কুমোরের সেই চাক। তবে হাতে ঘোরানো চাক নিয়ে কালীশঙ্কর দাস জানান, বাবার ব্যবহার করা এই চাক ঘুরিয়ে সুখ মেলে। কুমোরপাড়ায় চাক ঘোরাতে জানাটাই আসল শিল্প। এ দিন কুমোরপাড়ায় যান বিখ্যাত টেপা পুতুল শিল্পী মোহনলাল মান্না। মোহন এ দিন কুমোরদের সবচেয়ে প্রাচীন ষষ্ঠী পুতুল তৈরি করে দেখান। তিনি বলেন, ‘‘এই পুতুল প্রাচীন। ওঁদের পূর্ব পুরুষদের হাতেই প্রাণ ফিরে পেয়েছিল। আজ বিস্মৃতপ্রায়। ওদের তাই দেখিয়ে দিলাম কী ভাবে করতে হয়। চিনা পুতুলের বৈচিত্র রয়েছে। বাজারের লড়াইয়ে টিকে থাকতে গেলে নতুন নতুন ভাবনা আনতে হবে।’’মোহন জানান, স্টুডিওতে বসে আমরা কাজ করি। কিন্তু এই শিল্পীরাই আসল। এ দের কাছে এসেও আমি নতুন কিছু শিখি। কুমোরপাড়ায় অনেকেই জানালেন, ব্যবসা নতুন করে চাঙ্গা হচ্ছে। কিন্তু সরকারের তরফে শিল্পীদের জন্য বিশ্বকর্মা প্রকল্প রয়েছে। তবে সেই প্রকল্পের সুযোগ থেকে বঞ্চিত ওঁরা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Clay Lamps Haldia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE