Advertisement
E-Paper

মহিষাসুর নিধনে কাঁদে কেন্দাশোল

দেবী দুর্গা নন, এখানে বরেণ্য রাজা মহিষাসুর। তাই রাজ-নিধনের সময়টা উৎসব নয়, শোক পালন করে শালবনির কেন্দাশোল গ্রাম। পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনির কেন্দাশোলে মূলত সাঁওতাল ও কুর্মিদের বাস। আদিবাসী-মূলবাসী মানুষগুলোর বিশ্বাস হল, মহিষাসুর ছিলেন এ দেশের রাজা।

কিংশুক আইচ

শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৩৯
চলছে মহিষাসুরের মূর্তি তৈরি। —নিজস্ব চিত্র।

চলছে মহিষাসুরের মূর্তি তৈরি। —নিজস্ব চিত্র।

দেবী দুর্গা নন, এখানে বরেণ্য রাজা মহিষাসুর। তাই রাজ-নিধনের সময়টা উৎসব নয়, শোক পালন করে শালবনির কেন্দাশোল গ্রাম।

পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনির কেন্দাশোলে মূলত সাঁওতাল ও কুর্মিদের বাস। আদিবাসী-মূলবাসী মানুষগুলোর বিশ্বাস হল, মহিষাসুর ছিলেন এ দেশের রাজা। মহালয়া থেকে দশ দিন মহিষাসুর স্মরণ চলে এই গ্রামে। দিকে দিকে যখন সপরিবার দুর্গা প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততা তুঙ্গে, তখন কেন্দাশোলের শিল্পী রামচন্দ্র হাঁসদা মহিষাসুরের মূর্তি গড়তে ব্যস্ত। সেই মূর্তি বীরদর্প নামে এক রাজার। প্রবীণ মানুষজন জানালেন, সপ্তমীর বিকেলে এখানে মহিষাসুরকে মালা পরিয়ে স্মরণ দিবস পালিত হবে। আসবেন সাঁওতাল ও কুর্মি সমাজের বিশিষ্টরা। গ্রামের বাসিন্দা রবিনাথ হাঁসদা, সিজান হাঁসদারা জানালেন, দুর্গাপুজোর দিনগুলো তাঁদের কাছে দুঃখের। দাসাই বিধিমতে এক সময় দেবীর মুখদর্শনও নিষিদ্ধ ছিল। এখন অত বিধিনিষেধ নেই। প্রথা মেনে দাসাই নাচ হয় আজও। দাসাই নাচ দুঃখের। এই নাচের সঙ্গে প্রতিটি গানের শুরুতেই হায়রে হায়রে বলে শোকজ্ঞাপন করা হয়। তবে এই দাসাই নাচ এখন জঙ্গলমহলের বিভিন্ন মণ্ডপেই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অঙ্গ হয়ে গিয়েছে। তবে কেন্দাশোলে আজও দাসাই শোকপালনেরই মাধ্যম। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাঁওতালি বিভাগের শিক্ষক দুলি হেমব্রম, রতন হেমব্রমরা বলছিলেন, ‘‘আদিবাসী সমাজের কাছে মহিষাসুরই তাদের রাজা। বহু দিন ধরে দাসাই নাচের মাধ্যমে মহিষাসুরকে স্মরণের প্রথা চলে আসছে।’’ শালবনির এই গ্রামে এম কে খেরয়াল রাস্কা মহল সংস্থার উদ্যোগে পুজোর চার দিনই থাকছে নানা আয়োজন। সকাল থেকে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা। বিকেলে স্মরণ অনুষ্ঠান। সারা রাত ধরে চলবে আদিবাসী নাচ। এই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত কৃষ্ণকান্ত মাহাতো পেশায় শিক্ষক। তাঁর কথায়, ‘‘আদিবাসী- মুলবাসীদের নিজস্ব সংস্কৃতি নানা চটকদার সংস্কৃতির আগ্রাসনে আজ বিপন্ন। তাই আমাদের এই অনুষ্ঠানে আদিবাসী-মূলবাসীদের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা থাকে। যাতে এই সমাজের নবীন প্রজন্ম নিজেদের সংস্কৃতির তাৎপর্য বুঝতে পারে।’’ মহিষাসুর আদিবাসী সমাজে হুদুড় দুর্গা নামে পরিচিত। এই অনুষ্ঠানের নাম হুদুড় দুর্গা স্মরণ অনুষ্ঠান। শোকপালনের মাঝে বাঁধা রয়েছে উৎসবের সুর। নতুন জামা পরে মণ্ডপে ঠাকুর দেখার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে লক্ষ্মীমণি হাঁসদা, শিবনাথ হাঁসদাররা। তবে বিকেলে মহিষাসুর স্মরণানুষ্ঠানেও থাকবে ওরা। কেন্দাশোলের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জেনে নেবে, নিজেদের শিকড়ের কথা।

Durga puja
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy