Advertisement
E-Paper

পানায় মজেছে দেহাটি খাল, সঙ্কটে নিকাশি

এলাকায় জলের নিকাশি সমস্যা নিয়ে সেচ দফতরের পূর্ব মেদিনীপুর বিভাগের নির্বাহী বাস্তুকার রঘুনাথ চক্রবর্তী বলেন, “দেহাটি খাল তিন বছর আগেই সংস্কার হয়েছিল। খালের যা গভীরতা, তাতে জল নিকাশির অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।

আনন্দ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৭ ০০:০৪
অবরুদ্ধ: জলের দেখা নেই। নিজস্ব চিত্র

অবরুদ্ধ: জলের দেখা নেই। নিজস্ব চিত্র

বর্ষা হলেই জমিতে এক কোমর জল দাঁড়িয়ে যাওয়ায় ধান চাষ করা যায় না। তাই শীতকালে বোরো চাষই একমাত্র ভরসা সিদ্ধা গ্রামের বাসিন্দা প্রফুল্ল মাইতির। কিন্তু কেন এই সঙ্কট? প্রফুল্লবাবুর জবাব, দেহাটি খাল মজে থাকায় মাঠের জল বার হতে পারছে না। ফলে আমন ধান চাষ করতে পারছেন না তাঁরা।

নিকাশি এবং সেচ, দু’টি ক্ষেত্রেই দেহাটি খালের উপর নির্ভরশীল পাঁশকুড়া ও কোলাঘাট ব্লকের খাল-সংলগ্ন গ্রামগুলি। স্থানীয়দের অভিযোগ, খাল মজে গিয়ে এবং কচুরিপানায় ভরে যাওয়ার ফলে ভারী বৃষ্টিতে খালের দু’পাশের বিস্তীর্ণ এলাকার চাষ জমির জল নিকাশি বন্ধ। দেহাটি খাল দিয়ে জল গিয়ে রূপনারায়ণ নদীতে পড়ে। কিন্তু খালের জল দ্রুত বার হতে না পারায় কোলাঘাট ব্লকের সাগড়বাড়, সিদ্ধা-১ ও ২, বৃন্দাবনচক পঞ্চায়েত এবং পাঁশকুড়া-১ ব্লকের মহৎপুর এলাকা গত এক সপ্তাহ ধরে প্রায় পাঁচ ফুট জলের তলায়।

এলাকায় জলের নিকাশি সমস্যা নিয়ে সেচ দফতরের পূর্ব মেদিনীপুর বিভাগের নির্বাহী বাস্তুকার রঘুনাথ চক্রবর্তী বলেন, “দেহাটি খাল তিন বছর আগেই সংস্কার হয়েছিল। খালের যা গভীরতা, তাতে জল নিকাশির অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কচুরিপানা যা জমে রয়েছে, সেটাও জল বার হওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা নয়। কিন্তু দেহাটি খালের সঙ্গে যুক্ত টোপাখাল ও চাপদাগাজই খাল দিয়ে বিপুল পরিমাণে জল এসে পড়ায় জল বার হতে বেশি সময় লাগছে।”

তবে শুধু বর্ষাকাল নয়, দেহাটি খাল সংক্রান্ত সঙ্কট সারা বছরের। সমস্যাটি কী? কোলাঘাট পুরাতন বাজারের কাছে রূপনারায়ণ নদের সঙ্গে যুক্ত প্রায় ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই খালের একটা বড় অংশ রয়েছে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশ দিয়ে পাঁশকুড়ার পুরাতন বাজার পর্যন্ত। বাজারের কাছে নারান্দা এলাকায় খালটি আড়াআড়ি বাঁক নিয়ে মিশেছে মেদিনীপুর ক্যানালের সঙ্গে। সেটি আর একটু এগিয়ে যুক্ত হয় কাঁসাই নদীর সঙ্গে। কোলাঘাট পুরাতন বাজার থেকে বরদাবাড় বাজার পর্যন্ত খালের প্রায় ১০ কিলোমিটার অংশে এখন রূপনারায়ণ নদীর জোয়ারের জল নিয়মিত আসে। কিন্তু বরদাবাড় বাজার থেকে জিয়াদা, মেচগ্রাম, পাঁশকুড়া পুরাতন বাজার হয়ে মেদিনীপুর ক্যানেল পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার অংশ মজে ও কচুরিপানায় ভরে গিয়ে বেহাল দশা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, খাল-সংলগ্ন সিদ্ধা-১, ২ ও পাঁশকুড়া-১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার প্রায় ৩০টি গ্রামে বর্ষাকালে চাষের জমির জল বার হতে পারে না। সে কারণেই আমন চাষ করতে সমস্যায় পড়েন চাষিরা। এ দিকে, শীতকালে খাল দিয়ে রূপনারায়ণের জল না-আসায় বোরো চাষের জন্য সেচের জল পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়েই মাঠে শ্যালো ও সাব-মার্সিবল পাম্প বসিয়ে ভূগর্ভস্থ জল তুলে সেচের ব্যবস্থা করতে হয়। বেড়ে যায় চাষের খরচ। বর্ষাকালে আমন ধান এবং শীতকালে বোরো ধান চাষ ছাড়াও এই এলাকা ফুল এবং আনাজ চাষের কারণে প্রসিদ্ধ। গাঁদা, দোপাটি, ডালিয়া ফুল এবং ঝিঙে, ঢেঁড়শ, করোলা, পটল ইত্যাদি আনাজের ফলন হয় এখানে। নিচু জমিতে সরাসরি জল চলে আসে। আর উঁচু জমির ক্ষেত্রে জল নিয়ে আসতে হয়। তবে বর্তমানে খালে স্রোত না-থাকায় নিকাশির পাশাপাশি সেচের কাজেও তাকে ব্যবহার করা কঠিন হয়ে উঠছে। দক্ষিণ মেচগ্রাম এলাকার এক সপ্তাহ ধরে ডুবে থাকায় রোয়া আমন ধান ও বীজতলা, ফুল, আনাজ চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

স্থানীয় কৃষক সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ নায়েকের অভিযোগ, “বেহাল জল নিকাশি ব্যবস্থার ফলে সমস্যায় পড়ছেন চাষিরা। খালের একাংশ দখল করে দোকান, বাড়ি গড়ে ওঠায় নিকাশির ক্ষমতা কমছে। ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দাবি জানানো হয়েছে সেচ দফতরকে।” নারান্দা এলাকায় খালের কাছেই বাড়ি এলাকার প্রাক্তন সিপিআই বিধায়ক চিত্তদাস ঠাকুরের। তিনি বলেন, “খালের নিয়মিত সংস্কার না-হওয়ার ফলেই নিকাশির সমস্যা তৈরি হচ্ছে।” জেলা সেচ দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “দেহাটি খাল বছর তিনেক আগে সংস্কার করা হয়েছিল। খালের কিছু অংশে থাকা কচুরিপানা এবং মাছ ধরার পাটা জালগুলি বর্ষার আগে তুলে ফেলা হবে। খালের জায়গা দখল করে গড়ে ওঠা নির্মাণগুলি সরানোরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”

Drainage পানা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy