ভ্যানে পানীয় জল আসতেই হুড়োহুড়ি। বহিত্রকুণ্ডায়। — নিজস্ব চিত্র।
রোদে পুড়ে ভোট চাইতে আসতে পারেন, একটু জল দিতে পারেন না?
প্রশ্নটা শানিয়ে রেখেছেন মারিশদা, দুরমুঠ, কুসুমপুরের বাসিন্দারা। কিন্তু তাঁরা জানেন, কোনও লাভ নেই। চোখের সামনে দেখেছেন, একের পর এক ভোট গিয়েছে, হাত বদলেছে ক্ষমতা। তবু ভাগ্য বদলায়নি। গরম পড়লেই পাল্লা দিয়ে বাড়ে জল-সঙ্কট। ভোট এলে অবশ্য শুরু হয় প্রতিশ্রুতির বন্যা। শাসক, বিরোধী নির্বিশেষে এই জল সঙ্কটকেই ইস্যু করে তোলে। ভোট মিটলে সে সব কথা বেমালুম ভুলে যান নেতারা।
কাঁথি-৩ ব্লকের এই তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতের অধিকাংশ এলাকাই ‘নন-টিউবওয়েল জোন’। অর্থাৎ এখানে শতহস্ত গভীরে নামলেও পানীয় জল পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই। অগত্যা ভরসা করতে হয় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জল সরবরাহের উপরই। কিন্তু সারা বছরই পানীয় জলের সমস্যা। গ্রীষ্মে সেই সমস্যা চরম আকার নেয়।
নিয়ম মেনে এ বছরও জলস্তর নেমে গিয়েছে অনেকখানি। ফলে জলের আকাল। ‘‘সে তবু মানা যায় প্রকৃতির রোষ বলে, কিন্তু যে দোষটা মানুষের সেটা ক্ষমা করি কী করে’’— অসিত দেবনাথ রোদে পো়ড়া লাল মুখটা আরও হয়ে যায় রাগে। বিকাশবাবু দুরমুঠের বাসিন্দা। প্রতি বছর এই জলসঙ্কটে ভুগতে ভুগতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। বিকাশবাবুর মতো পাড়ার অন্যদেরও অভিযোগ, কাজ করে না কেউ। না জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর, না স্থানীয় পঞ্চায়েত। দিনের পর দিন নজরদারির অভাবে অকেজো হয়ে গিয়েছে জল সরবরাহ ব্যবস্থা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এলাকায় যে জলের কলগুলি রয়েছে সেগুলি প্রায় কয়েক দশক আগের। বেশিরভাগই ভেঙে গিয়েছে। কোথাও কলের মাথা নেই। প্রতিদিন জলের অপচয় হয়। আর যে পাইপ লাইনের মাধ্যমে জল আসে, তাও ভেঙেচুরে গিয়েছে কবেই। কেউ নজর করেনি। মেরামতি বা বদলে দেওয়ার কথা মনেই হয়নি। ফলে বিস্তীর্ণ এলাকায় পানীয় জলের তীব্র সঙ্কট। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেই বালতি বা জ্যারিকেন হাতে ছুটতে হয় দু’তিন কিলোমিটার। সেটাই দস্তুর। অনেকে আবার জল কিনে খেতে বাধ্য হন। পাঁচ, দশ বা পনেরো টাকা প্রতি জ্যারিকেন। অনেকে আবার পুকুরের জলে ফটকিরি দিয়ে খান। অনেকে স্কুলেই মিড-ডে মিলের রান্না হয় পুকুরের জলে। কুসুমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বহিত্রকুন্ডা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ঝাড়েশ্বর বেরা বলেন, “আমাদের এলাকার বেশিরভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয় ও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলিতে পুকুরের জলই ব্যবহার করতে হয়। বাধ্য হয়েই’’
কুসুমপুর গ্রামপঞ্চায়েতের সিপিএম উপপ্রধান মৃণালকান্তি মণ্ডলও স্বীকার করে নেন, “কয়েক দশক আগের জল সরবরাহ ব্যবস্থা অনেকদিন আগেই অকেজো হয়ে গিয়েছে। সংস্কারও তেমন হয় না। গ্রামগুলিতে প্রকল্পের কয়েকটি কল থাকলেও সেগুলি দিয়ে জল পড়ে না।” তবে তাঁর দাবি, একশো দিনের কাজের প্রকল্পে পুকুর কাটিয়ে জল সংরক্ষণ করে পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ করা হয়। কিন্তু গরমে পুকুরের জলও শুকিয়ে গিয়েছে। ফলে জল সরবরাহে সমস্যা হচ্ছে। কাঁথি-৩ পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সভাপতি বিকাশ বেজও দাবি করেন, “পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দিলেই পঞ্চায়েত সমিতি সেখানে জলের গাড়ি পৌঁছে দেয়। এ বারও তেমন হবে।”
তবে দক্ষিণ কাঁথিতে এ বার যাঁরা যুযুধান। তাঁরা মন্তব্য করছেন একেবারে প্রথা মেনে। কী ভাবছেন জল সমস্যা নিয়ে? বিদায়ী বিধায়ক তথা এ বারের তৃণমূল প্রার্থী দিব্যেন্দু অধিকারী গতে বাঁধা জবাব দিয়ে দায় সেরেছেন, ‘‘দুরমুঠ, কুসুমপুরের সমস্যা গত ৩৪ বছরের। বাম আমলের অপরিকল্পিত কাজের ফলেই এখন জল সরবরাহ করা যাচ্ছে না। বিস্তীর্ণ এলাকায় নতুন করে পাইপলাইন বসাতে দীর্ঘ সময় লাগবে।’’ তবে তাঁর ভোট-অভয়, ‘‘এই সময় কাঁথি-৩ পঞ্চায়েত সমিতি ও কাঁথি পুরসভার গাড়িতে পানীয় জল এলাকায় পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরও জল ভর্তি ট্যাঙ্ক রিকশায় করে বিভিন্ন গ্রামে পৌছে দিচ্ছে।’’ বিরোধী জোটের প্রার্থীর উত্তরটাও সহজেই অনুমেয়। সিপিআইয়ের উত্তম প্রধান বলেন, ‘‘গত পাঁচ বছরে পাম্প হাউস, রিজার্ভার, পাইপ লাইনের কোনও রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি। ভোটের মুখে তৃণমূল নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে বাম আমলের উপর দোষ চাপাচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy