সারা রাজ্যের তুলনায় ভোট পর্ব মিটেছে শান্তিতেই। তবে ‘নিন্দুকে’রা বলছেন আসলে এখানে তো বিরোধী বলতে কিছু নেই, অশান্তির ভয়ও তাই নেই। শাসক তৃণমূল নিজেরাও এই দাবিতেই গর্বিত। নেতারা বলেই ফেলছেন ১৮ থেকে ২০টি আসনে জিতবে তৃণমূলই। বাম বিজেপি এবং কংগ্রেস—সকলেই অবশ্য তাদের মতো করে আশা প্রকাশ করছে অন্তত ৫-৭টি আসন দখল করার।
এ সবের মধ্যেই আজ মঙ্গলবার সকাল ৮ টা থেকে তমলুক পুরসভার ভোট গণনা হবে জেলা প্রশাসনিক ভবনে। সকাল ১০ টার মধ্যেই ফলাফল জানা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক, কাঁথি ও এগরা তিন পুরসভাতেই বিদায়ী পুরবোর্ডে ক্ষমতায় ছিল রাজ্যের শাসক তৃণমূল। এ বারও সেই ধারা অব্যাহত থাকে কি না, তা নিয়ে যেমন কৌতূহল রয়েছে। একই ভাবে কৌতূহল রয়েছে তমলুক পুরসভা নির্বাচনে বেশ কিছু ওয়ার্ডে তৃণমূলের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে থাকা নির্দল প্রার্থীদের জয়-পরাজয় নিয়ে।
২০ আসন বিশিষ্ট তমলুক পুরসভায় গত ২০১০ সালের নির্বাচনে তৃণমূল জিতেছিল ১৩ আসনে। বিরোধী বামফ্রন্ট পেয়েছিল তিনটি আসন। কংগ্রেস পেয়েছিল দু’টি আসন। আর নির্দল প্রার্থী জিতেছিল দু’টি আসনে। গত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পাশাপাশি ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ও ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে জেলায় তৃণমূলের একছত্র আধিপত্য জোরদার হয়েছে।
অন্যদিকে জেলায় বিরোধী বামেদের বড় শরিক সিপিএমের একদা দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা লক্ষ্মণ শেঠ বহিষ্কৃত হওয়ার জেরে দলে ভাঙন হয়েছে। লক্ষ্মণ শেঠের নেতৃত্বে তৈরি হয়েছে ভারত নির্মাণ পার্টি। আর এক বিরোধীদল বিজেপির শক্তি বৃদ্ধি হয়েছে। তবে জেলায় কংগ্রেসের শক্তি বৃদ্ধির লক্ষণ নেই। ফলে এ বার পুরসভা নির্বাচনে তমলুক পুরসভায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রধান শক্তি হিসেবে কারা উঠে আসবে তা নিয়ে জেলার রাজনৈতিক মহলে জল্পনা রয়েছে।
তমলুক পুরসভার ২০ টি ওয়ার্ডে এবার মোট প্রার্থী ৮৫ জন। এদের মধ্যে দলীয় প্রতীক নিয়ে তৃণমূল ২০টি আসনে, বামফ্রন্ট ১৬ টি, বিজেপি ১৬ টি , কংগ্রেস ১০টি আসনে লড়াই করেছে। এসইউসি ৩ টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। আর বিভিন্ন ওয়ার্ডে মোট ২০ জন নির্দল প্রার্থী লড়াই করছে। এর মধ্যে কয়েকটি আসনে নির্দল প্রার্থীকে সমর্থন করেছে বামফ্রন্ট ও বিজেপি।
শনিবার ভোটগ্রহণ পর্বে মোট ৪৭ হাজার ৩৬২ জন ভোটারের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ ভোট দিয়েছে। এ বার ভোট দেওয়ার পরে সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে লড়াইয়ে থাকা প্রার্থী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল হিসেব নিকেশ চালিয়েছে। আর এই ফলাফলের পূর্বাভাস নিয়ে শাসক দল তৃণমূল যেমন ফের পুরবোর্ড গড়ার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী, তেমনি বিরোধী বামফ্রন্ট, বিজেপি, কংগ্রেস ও নির্দল প্রার্থীরা বেশ কয়েকটি আসনে জেতার বিষয়ে আশা প্রকাশ করেছে।
তৃণমূলের তমলুক শহর সভাপতি দিব্যেন্দু রায়ের দাবি, ‘‘শহরের বাসিন্দারা এ বার বিপুলভাবে আমাদের সমর্থন জানিয়েছেন। ২০ টি আসনের মধ্যে কমপক্ষে ১৮ টি তো বটেই, ২০ টি আসনেও জেতার সম্ভবনাও রয়েছে দলের। আমরাই ফের পুরবোর্ড গঠন করবে। বামফ্রন্ট, বিজেপি একটিও আসন পাবে না।’’ তবে তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন যে, ‘‘নির্দল প্রার্থীদের জন্য কিছু আসনে আমাদের জয়ের ব্যবধান কমতে পারে।’’
অন্যদিকে বিরোধী দল সিপিএমের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি বলেন, ‘‘তৃণমূলের সন্ত্রাস ও বহিরাগতদের ভয়ভীতি প্রদর্শন সত্ত্বেও তমলুক শহরের বাসিন্দারা যে ভাবে ভোট দিতে এগিয়ে এসেছেন তাতে আমরা আশাবাদী। অন্তত ছ’টি আসনে জয় আসবে বলেই ধারণা। এ ছাড়াও বেশকিছু আসনে ভাল ফল হবে।’’ তাঁর দাবি সামগ্রিকভাবে গতবারের চেয়ে ভোট প্রাপ্তির হার বাড়বে বামফ্রন্টের।
অন্যদিকে বিজেপি-র জেলা সাধারণ সম্পাদক সুকুমার দাসও প্রায় একই কথা জানান। তাঁর দাবি, ‘‘আমাদের প্রার্থী, সমর্থকদের উপর তৃণমূলের আক্রমণ ও নানা হুমকি সত্ত্বেও ভোটাররা যে ভাবে ভোট দিতে এগিয়ে এসেছে তাতে পাঁচটি আসনে জেতার আশা করছি।’’ কংগ্রেস অন্তত তিনটি আসনে জেতার আশা করছে। দলের জেলা সভাপতি আনোয়ার আলি বলেন, ‘‘কংগ্রেস সমর্থিত নির্দল প্রার্থীদের ফলাফলও ভাল হবে।’’
আর এ বার নির্বাচনে তৃণমূলকে বেকায়দায় ফেলা নির্দল প্রার্থীরা তো জেতার বিষয়ে আশাবাদী বটেই। পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে খোদ পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে লড়াই করা একমাত্র নির্দল প্রার্থী অলক সাঁতরা বলেন, ‘‘এলাকার বাসিন্দারা যেভাবে আমাকে সমর্থন করেছে তাতে আমি জেতার বিষয়ে নিশ্চিত।’’ ৬ নম্বর ওয়ার্ডে উপ-পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে লড়াই করা নির্দল প্রার্থী অনিমেষ মিশ্রও মানুষের রায়ের উপরই ভরসা রাখছেন। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়াই করেছেন তমলুকের বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলর জয়া দাস নায়ক। তিনি বলেন, ‘‘মানুষের জন্য কাজ করেছি। তাই এ বারও সমর্থন পেয়েছি। সুতরাং জয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবার কোনও কারণ নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy