Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
পথে বেলাগাম টোটো

পরিবহণ মন্ত্রীর খাসতালুকেও নিষ্ক্রিয় প্রশাসন

স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, শাসক দলের সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত হওয়াতেই গোটা নন্দীগ্রাম-১ ব্লক জুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কয়েকশো টোটো।

নম্বরহীন টোটো। নিজস্ব চিত্র

নম্বরহীন টোটো। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
নন্দীগ্রাম শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৯ ০০:৩৭
Share: Save:

গ্রামীণ এলাকায় যোগাযোগের সবচেয়ে সহজ উপায় টোটো। কিন্তু সেই টোটো নিয়ন্ত্রণ করতে ‘বিধি’ কোথায়! টোটোর দাপটে নাজেহাল অবস্থা পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর নিজের বিধানসভা এলাকা-নন্দীগ্রামেও। গোটা মেদিনীপুর জেলায় টোটো নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন কিছুটা কঠোর পদক্ষেপ করলেও টোটোর রাশ পুরোপুরি লাগামহীন নন্দীগ্রামে।

স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, শাসক দলের সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত হওয়াতেই গোটা নন্দীগ্রাম-১ ব্লক জুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কয়েকশো টোটো। নন্দীগ্রাম থেকে কেন্দামারি ও নন্দীগ্রাম থেকে তেঁতুলতলা-সহ একাধিক রুটে নম্বরপ্লেট ছাড়াই শ’য়ে শ’য়ে টোটো চলছে। ওই সব টোটোর বৈধতাও খতিয়ে দেখা হয়নি বলে অভিযোগ।

জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ২০১৭ সালে একটি নির্দেশিকা জারি করেছিলেন তৎকালীন জেলাশাসক রশ্মি কমল। প্রতিটি ব্লক ও পুরসভাকে নিজেদের এলাকার টোটোর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

ঠিক হয়েছিল টোটো মালিকদের ব্লক প্রশাসনের কাছ থেকে অস্থায়ী রেজিস্ট্রেশন নম্বর নিতে হবে। বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত সমিতিকে বার্ষিক কর দিতে হবে। টোটোর রেজিস্ট্রেশন কর বাবদ যে অর্থ সংগ্রহ হবে, তা পঞ্চায়েত সমিতির তহবিল বৃদ্ধিতে কাজে লাগানো হবে বলে জেলাশাসক জানিয়েছিলেন। এরপর জেলার ২৪ টি ব্লক এবং ৫টি পুরসভা এলাকায় টোটোর রেজিস্ট্রেশন পর্ব চলে।

যদিও স্থানীয়দের অভিযোগ, নন্দীগ্রাম-১ ব্লকে এ ধরনের কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি। পরিবর্তে সমস্ত টোটোকে শাসক দলের ছাতার তলায় এনে তাদের যাত্রী পরিবহণের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে যাত্রী সুরক্ষা নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে খবর, গোটা নন্দীগ্রাম-১ ব্লক জুড়ে এক হাজারের বেশি টোটো রয়েছে। এরা মূলত শাসক দলের শ্রমিক সংগঠনভুক্ত। এ ব্যাপারে ব্লক তৃণমূল সভাপতি মেঘনাদ পালের দাবি, ‘‘শ’পাঁচেক টোটো আমাদের শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। তবে তাদের রেজিস্ট্রেশন নিয়ে ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের নির্দেশ পেলেই আমরা ওই সব টোটোর রেজিস্ট্রেশন করাব।’’

কিন্তু টোটোর রেজিস্ট্রেশন নিয়ে কেন দেরি? বিডিও সুব্রত মল্লিক বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত সমিতি টোটোর রেজিস্ট্রেশনের বিষয়টি দেখে।’’ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মুক্তিরানি মাইতি বলেন, ‘‘টোটোর রেজিস্ট্রেশন নিয়ে পঞ্চায়েত সমিতিতে আলোচনা হয়েছে। আগামী দিনে গোটা ব্লকে টোটোর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা হবে। তার আগে সব টোটোর রেজিস্ট্রেশন করা হবে।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রশাসনিক উদাসীনতায় খেজুরির রামচক, জনকা, বিদ্যাপীঠ মোড়, খেজুরি বাসস্ট্যান্ড সহ একাধিক এলাকায় টোটোর সংখ্যা অনেক বেড়ে গিয়েছে। রাস্তাঘাটে টোটোর দাপটে হাঁটাচলাই দায় হয়ে গিয়েছে। খেজুরি-২ পঞ্চায়েত সমিতি সূত্রে খবর, গত দু’বছরে আড়াইশো টোটোর রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছিল। কিন্তু তারপর পাঁচশোরও বেশি টোটো বেড়ে গিয়েছে বলেই প্রশাসনের একাংশ মেনে নিয়েছে। ওই সব টোটোর রেজিস্ট্রেশন নিয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অসীম কুমার মণ্ডল জানান, বর্তমানে টোটোর রেজিস্ট্রেশন নিয়ে জেলা প্রশাসনের অবস্থান স্পষ্ট নয়। তবে নম্বরপ্লেট বিহীন সমস্ত টোটোকে প্রাথমিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে। আগামী দিনে ব্লক প্রশাসনকে নিয়ে রেজিস্ট্রেশন না থাকা টোটোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Electric Rickshaw TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE