Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
তাল কাটল হাতির হানা

মিঠে নয়, মকরে মন ভার

গোয়ালতোড়ের হুমগড়ের হদহদির জঙ্গলে কয়েকদিন ধরেই ঘাঁটি গেড়েছে ১০-১১টি হাতি। তার মধ্যে দু’টি সদ্যজাতও রয়েছে। এখন আলু চাষের মরসুম। তাই আলু খেতে হাতির ঢোকা আটকাতে বন দফতরের কর্মী হুলাপার্টির সদস্য-সহ স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে পাহারা দিচ্ছেন।

 প্রস্তুতি: মকর সংক্রান্তির আগে চলছে ঢেঁকিতে চাল গুঁড়োর কাজ। মেদিনীপুর সদর ব্লকের বেলিয়ায় ছবিটি তুলেছেন সৌমেশ্বর মণ্ডল

প্রস্তুতি: মকর সংক্রান্তির আগে চলছে ঢেঁকিতে চাল গুঁড়োর কাজ। মেদিনীপুর সদর ব্লকের বেলিয়ায় ছবিটি তুলেছেন সৌমেশ্বর মণ্ডল

নিজস্ব  প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৪৩
Share: Save:

শীতের মাঝামাঝি জঙ্গলমহলের আদিবাসী-মূলবাসীদের প্রধান উৎসব হল মকর পরব। কিন্তু এ বার সেই উৎসবের তাল কাটছে নানা ভাবে। শনিবার সকালে মেদিনীপুর গ্রামীণের নেপুরার বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছিল দু’টি পূর্ণবয়স্ক হাতির। রবিবার রাত থেকে হাতির কয়েকটি দল বিভিন্ন লোকালয়ে ঢুকে তাণ্ডব শুরু করেছে।

গোয়ালতোড়ের হুমগড়ের হদহদির জঙ্গলে কয়েকদিন ধরেই ঘাঁটি গেড়েছে ১০-১১টি হাতি। তার মধ্যে দু’টি সদ্যজাতও রয়েছে। এখন আলু চাষের মরসুম। তাই আলু খেতে হাতির ঢোকা আটকাতে বন দফতরের কর্মী হুলাপার্টির সদস্য-সহ স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে পাহারা দিচ্ছেন। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। হাতির ওই দলটি রবিবার রাতে জঙ্গলের পাশে আসনাশুলি মৌজার আলু খেতে চলে আসে। সেখানে মা হাতি যখন দলের দুই সদ্যজাতকে খাওয়াচ্ছিল তখন বন কর্মীদের কয়েকজন তাদের সামনে চলে আসে। তারপরেই হাতির দলটি তাঁদের দিকে তেড়ে আসে। পালাতে গিয়ে গর্তে পড়ে যান বন দফতরের হুমগড় রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত অফিসার বাবলু মান্ডি। জমির আলে পড়ে জখম হন প্রদীপ মল্ল ও আব্দুল সাত্তার চৌধুরী। বন দফতর জানিয়েছে, হুমগড়ের হদহদির জঙ্গলে কয়েকদিন কাটিয়ে ওই হাতির দলটি এখন টাঙাশোলের জঙ্গলে ঘাঁটি গেড়েছে। গড়বেতার খড়িকাশুলির জঙ্গলে থাকা ১১-১২টি হাতি রবিবার রাতেই ডেরা বদলে বাঁকুড়া জেলার জঙ্গলে ঢুকে পড়েছে।

এ দিকে রবিবার সন্ধ্যাতেই চন্দ্রকোনার একাধিক গ্রামে দাপিয়ে বেরিয়েছে দলছুট দু’টি দাঁতাল। নষ্ট হয়েছে কয়েক বিঘা আলু ও আনাজের খেত। বন দফতর সূত্রে খবর, রবিবার গড়বেতার পানশিউলি জঙ্গল থেকে বেরিয়ে দুই দাঁতাল চন্দ্রকোনার ধামকুড়িয়া জঙ্গলে ঢুকে পড়েছিল। রাতের দিকে ধামকুড়িয়া, গোপীনাথপুর, রাজবাঁধ হয়ে একাধিক গ্রামে তাণ্ডব চালায় তারা। আলু গাছ ও শীতকালীন নানা আনাজও নষ্ট করে। মকর পরবের আগে ওই দুই দাঁতালের আতঙ্কে রয়েছেন চন্দ্রকোনার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা। কয়েকদিন ধরেই চন্দ্রকোনার বিভিন্ন গ্রামে ঢুকে ফসল নষ্ট করছে ওই দুই হাতি। ভাঙছে ঘর-বাড়ি। দোকানে শুঁড় ঢুকিয়ে গুড়ের হাঁড়িও সাবাড় করেছে তারা। স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ, বিষয়টি নিয়ে বন দফতরের হেলদোল নেই। যদিও বন দফতরের এক আধিকারিক বললেন, “হাতি গুলিকে নজরে রাখা হয়েছে। গতিবিধি দেখে স্থানীয় বাসিন্দাদের সতর্ক করা হয়েছে।”

গত কয়েকদিন ধরে ঝাড়গ্রামের চুবকা অঞ্চলের গ্রামগুলিতেও এই অবস্থা। গত কয়েক দিন ধরে মেদিনীপুরের দিক থেকে কংসাবতী পেরিয়ে হাতিরা ঝাড়গ্রামের চুবকা অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামে চলে আসছে। আনাজ ও আখ নষ্ট করে ফিরে যাচ্ছে মেদিনীপুর বন বিভাগের জঙ্গলে। রবিবার রাতেও ফের প্রায় ৪০টি হাতির দল পশ্চিম মেদিনীপুর সদর ব্লকের কনকাবতী ও লোহাটিকরি ঘাটের কাছে কংসাবতী পেরিয়ে আমদই গ্রামে ঢোকে। সেখানে আলু, কপি ও শীতকালীন আনাজের খেতে তাণ্ডব চালায়। পাকুড়িয়াপালের আলুচাষি গৌর ম্যেটা, অভয় তুং, পঞ্চমী দাস, আখ চাষি স‌নাতন ঘোড়া, টুপেন দাস, অশ্বিনী ম্যেটাদের আক্ষেপ, ‘‘মকর পরবের সময়ে আমাদের সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে। মহাজনের কাছে ধার করে চাষ করেছি। সেই ধার শোধ করব কী ভাবে!’’
মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে আগামী বৃহস্পতিবার থেকে রাংড়াকোলা গ্রামে শুরু হচ্ছে কালামদনের মেলা। শুক্রবার খালশিউলিতে শুরু হবে লালবাবাজি মেলা। দু’টি মেলাতেই প্রচুর জনসমাগম হয়। রাতের বেলা মেলা চত্বরে হাতি ঢুকে পড়লে কী হবে তা ভেবেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন মেলার আয়োজক ও গ্রামবাসীরা। মেলা চলাকালীন বন দফতরের পক্ষ থেকে এলাকায় পাহারা ও নজরদারির ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
ঝাড়গ্রামের ডিএফও বাসবরাজ হোলাইচ্চি বলেন, ‘‘ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এলাকায় বন দফতরের প্রশিক্ষিত হুলাপার্টি রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Elephant Rampage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE