Advertisement
১৮ মে ২০২৪
আতঙ্কে রাত জাগল রোগীরা

পাঁচিল ভেঙে হাসপাতালে হাতি

রাত তখন আটটা হবে। নার্সরা রোগীর শুশ্রূষায় ব্যস্ত। হঠাৎ হাসপাতালের বাইরে চিৎকার। মটমট আওয়াজ। প্রথমে ছোট ঘটনা বলে অনেকেই এড়িয়ে যান। শব্দ ক্রমশ বাড়তে থাকায় আতঙ্কিত নার্সরা হাসপাতালের দরজা বন্ধ করে দোতলায় উঠে যান।

হাতির তাণ্ডবে ভেঙেছে হাসপাতালের পাঁচিল। তছনছ কলা বাগানও (ইনসেটে)। — নিজস্ব চিত্র।

হাতির তাণ্ডবে ভেঙেছে হাসপাতালের পাঁচিল। তছনছ কলা বাগানও (ইনসেটে)। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৬ ০০:২০
Share: Save:

রাত তখন আটটা হবে। নার্সরা রোগীর শুশ্রূষায় ব্যস্ত। হঠাৎ হাসপাতালের বাইরে চিৎকার। মটমট আওয়াজ। প্রথমে ছোট ঘটনা বলে অনেকেই এড়িয়ে যান। শব্দ ক্রমশ বাড়তে থাকায় আতঙ্কিত নার্সরা হাসপাতালের দরজা বন্ধ করে দোতলায় উঠে যান। দেখেন, বৃহদাকার একটি প্রাণী ঘুরে বেড়াচ্ছে হাসপাতালেই! অন্ধকারে ভাল করে ঠাহর করা যাচ্ছিল না, প্রাণীটি আসলে কী। আরও কিছুটা সামনে আসতেই সকলের পিলে চমকানোর দশা। হাসপাতালে ঘুরে বেড়াচ্ছে হাতি!

জঙ্গল ছেড়ে ফসলের খেতে, লোকালয়ে হাতি প্রায়ই তাণ্ডব চালায়। এ বার মেদিনীপুর শহরের দোরগোড়ায় হাতি। সটান হাজির মেদিনীপুর শহর লাগোয়া একটি মিশনারি হাসপাতালে। সোমবার রাত আটটা থেকে ঘণ্টা তিনেক শহর লাগোয়া খয়েরুল্লাচক, গোলাপীচক এলাকায় হাতি তাণ্ডব চালায়। হাসপাতালের পাঁচিল ভেঙে ভিতরের কলা বাগান তছনছ করে। হাতির তাণ্ডবে দৌড়ে বেড়ালেন নার্সরা। শয্যায় শুয়ে আতঙ্কে রাতভর ঘুমোতে পারলেন না রোগী। রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলল তাণ্ডব।

জঙ্গল থেকে বেরিয়ে যে ভাবে হাতির দল মেদিনীপুর শহরের কাছে চলে আসছে, তাতে দুশ্চিন্তা বাড়ছে শহরবাসীরও। কারণ, হাতি বেরোলেই বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা হুলা জ্বালিয়ে, পটকা ফাটিয়ে, ইট পাটকেল ছুঁড়ে তাড়ানোর চেষ্টা করছেন। তাতে দিগভ্রান্ত হয়ে দলের দু’একটিও যদি যদি কোনও ভাবে শহরে ঢুকে পড়ে! শহরের অলিগলি থেকে তো দ্রুত হাতি বের করাও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। বন দফতর অবশ্য জানিয়েছে, সে ধরনের অঘটন যাতে না ঘটে সে জন্য বনকর্মীরা নজরদারি চালাচ্ছেন। মেদিনীপুর বন বিভাগের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহা বলেন, “হাতির দলটি তাণ্ডব চালিয়েই যাচ্ছে। মাঠে ধান থাকায় অভিযানও চালানো যাচ্ছে না।”

সোমবার বিকেলে মেদিনীপুর সদর ব্লকের মুড়াকাটার জঙ্গলে ছিল হাতির দলটি। অন্ধকার নামতেই খয়েরুল্লাচকের মাঠ পেরিয়ে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে এগোতে থাকে হাতির দল। মাঝে পড়ে সেন্ট জোসেফ হাসপাতাল। হঠাৎ হাসপাতালের বাইরে জনতার তারস্বরে চিৎকার। শোনা গেল কী একটা হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল। তারপরই মট মট আওয়াজ। আতঙ্কিত নার্সরা হাসপাতালের দরজা বন্ধ করে দোতলায় উঠে যান। দেখেন, বৃহদাকার একটি প্রাণী ঘুরে বেড়াচ্ছে হাসপাতালেই!

কর্তব্যরত নার্স প্রমা টুডু, রেবতী সিংহদের কথায়, “একদিকে মানুষের প্রবল চিৎকার, অন্যদিকে ভেতরে মটমট আওয়াজ। আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। প্রথমে ভেবেছিলাম কোথাও কোনও বড় অঘটন ঘটল বুঝি। পরে দেখি হাসপাতালের ভেতরেই ঢুকে পড়েছে হাতি। আরও ভয় পেয়ে যাই।” দুর্ঘটনায় ভাঙা পা নিয়ে হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে গোবিন্দ খটিক বলেন, “আতঙ্কে সারা রাত চোখের পাতা এক করতে পারিনি।” হাসপাতালের ডিরেক্টর ফাদার রেজিনাল্ড ফার্নান্ডেজ বলেন, “হাতি ঢুকলে ভয় তো করবেই। তবে বিশ্বাস ছিল, আমরা তো সেবা করছি, তাই হাতি কিছু করবে না। দু’জায়গায় পাঁচিল ভেঙে কিছু কলাগাছ নষ্ট করে পালিয়েছে।”

হাসপাতালে একটি হাতি ঢুকে গেলেও বাকিরা অবশ্য অন্যপথ দিয়ে তখন গোলাপীচকের কাছে পৌঁছে গিয়েছে। হাসপাতালে ঢোকা দাঁতালটিও পরে সেদিকেই যায়। ফুলপাহাড়ি, আমড়াতলা, গোলাপীচক এলাকায় শস্যহানিও করে। হাতির চিৎকারে আতঙ্কে বাড়ি থেকে বেরোতে পারেননি মহিলারা। শেফালি পণ্ডিত, রিঙ্কু পণ্ডিতদের কথায়, “ভয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে বসেছিলাম। হাতির চিৎকার শুনেই যে ভির্মি খাওয়ার মতো অবস্থা। মনে হচ্ছিল রাতেই বুঝি সব শেষ করে দেবে।” এলাকার যুবকেরা লাঠি, আলো নিয়ে গ্রাম পাহারা দিচ্ছেন। সঙ্গে রয়েছে হুলা, পটকা। হুলা জ্বালিয়ে, পটকা ফাটিয়েও হাতির দলকে সরাতে ব্যর্থ হয়ে বন দফতরে খবর দেওয়া হয়। বন দফতর এসে হাতির দলকে গোপগড়ের দিকে নিয়ে যায়। সেই রাতের মতো নিশ্চিন্ত হলেও আতঙ্ক কাটছে না। অভিযান চালিয়ে হাতির দলকে দ্রুত অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার দাবিতে সরব হয়েছেন এলাকার মানুষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Elephant Medinipur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE