Advertisement
E-Paper

নকল ফলকে ভরসা শাসকের

রাস্তার ধারে সাদা ফলকে নীলে লেখা বিবৃতি। একপলকে দেখলে মনে হতে পারে সরকারি ফলক।খটকা লাগবে, যখন চোখ যাবে ফলকের উপরে লেখা, ‘মা মাটি সরকারের উদ্যোগে’-এ।

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৬ ০২:২০
সদর ব্লকের একাধিক জায়গায় দেখা গিয়েছে এই ফলক। —সৌমেশ্বর মণ্ডল।

সদর ব্লকের একাধিক জায়গায় দেখা গিয়েছে এই ফলক। —সৌমেশ্বর মণ্ডল।

রাস্তার ধারে সাদা ফলকে নীলে লেখা বিবৃতি। একপলকে দেখলে মনে হতে পারে সরকারি ফলক।

খটকা লাগবে, যখন চোখ যাবে ফলকের উপরে লেখা, ‘মা মাটি সরকারের উদ্যোগে’-এ। অথচ তার নীচে লেখা প্রকল্পের নাম। যেমন, ‘পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদ প্ল্যানিং-এর বরাদ্দকৃত ঢালাই রাস্তা’। এখানেই শেষ নয়, ফলকের নীচে লেখা হয়েছে প্রকল্পের মেমো নম্বর এবং বিডিও শব্দটিও। নির্বাচনী বৈতরণী পেরোতে এমন নজির বিহীন অভিযোগ উঠল শাসক দলের বিরুদ্ধে।

যে এলাকায় এমন ফলক বসানো হয়েছে, সেই এলাকার বাসিন্দা স্বয়ং তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি দীনেন রায়। দীনেনবাবু এ বার এই এলাকা থেকে নির্বাচনে প্রার্থীও হয়েছেন। স্বভাবতই অস্বস্তিতে শাসক দল। বৃহস্পতিবার নকল ফলকের ছবি-সহ মেদিনীপুরের (সদর) বিডিও ঋত্বিক হাজরার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে সিপিএম।

অভিযোগ পেয়ে তো চক্ষু চড়কগাছ বিডিও-র। তিনি দ্রুত নোটিস জারি করেন। তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা খড়্গপুরের তৃণমূল প্রার্থী দীনেনবাবুর কাছেই সে নোটিস পাঠানো হয়েছে। বিডিও-র নির্দেশ, একদিনের মধ্যে ওই সব ফলক সরাতে হবে কিংবা লেখা মুছে দিতে হবে।

যে সব প্রকল্পের উল্লেখ রয়েছে ফলকগুলোয়, সেই সব প্রকল্প আদতে রূপায়িতই হয়নি। সবে নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণার আগে আগে মঞ্জুর হয়েছে। নির্বাচন মিটলে কাজ শুরু হওয়ার কথা।

অভিযোগ যে গুরুতর তা মানছেন মেদিনীপুরের (সদর) বিডিও। তিনি বলেন, “এমন ফলক বসানো অনুচিত। যে রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছিল, সেই দলের জেলা সভাপতির কাছে নোটিস পাঠানো হয়েছে।”

নির্বাচনী বৈতরণী পেরোতে তৃণমূলের এমন কাজকর্ম নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না সিপিএম। খড়্গপুরের সিপিএম প্রার্থী শাহজাহান আলি বলেন, “সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করাই তো ওদের কাজ। ভুল বুঝিয়ে ওরা সব গুলিয়ে দিতে চায়।”

কেন এমন ফলক? প্রশ্ন শুনে মেজাজ হারান তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেনবাবু। তাঁর কথায়, “কে কোথায় কি ফলক বসাবে তার দায়িত্ব কি দলকে নিতে হবে? এলাকার মানুষ হয়তো কিছু করেছেন! তাতে কি হয়েছে! আমি সবটা জানি না। বলতেও পারব না।” সঙ্গে তিনি বলেন, “কিছু প্রকল্প মঞ্জুর হয়েছে। তাতেও সিপিএমের রাগ! মানুষের ভাল তো ওরা চায় না।”

মেদিনীপুর সদর ব্লকের সুকান্তপল্লি ও তার আশপাশের এলাকা খড়্গপুর বিধানসভার অন্তর্গত। বৃহস্পতিবার সকালে এলাকার মানুষ দেখেন, রাস্তার পাশে একাধিক ফলক বসানো হয়েছে। সাদা রঙের উপর নীল দিয়ে লেখা হয়েছে। যে সব কাজের উল্লেখ রয়েছে সেই কাজগুলো এখনও হয়নি।

এলাকার মানুষের কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয় সিপিএম নেতা সোমনাথ চন্দ বিডিও- র কাছে লিখিত অভিযোগ জানান। তাঁর কথায়, “এ রকম ফলক হয় বলে জানা ছিল না। শাসক দলের প্রচার চালানো হচ্ছে বিডিও-র নাম দিয়ে। ছবি দেখে তো বিডিও অবাক।’’ সোমনাথবাবুর কটাক্ষ, ‘‘আসলে তৃণমূল মানুষকে বড্ড বোকা ভাবছে। না-হলে এ রকম কাজ কেউ করে?” উন্নয়নকে সামনে রেখেই যে তারা ভোটযুদ্ধ জয় করতে চায় তা ইতিমধ্যে স্পষ্ট করেছে তৃণমূল। শাসক দলের জেলা নেতারাও দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন, সরকারের সাফল্যের দিকগুলো আরও বেশি করে প্রচার করতে হবে। গোপন ক্যামেরায় তোলা ছবিতে ঘুষ-বিতর্কে নাম জড়িয়েছে তৃণমূলের প্রথম সারির একঝাঁক নেতা-মন্ত্রীর। চরম অস্বস্তিতে শাসক দলকে। বাম-কংগ্রেস বোঝাপড়া প্রায় চূড়ান্ত, এমনিতেই উদ্বেগে শাসক দলের একাংশ।

দলের এক সূত্রে খবর, এই অবস্থায় মানুষের কাছে উন্নয়নমূলক কাজকর্মের খতিয়ান পৌঁছতে দলেরই কয়েকজন কর্মী খড়্গপুর বিধানসভার কয়েকটি এলাকায় ওই ফলক বসান। কিন্তু, নকল ফলকের বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় আরও অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল। শাসক দলের এক নেতা মানছেন, “কাজটা বড্ড কাঁচা হয়ে গিয়েছে! একটু সতর্ক হওয়া উচিত ছিল!” অন্য এক নেতার অবশ্য সাফাই, “এতে দোষের কি আছে? সিপিএম ৩৪ বছরে বাংলার সর্বনাশ করেছে! আমরা এসে নতুন করে কাজ শুরু করি। সেই কাজগুলোর কথাই তো মানুষকে জানাচ্ছি।”

tmc Mednipur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy