Advertisement
E-Paper

শীতেও ডেঙ্গির থাবায় উদ্বেগ

শীত প়ড়েছে। তবে ডেঙ্গি হানা থামেনি রেলশহর খড়্গপুরে। দিন কয়েক আগে জ্বর, মাথায় যন্ত্রণার উপসর্গ নিয়ে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন শঙ্কর সরকার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৬ ০১:১৮

শীত প়ড়েছে। তবে ডেঙ্গি হানা থামেনি রেলশহর খড়্গপুরে।

দিন কয়েক আগে জ্বর, মাথায় যন্ত্রণার উপসর্গ নিয়ে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন শঙ্কর সরকার। বছর পঁয়ত্রিশের এই ঝালাই মিস্ত্রির বাড়ি শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রীকৃষ্ণপুরে। গত ১৬ নভেম্বর শঙ্করের রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে ডেঙ্গির জীবাণু পাওয়া যায়। হাসপাতালেই চিকিৎসা চলছে শঙ্করের। এই যুবকের কথায়, “শহরের বিভিন্ন এলাকায় কাজ করি। সর্বত্রই তো আবর্জনা। তাছাড়া ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাগবস্তিতে অবসরে সময় কাটাই। সেখানেও স্তূপাকার জঞ্জাল জমে থাকে। কোথায় যে ডেঙ্গির মশা কামড়ালো বুঝতে পারছি না।”

দিন সাতেক আগে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছিল বছর সতেরোর নারসেমা খাতুন। এই তরুণীর বাড়ি ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইন্দা পীরবাবা এলাকায়। নারসেমারও জ্বর, মাথা ব্যথার লক্ষণ ছিল। তার রক্তের রিপোর্টেও মিলেছে ডেঙ্গির জীবাণু। নারসেমাও বলছিল, “সারাদিন বাড়িতেই থাকি। তবে বাড়ির চারদিকে আবর্জনা ছড়িয়ে থাকে। নিকাশির হালও ভাল নয়। মনে হচ্ছে এ সবের জেরেই ডেঙ্গির মশা কামড়েছে।” হাসপাতাল সূত্রে খবর, শঙ্কর এবং নারসেমা দু’জনের রক্তেই ডেঙ্গির জীবাণু পাওয়া গিয়েছে এনএস-১ পরীক্ষায়। এ বার ম্যাক অ্যালাইজা পরীক্ষার জন্য রক্তের নমুনা পাঠানো হয়েছে।

এ দিন বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ খড়্গপুর হাসপাতালের শয্যায় মশারির বাইরেই দেখা গিয়েছে ডেঙ্গি আক্রান্ত শঙ্করকে। যদিও হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সব রোগীর জন্যই নির্দিষ্ট মশারি রয়েছে। তবে খাওয়ার সময় রোগীরা কেউ কেউ মশারি খুলে রাখেন।’’ সুপার আরও জানান, এই শীতের মরসুমে শঙ্কর এবং নারসেমাকে নিয়ে মোট তিন জন ডেঙ্গি আক্রান্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তার মধ্যে একজন সুস্থ হয়ে ফিরে গিয়েছেন।

খড়্গপুরের তাপমাত্রা এখন ১৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের আশপাশে ঘোরাফেরা করছে। এমন শীত-শীত আবহাওয়াতেও ডেঙ্গি আক্রান্তের হদিস মেলায় উদ্বিগ্ন জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা। মশার লার্ভা কী ভাবে বাড়ছে তা জানতে খোঁজ নেওয়া শুরু করেছেন তাঁরা। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “খড়্গপুরে ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়তে থাকায় আমরা উদ্বিগ্ন। কিছু ব্লকেও ডেঙ্গির সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। এই শীতে ডেঙ্গির মশা থাকার কথা নয়। মনে হচ্ছে জমা জল, আবর্জনা থেকে ডেঙ্গির মশার বংশবৃদ্ধি হচ্ছে।’’ জেলায় মশা বাহিত রোগের নোডাল অফিসার তথা উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধানেরও বক্তব্য, “এখন কেন ডেঙ্গি হচ্ছে তা নিয়ে আমরা উদ্বেগে রয়েছি। জেলা পর্যায়ে আমরা একটি অনুসন্ধান চালাচ্ছি। পরে অপারেশনাল রিসার্চের জন্য রাজ্যে জানাব। তবে দেখা যাচ্ছে জমা জল, আবর্জনায় ডেঙ্গির মশা বেড়ে উঠছে।’’

খড়্গপুরে আবর্জনার সমস্যা দীর্ঘ দিনের। শহরে কেন্দ্রীয়ভাবে আবর্জনা ফেলার জায়গার অভাবও রয়েছে। ফলে, ওয়ার্ডের আবর্জনা জমছে ওয়ার্ডেই। নর্দমায় আবর্জনা পড়ে রুদ্ধ হচ্ছে নিকাশি। আবর্জনা ও জমা জলে মশার বংশ বৃদ্ধি হচ্ছে। এ ব্যাপারে পুরসভা উদাসীন বলেই অভিযোগ। শঙ্কর ও নারসেমা দু’জনই জানালেন, ব্লিচিং ছড়ানো, মশা মারার ধোঁয়া নিয়মিত দেওয়া হয় না। আবর্জনা সাফাইও নিয়মিত হয় না।

সমস্যা সমাধানে খড়্গপুর পুরসভার সঙ্গে আলোচনায় বসে যৌথভাবে অভিযান চালানোর কথা ভাবছে স্বাস্থ্য দফতর। পরিস্থিতি এমন হলেও শহরে ডেঙ্গির কথা জানেনই না পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার। তাঁর বক্তব্য, “পুর-এলাকায় ডেঙ্গির বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি। নিশ্চয়ই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

Fear Dengue Khargpur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy