উচ্চপদস্থ কর্তাদের উপস্থিতিতে পুলিশের হোমগার্ড পদে যোগ দিলেন প্রাক্তন মাওবাদীরা। নিজস্ব চিত্র
পঞ্চায়েত ভোটের মুখে ১০২ জন প্রাক্তন মাওবাদী পুলিশের হোমগার্ড পদে যোগ দিলেন। সকলেই আগে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। প্রশিক্ষণ শেষে বৃহস্পতিবার মেদিনীপুর পুলিশ লাইনে এঁদের দীক্ষান্ত প্যারেড হয়। ছিলেন রাজ্য পুলিশের আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) রাজীব মিশ্র, পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া, ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার অমিত রাঠৌর প্রমুখ।
আইজি বলেন, “যাঁরা সমাজের মূলস্রোত থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন, মুখ্যমন্ত্রীর প্রেরণায় তাঁরা আবার সমাজের মূলস্রোতে ফিরে এসেছেন। সমাজের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব, পুলিশের দায়িত্ব পালন করবেন। আজ থেকে এঁরা হোমগার্ড বাহিনীতে সামিল হলেন।”
প্রাক্তন মাওবাদীদের মধ্যে ছিলেন সুনীল মাহাতো, মানসী বাস্কেরা। মানসী বলছিলেন, “আগে ভুল পথে পরিচালিত হয়েছি। অতীত ভুলে নতুন জীবন শুরু করতে চাই।” এ দিন হোমগার্ডে যোগ দিয়েছেন অসিত মাহাতো। প্রাক্তন মাওবাদী তথা জনগণের কমিটির এক সময়ের মুখপাত্র অসিতও আগে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। এ দিন যাঁরা পুলিশে যোগ দিলেন, তাঁদের অনেকের বিরুদ্ধেই খুন- ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ সহ বিভিন্ন নাশকতার মামলা ছিল। ওই ১০২ জনের মধ্যে ঝাড়গ্রামের ৮১ জন। পশ্চিম মেদিনীপুরের ২১ জন। ৯৫ জন পুরুষ এবং ৭ জন মহিলা। আইজি র আশা, এঁরা নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করবেন। তাঁর কথায়, “এর আগে এঁদের ৪২ দিনের প্রশিক্ষণ হয়েছে। ওঁদের পরিবর্তন নিজে দেখেছি।” বিভিন্ন মহল মনে করছে, পঞ্চায়েত ভোটের আগে প্রাক্তন মাওবাদীদের পুলিশে এনে জঙ্গলমহলকে বার্তাই দিতে চেয়েছে তৃণমূল সরকার। জঙ্গলমহলে মাওবাদী দমনে আগেই সাফল্য পেয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। শীর্ষ মাওবাদী নেতার কিষেণজির মৃত্যুর পর লালগড়, বেলপাহাড়ির মতো এলাকায় সন্ত্রাস ধীরে ধীরে কমে এসেছে। একে একে আত্মসমর্পণ করেছেন মাওবাদী নেতারা। রাজ্যে পালাবদলের পরে জঙ্গলমহলের জেলাগুলোয় প্রায় সাড়ে তিনশোজন মাওবাদী আত্মসমর্পণ করেন।
পুলিশ সূত্রে খবর, ‘পুনর্বাসন প্যাকেজে’ যা রয়েছে তার সবই পাচ্ছেন এই আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীরা। স্থায়ী আমানত, এককালীন অনুদান যেমন পেয়েছে, তেমন প্রতি মাসে আর্থিক সাহায্য পাচ্ছেন। রাজ্য পুলিশের দাবি, জঙ্গলমহলের জেলাগুলো এখন অনেক সুরক্ষিত। গত কয়েক মাসেও সেই সুরক্ষা আরও বেড়েছে। রাজ্য পুলিশের এক কর্তার কথায়, “যে দু’- একজন এখনও আত্মসমর্পণ করেননি তাঁদের কাছেও মূলস্রোতে ফিরে আসার আবেদন রাখছি।” এ দিন প্রাক্তন মাওবাদীদের সঙ্গে কথাও বলেন আইজি। জেনে নেন তাঁদের সুবিধে- অসুবিধের দিকগুলো। এ দিন যাঁরা হোমগার্ডে যোগ দিলেন, তাঁদের কি ভোটের কাজেও নেওয়া হবে? এ নিয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করেননি আইজি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy