গত চার মাসে স্কুলে এসেছে চারটি সরকারি নির্দেশিকা। একবার নির্দেশ মেনে পরিচালন সমিতির সভাপতি পরিবর্তন হয়েছিল। নতুন নির্দেশিকায় ফের সভাপতি পরিবর্তন হতে চলেছে। ফলে, সঙ্কটে পড়েছে মেদিনীপুর শহরের ঋষি রাজনারায়ণ বসু বালিকা বিদ্যালয়।
অলিগঞ্জ গার্লস নামে পরিচিত এই বিদ্যালয়ে মাস তিনেক আগে সরকারি নির্দেশ মেনে পরিচালন সমিতির সভাপতি হয়েছিলেন দীপঙ্কর ষন্নিগ্রাহী। দীপঙ্করবাবু মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলের (বালক) সহ-শিক্ষক। নতুন নির্দেশ অনুযায়ী এ বার স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি হতে চলেছেন সুব্রত সরকার। সুব্রতবাবু তৃণমূল প্রভাবিত রাজ্য সরকারি কর্মচারী সংগঠনের জেলা নেতা। আগে সুব্রতবাবুই এই পদে ছিলেন।
সরকারি নির্দেশে বারবার বদল নিয়ে কী বলছেন দু’জন?
দীপঙ্করবাবুর বক্তব্য, ‘‘নতুন করে আসা সরকারি নির্দেশিকার কথা জানি। তবে কেন এই পরিবর্তন তা বুঝতে পারছি না।’’ ঘনিষ্ঠমহলে তিনি মানছেন, এত কম সময়ের মধ্যে সভাপতি পদে পরিবর্তন হতে থাকলে স্কুলের উন্নয়নমূলক কাজকর্ম ব্যাহত হবেই। অন্য দিকে, সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘এক সময় ওই স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি ছিলাম। ফের দায়িত্ব পেলে স্কুলের উন্নয়নে সব রকম চেষ্টা করব।’’
বর্তমান রাজ্য সরকার অনুদানপুষ্ট স্কুলগুলোর জন্য আগের বাম আমলে তৈরি পরিচালন সমিতি গঠন বদলে দিয়েছে। ঠিক হয়েছে, সমিতির সভাপতি মনোনীত করবে রাজ্য সরকার। দু’জন করে শিক্ষানুরাগীও মনোনীত করবে রাজ্য সরকার। এ ক্ষেত্রে মনোনয়নের রাশ প্রধানত তৃণমূল বিধায়কদের হাতেই উঠে আসে। দেখা যায়, স্কুলগুলোর পরিচালন সমিতির নতুন কমিটি গঠনের জন্য রাজ্য সরকার সভাপতি এবং শিক্ষানুরাগীদের যে নাম পাঠিয়েছে, সেখানে তৃণমূলের লোকজনের সংখ্যাই বেশি। গত মার্চে অলিগঞ্জ গার্লসের পরিচালন সমিতির নতুন কমিটি গঠনের অনুমোদন দেয় শিক্ষা দফতর। সভাপতি হিসেবে দীপঙ্কর ষন্নিগ্রাহীর নাম আসে। সেই মতো দীপঙ্করবাবু দায়িত্ব নেন। মার্চের নির্দেশিকা বদলে যায় এপ্রিলে। এপ্রিলের নয়া নির্দেশিকায় জানানো হয়, কোনও শিক্ষক পরিচালন সমিতির সভাপতি পদে থাকতে পারবেন না। যথারীতি স্কুলে শুরু হয় টানাপড়েন। এত কম সময়ের মধ্যে কী ভাবে অন্য কাউকে মনোনীত করা সম্ভব, প্রশ্ন ওঠে। গত মে মাসে ফের একটি নির্দেশিকা আসে। এই নির্দেশিকায় জানানো হয়, যতদিন না নতুন কারও নাম পাঠানো হয় ততদিন সদ্য গঠিত কমিটিই কাজ চালিয়ে যাবে।
পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে গত জুনে স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি হিসেবে নাম পাঠানো হয় সুব্রত সরকারের। প্রথমে আসা নির্দেশিকায় সরকার মনোনীত সভাপতির ঠিকানা ছিল না। শুধু নামের উল্লেখ ছিল। পরে স্কুল-কর্তৃপক্ষ বিষয়টি শিক্ষা দফতরকে জানান। গত ৬ জুলাই ঠিকানা-সহ সরকারি মনোনীত সভাপতি হিসেবে সুব্রতবাবুর নাম পাঠানো হয়। শনিবার স্কুল পরিচালন সমিতির বৈঠক হয়। বৈঠকে সরকারি নির্দেশ কার্যকর করা নিয়ে আলোচনা হয়। স্কুলের এক সূত্রে খবর, শীঘ্রই সরকারি নির্দেশ কার্যকর হতে চলেছে। ফের স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিতে চলেছেন সুব্রতবাবু। চার মাসে চার নির্দেশিকা নিয়ে অবশ্য সরকারকে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিরোধীরা। সিপিএমের শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ-র জেলা সম্পাদক অশোক ঘোষ বলেন, ‘‘তুঘলকি সব কাজকর্ম চলছে। শাসক দল মাতব্বরি করার জন্যই স্কুল পরিচালন সমিতিগুলোয় নিজেদের লোক ঢোকাচ্ছে। শিক্ষাক্ষেত্রে দলবাজি চলছে। এটা তো রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ।’’