Advertisement
১৮ মে ২০২৪

‘ডিজিট্যাল’-এ হতাশ শিল্পশহর

স্থানীয় সূত্রে খবর, এ বছর জুন মাসে মানুষকে অনলাইন লেনদেনে উৎসাহী করে তুলতে শহরে আয়োজিত হয় ‘ক্যাশলেস উৎসব’।

ফাঁকা: ভর সন্ধেতেও ফাঁকা থাকে এটিএম। নিজস্ব চিত্র

ফাঁকা: ভর সন্ধেতেও ফাঁকা থাকে এটিএম। নিজস্ব চিত্র

আরিফ ইকবাল খান
হলদিয়া শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৭ ০২:১৫
Share: Save:

প্রথম প্রথম কিছু দিন কার্ড ব্যবহারে উৎসাহ দেখা গিয়েছিল। কিন্তু এখন আবার যে কে সেই। ‘নোটবন্দি’র এক বছর পরেও ক্যাশ টাকাতেই যাবতীয় লেনদেন চলছে শিল্পশহর হলদিয়ায়। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, অনলাইনে নানা প্রতারণার ঘটনার পর থেকেই কার্ডের ব্যাপারে উৎসাহ কমছে সাধারণ মানুষের।

স্থানীয় সূত্রে খবর, এ বছর জুন মাসে মানুষকে অনলাইন লেনদেনে উৎসাহী করে তুলতে শহরে আয়োজিত হয় ‘ক্যাশলেস উৎসব’। তবে তাতে যে সাড়া মেলেনি, বোঝা যায় ব্যাঙ্কগুলিতে ক্যাশ নেওয়ার লম্বা লাইন থেকেই। ভিড় বেশি থাকে শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার সময়ে। এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজার চয়ন সরকার জানান, ‘নোটবন্দি’র পর প্রথম দিকে কার্ডের ব্যবহার বাড়লেও এখন ক্যাশ ব্যবহারেই ঝোঁক বেশি। কার্ডে প্রতারণার কারণেই এই প্রবণতা বলে মনে করছেন চয়নবাবু।

সম্প্রতি এটিএম কার্ডের তথ্য নিয়ে একাধিক সাইবার জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে হলদিয়ায়। ব্রজলালচকে এমনই ঘটনায় সর্বস্ব খুইয়েছেন দুই ব্যক্তি। এক জন রিকশা চালক, অন্য জন শ্রমিক। মহিষাদলে ফাঁদে পড়েন এক জন অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি এবং এক ব্যবসায়ী। হলদিয়া শহরে কয়েক লক্ষ টাকা খোওয়া যায় এক বন্দর আধিকারিকের। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই পূর্ব মেদিনীপুরের সাইবার ক্রাইম শাখায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। কিন্তু টাকা উদ্ধার হয়নি। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সাইবার ক্রাইম বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, “সাইবার অপরাধ বেড়েছে। সচেতন হতে বলার পরেও মানুষ প্রতারিত হচ্ছেন। বদলে যাচ্ছে জালিয়াতির কায়দা-কানুন। ফলে সাধারণ মানুষ ভয় পাচ্ছেন।” পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, “এটিএম প্রতারকেরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভিন্ রাজ্যে ঘাঁটি গেড়ে বসে আছে। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। কিন্তু তথ্যর অভাবে কাজে অসুবিধা হচ্ছে।” এ ব্যাপারে লাগাতার প্রচার অভিযান চলবে বলেও জানান তিনি।

স্থানীয় শিক্ষক অসীম মাইতি, সুজয় মাইতিদের বক্তব্য, বড় প্রতিষ্ঠান ছাড়া কার্ড ব্যবহার করেন না তাঁরা। এক শিল্পসংস্থার ঠিকাদার জানান, শ্রমিকদের বেতন অনলাইনে দিলে সমস্যা হচ্ছে। কারণ তাঁরা কার্ড ব্যবহারে অভ্যস্ত নন। কলেজপড়ুয়া প্রিয়ঙ্কর মাইতির দাবি, “অনলাইনে যে ভাবে তথ্য দেওয়া থাকে, তাতে চিন্তা হয়। তাই সহজে কার্ড ব্যবহার করি না।”

তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী সুকোমল মাইতি বলেন, “কার্ড ব্যবহারে নিরাপত্তার ফাঁক রয়েছে বলে শোনা যায়। সে কারণেই চিন্তা হয়।” এক নামী সমবায়ের কর্মী জানান, ‘ইনসেনটিভ’ দেওয়ার পরেও মাত্র ১০ শতাংশ মানুষ কার্ড ব্যবহার করছেন। হলদিয়ায় চাকুরিজীবী অনিল দাস বাবা-মাকে অনলাইনে টাকা পাঠান না। হাতে করে টাকা পৌঁছে দিয়ে আসেন বাড়িতে।

পেরিয়ে গেল একটা বছর। তবুও শিল্পশহরের সাধারণ নাগরিকদের এই টুকরো ছবি থেকেই বোঝা যায় অনলাইনে অনীহার ছবিটা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Haldia Cashless project
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE