বৈধ টোটোর (ইনসেটে) সংখ্যা হাতে গোনা। মেদিনীপুরের পথে নম্বর প্লেটহীন এম অবৈধ টোটোরই ছড়াছড়ি। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
বেআইনি টোটোর বাড়বাড়ন্তে ক্ষুব্ধ খোদ হাইকোর্ট। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুরও একাধিক বার রাজ্যের পরিবহণ দফতরকে নির্দেশ দিয়েছেন, হয় টোটো চলাচল বন্ধ করতে অথবা সেগুলির নথিভুক্তকরণে সচেষ্ট হতে। কিন্তু তাতেও ছবিটা পাল্টাচ্ছে না। নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই মেদিনীপুরের শহর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে টোটো।
কয়েকমাস আগে শহরে অটো ও টোটো চালকদের বচসা-সংঘর্ষ হয়েছিল। তারপরে দু’-চারদিন বেআইনি অটো-টোটো ধরপাকড় শুরু হয়েছিল। অবৈধ টোটোতে একটু রাশও টানা হয়েছিল। কিন্তু তা বন্ধ হতেই শহর জুড়ে টোটোর দাপট। অভিযোগ, সব জেনেও প্রশাসন নির্বিকার।
এই শহরের রাস্তায় প্রথম টোটো নামতেই সরব হয়েছিলেন অটো চালকেরা। তারপর দু’পক্ষের সংঘর্ষে উত্তাল হয় শহর। অটোচালক, টোটো চালকদের মধ্যে মারামারি, গাড়ি ভাঙচুর, পথ অবরোধ— কিছু বাকি ছিল না অশান্তির সেই পর্বে। তারপরই প্রশাসন তড়িঘড়ি টোটোকে অনুমোদন দেওয়া শুরু করে। পরিবহণ দফতর এখনও পর্যন্ত জেলায় ৪৮৮টি টোটোকে অনুমোদন দিয়েছে। তার মধ্যে মেদিনীপুর শহরে ৩০৯টি, খড়্গপুরে ১৬৬টি, ঘাটালে ৪টি ও ঝাড়গ্রামে ৯টি। কিন্তু বাস্তব হল, মেদিনীপুর শহরেই বর্তমানে পাঁচশোরও বেশি অটো চলছে। অর্থাৎ অবৈধ অটোর সংখ্যা সদর শহরেই দু’শোর বেশি।
“শীঘ্রই বেআইনি টোটো বন্ধে অভিযান চালানো হবে। জেলায় কত টোটো রয়েছে সেই সংখ্যাটা
জানতে টোটো বিক্রেতাদের থেকে সব নথি চাওয়া হয়েছে।” —এস আব্বাস, জেলা পরিবহণ আধিকারিক, পশ্চিম মেদিনীপুর।
বেআইনি টোটোতে রাশ টানা হচ্ছে না কেন? পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পরিবহণ আধিকারিক এস আব্বাসের জবাব, ‘‘শীঘ্রই বেআইনি টোটো বন্ধে অভিযান চালানো হবে। তার আগে আমরা বিভিন্ন সংস্থার ডিলারদের সঙ্গে বৈঠক করতে চাই। পরিবহণ দফতরের ‘অফার লেটার’ না থাকলে কোনও সংস্থা টোটো বিক্রি করতে পারেন না। তা সত্ত্বেও কী ভাবে তা হচ্ছে দেখা হবে। গাফিলতি ধরা পড়লে পদক্ষেপও করা হবে।’’ হাইকোর্টের নির্দেশের প্রেক্ষিতে তিনি আরও বলেন, ‘‘টোটো সম্পর্কে রাজ্য সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আমাদের যা নির্দেশ দেবে, তা-ই কার্যকর করা হবে। জেলায় কত টোটো রয়েছে সেই সংখ্যাটা জানতে টোটো বিক্রেতাদের থেকে সব নথি চাওয়া হয়েছে।”
তবে প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃণমূলেরই একটি অংশের মদতে বেআইনি টোটোর রমরমা। তার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন কিছু ব্যবসায়ীও। যাঁরা সুকৌশলে নিজেদের তৈরি টোটোও বিক্রি করে দিচ্ছেন মুনাফার জন্য। অথচ, সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী সরকার অনুমোদিত সংস্থা থেকে না কেনা হলে টোটোকে রাস্তায় চলার অনুমতি দেবে না সরকার। সরকারি নির্দেশ এ-ও রয়েছে যে, টোটো চালকের নামেই পারমিট ও লাইসেন্স থাকবে। তারপরেও সম্পন্ন ব্যক্তিরা একাধিক টোটো কিনে ভাড়ায় খাটাচ্ছেন। শাসক দলের মদতেই এ সব হচ্ছে বলে অভিযোগ।
যদিও আইএনটিটিইউসি-র জেলা নেতা শশধর পলমলের দাবি, ‘‘সব টোটোকে পরিবহণ দফতর অনুমোদন না দেওয়ায় আমরা তাঁদের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত পর্যন্ত করিনি। উল্টে অবৈধ টোটোর বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছি।’’ আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত না হলেও যুব তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক স্নেহাশিস ভৌমিক অবশ্য একটা টোটো সংগঠন তৈরি করে ফেলেছেন। নাম দিয়েছেন ‘মেদিনীপুর শহর ই-রিকশা প্রোগ্রেসিভ ইউনিয়ন’। যার সভাপতি তিনি নিজে। স্নেহাশিসের যুক্তি, ‘‘গরিব মানুষ টোটো কিনেছেন। এই বিষয়টি যেমন দেখতে হবে, তেমনই শহরে যাতে যানজট না হয় সেটাও দেখতে হবে। তাই আমরা পরিবহণ দফতরকে স্মারকলিপি দিয়ে জানিয়েছি, যাতে পরিবহণ দফতরের অনুমোদন না থাকা অবৈধ টোটো বন্ধ করে দেওয়া হয়।’’ পরিবহণ দফতর মানছে, শহরে বেআইনি টোটো বাড়ছে।
মেদিনীপুর, খড়্গপুর, ঝাড়গ্রাম, ঘাটাল— জেলার এই চারটি মহকুমা শহর ছাড়াও টোটো চলা শুরু হয়েছে বিভিন্ন ব্লকেও। অনুমোদন ছাড়াই চলছে সেগুলি। ফলে, সরকারের রাজস্ব আদায়ে লোকসান হচ্ছে। তা ছাড়া, টোটোকে অনুমতি দেওয়ার সময় দ্রুত গতিতে ৪টি করে ওয়ার্ডে চলতে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই সুযোগে তারা বাস রাস্তাতেও চলছে বলে অভিযোগ। ফলে অটো চালক ও বাস মালিকরাও ক্ষুব্ধ। ফের নতুন করে অটো টোটো বিবাদের আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে শহরে। তেতে উঠছে, দু’পক্ষই। অনুমোদন না পাওয়া এক টোটো মালিক অবশ্য বলেন, ‘‘আমি আগে রিকশা চালাতাম। পুরসভার লাইসেন্সও রয়েছে। এখন কষ্ট করে টোটো কিনেছি। আগে তো আমাদেরই লাইসেন্স দেওয়া উচিত ছিল।’’
সব জেনেও প্রশাসন কেন এতদিন নীরব থেকেছে? পরিবহণ দফতরের এক আধিকারিকের জবাব, “নির্বাচনের জন্য সব জেনেও অনেক দিন কিছু করা যায়নি। এ বার প্রথমে টোটো বিক্রেতাদের নিয়ে বৈঠকে সরকারি নির্দেশিকার কথা জানিয়ে দেওয়া হবে। তারপর ধীরে ধীরে চালানো হবে অভিযান।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy