Advertisement
০৬ মে ২০২৪

নিয়োগে অনিয়ম নিয়ে তলব কলেজ কর্তৃপক্ষকে

কথা ছিল ১৫ জন, নিয়োগ করা হয়েছে ৩৮ জন— খড়্গপুর কলেজে অস্থায়ী কর্মী নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে নয়া মোড়। অভিযোগ, তৃণমূলের একাংশ নেতার চাপেই কলেজ কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ করতে বাধ্য হয়েছেন।

দেবমাল্য বাগচী
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:১০
Share: Save:

কথা ছিল ১৫ জন, নিয়োগ করা হয়েছে ৩৮ জন— খড়্গপুর কলেজে অস্থায়ী কর্মী নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে নয়া মোড়। অভিযোগ, তৃণমূলের একাংশ নেতার চাপেই কলেজ কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ করতে বাধ্য হয়েছেন। নিয়োগ ঘিরে অভিযোগ ওঠায় কলেজ কর্তৃপক্ষকেও উচ্চশিক্ষা দফতরে ডাকা হয়। বুধবার তাঁরকা কলকাতায় উচ্চশিক্ষা দফতরে গিয়ে দেখাও করেছেন বলে জানা গিয়েছে।

এ দিন কলেজের টিচার ইন-চার্জ কৌশিককুমার ঘোষ ও পরিচালন সমিতির এক সদস্য কলকাতায় গিয়েছিলেন বলে জানা গিয়েছে। কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি নির্মল ঘোষ বলেন, “নিয়োগের বিষয়ে অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় উচ্চশিক্ষা দফতর তলব করেছিল। আমি যেতে পারিনি। কলেজের টিচার ইন-চার্জ গিয়েছেন। আমাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ম মেনেই হয়েছে।”

কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৭ সালের আগে কলেজে ৩ জন অস্থায়ী কর্মী ছিলেন। ২০০৭ সালের পরে আরও ৭ জন কর্মী নিয়োগ করা হয়। পরে আরও ৫ জন কর্মী নিয়োগ হয়। কলেজে এতদিন অস্থায়ী কর্মীর সংখ্যা ছিল ১৫ জন। কলেজে কর্মী সঙ্কট থাকায় আরও ১৫ জন অস্থায়ী কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। অভিযোগ, স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের একাংশের চাপে ঠিক হয়, ১৫ নয় ৩৩ জন কর্মী নিয়োগ করা হবে। পরে সেটা আরও বেড়ে হয় ৩৮ জন। এই সব অস্থায়ী কর্মীর বেতন দেওয়া হয় কলেজের ফান্ড থেকে। ঠিক হয়েছে নতুন কর্মীরা মাসে ৮ হাজার টাকা বেতন পাবেন। তবে এই টাকা কে দেবে, তা জানে না কেউ।

কলেজের এক পুরনো অস্থায়ী কর্মীর অভিযোগ, “সরকারি নিয়ম অনুযায়ী আমরা বেতন পাই। কিন্তু নতুন করে ১৫ জনের বদলে যে ৩৮ জন অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ করা হল তাঁরা সরকারি নিয়ম অনুযায়ী নিযুক্ত হননি। তবে এই কর্মীরাই তিন মাস পরে সম কাজে সম বেতনের দাবি তুলবেন। তখন কলেজ কর্তৃপক্ষ ফি বাড়াতে বাধ্য হবেন।” আর এক অস্থায়ী কর্মীর অভিযোগ, “নতুন করে যে ৩৮ জনকে নিয়োগ করা হল তাঁদের বেত ন দেওয়ার মতো টাকা কলেজের আছে কি না সন্দেহ। এক মাস গেলেই সব বোঝা যাবে।”

খড়্গপুর কলেজে অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ ঘিরে অনিয়মের অভিযোগে সরব বিরোধীরা। বিরোধীদের অভিযোগ, তৃণমূলের শহর সভাপতি দেবাশিস চৌধুরীর কাগজেই একমাত্র নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। ফলে অনেকেই নিয়োগের বিষয়ে জানতে পারেননি। ইন্টারভিউ বোর্ডেও দেবাশিসবাবু ছাড়াও ছিলেন তৃণমূলের আর এক জেলা নেতা। গত শনিবার কর্মপ্রার্থীদের ইন্টারভিউ নেওয়া হয়। মোট ১৪৩ জন ইন্টারভিউ দেন। তাঁদের থেকে ৩৮ জনকে নিয়োগ করা হয়। যদিও বিরোধীদের অভিযোগ, অধিকাংশ পদেই বেছে বেছে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের নিয়োগ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি নির্মলবাবু বলেন, “পরিচালন সমিতিতে আলোচনা করেই কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। এটা ঠিক প্রথমে ৩৩ জনকে নেওয়ার কথা থাকলেও ৩৮ জনকে নিতে হয়েছে। কলেজে কর্মীর প্রয়োজন রয়েছে বুঝেই নিয়োগ হয়েছে।’’ নতুন কর্মীদের বেতনের এত টাকা দিতে সমস্যা হবে না তো? সদুত্তর এড়িয়ে তিনি বলেন, ‘‘কর্মী না থাকলে কাজ হবে কী ভাবে? পরে সমস্যা দেখা দিলে অস্থায়ী কর্মী ছাঁটাই করা হবে।” নির্মলবাবুর কথায় সিঁদুরে মেঘ দেখছেন কলেজের পুরনো অস্থায়ী কর্মীরা। এক অস্থায়ী কর্মীর কথায়, ‘‘একবার নিয়োগের পরে ছাঁটাই করলে খাব কী? এমন হলে আন্দোলন হবে।” একইভাবে, সিপিএমের খড়্গপুর শহর জোনাল সম্পাদক অনিতবরণ মণ্ডলও বলেন, “তৃণমূলের স্বজনপোষণের ঠেলায় কলেজে অধিক মাত্রায় কর্মী নিয়োগ হওয়ায় যে বিপুল খরচ হবে তা কী ভাবে সামলানো হবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছেই। এই কর্মী নিয়োগের জেরে পড়ুয়াদের কলেজে পড়ার খরচ যেমন বাড়বে তেমনই ভবিষ্যতে পুরনো অস্থায়ী কর্মীদের ছাঁটাই করার আশঙ্কাও করছি।”

যদিও প্রয়োজন অনুযায়ীই নতুন কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে বলে জানাচ্ছেন কলেজের টিচার ইন-চার্জ কৌশিককুমার ঘোষ। তিনি বলেন, “আমাদের ৪২ জন কর্মীর প্রয়োজন ছিল। তা সত্ত্বেও আমরা ৫০ জনের তালিকা তৈরি করে ৩৮ জনকে নিয়োগ করেছি। কর্মী ছাড়া কলেজ চালাতে সমস্যা হচ্ছিল।”

খড়্গপুর কলেজে নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ ঘিরে সাংবাদিক বৈঠক করে প্রতিবাদ জানায় কংগ্রেস। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেসের শহর সভাপতি অমল দাস, সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ ইসাক প্রমুখ। কংগ্রেসের শহর সভাপতি অমলবাবু বলেন, “এ ভাবে কলেজে নিয়োগ বেআইনি। এই অনিয়মের বিরুদ্ধে আমরা পাড়ায় পাড়ায় সই সংগ্রহ করব। তার পরে উচ্চশিক্ষা দফতরে উপযুক্ত তদন্তের দাবি জানাব। আমরা চাই এর পিছনে যে তৃণমূলের নেতারা যুক্ত তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Higher Education Illegal recruitments
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE