প্রত্যন্ত গ্রামের অনেক স্কুলেই বিজ্ঞান বিভাগ নেই। কোথাও আবার অনুমোদন থাকা সত্ত্বেও পরিকাঠামোর অভাবে বিজ্ঞান বিভাগ চালু হয়নি। আবার স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগ থাকলেও গ্রামাঞ্চলে উচ্চ মাধ্যমিকস্তরে উপযুক্ত গৃহশিক্ষকও পাওয়া যায় না। দূরের স্কুলে বিজ্ঞান পড়তে যাওয়ার মতো আর্থিক স্বচ্ছলতাও নেই অনেকের। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকে জঙ্গলমহলের কলা বিভাগের পড়ুয়ারাও উল্লেখযোগ্য ফল করে নজর কেড়েছে। কলা বিভাগে পড়েও যে ভাল ফল করা যায় সেটাই দেখিয়ে দিয়েছে তারা।
ঝাড়গ্রাম শহর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে রয়েছে সেবায়তন বালিকা বিদ্যালয়। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মেয়েরা এই স্কুলে পড়তে আসে। ২০১৩-১৪ সালে এই স্কুলে কেবলমাত্র কলা বিভাগে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি চালু হয়। গত বছর প্রথমবার এই স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল পড়ুয়ারা। গত বার সেরা ছাত্রীটি পেয়েছিল ৮৩ শতাংশ নম্বর। এবার উচ্চ মাধ্যমিকে স্কুলের মধ্যে ৮৬ শতাংশেরও বেশি নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে অপর্ণা মাহাতো। প্রাপ্ত নম্বর ৪৩১। অপর্ণার বাবা রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। এই স্কুলের আর এক কৃতী ছাত্রী দিনমজুর পরিবারের মেয়ে অর্চনা মুদি পেয়েছে ৪৩০ নম্বর। কোনও গৃহশিক্ষকের সাহায্য ছাড়াই হতদরিদ্র পরিবারের দুই কিশোরী নজর কাড়া ফল করেছে।
কলা বিভাগে নম্বর ওঠে না, কলা বিভাগের বিষয় নিয়ে ভবিষ্যতে পড়াশোনার সুযোগ কম, এমন মিথ ভাঙছে কি তাহলে? সেবায়তন বালিকা বিদ্যালয়ের ভূগোলের সহ-শিক্ষিকা সেবন্তী দাশগুপ্ত জানাচ্ছেন, এখন উচ্চ মাধ্যমিকের সিলেবাসটা কার্যত প্রোজেক্ট বেস লার্নিং। ভূগোল ও পুষ্টিবিজ্ঞানের মতো বিষয়গুলিতে ৩০ নম্বর করে প্র্যাকটিক্যাল রয়েছে। বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, দর্শনশাস্ত্র-সহ কলা বিভাগের অন্যান্য বিষয়গুলিতে ২০ নম্বরের প্রোজেক্ট রয়েছে। এ ছাড়া লিখিত পরীক্ষায় অনেক বেশি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন থাকছে। ফলে, সাজেশানের বদলে পুরো পাঠ্যবই ভাল করে যারা পড়ছে তারা ভাল ফল করছে।