Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Illegal Toll Collection

বাঁশের সাঁকোয় বাড়তি ‘টোল’, অভিযোগ

আগে পশ্চিম মেদি‌নীপুর জেলা পরিষদ থেকে আমদই ঘাটের লিজ দেওয়া হতো। বছর দু’য়েক হল ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদ টেন্ডার ডেকে ওই ঘাটের লিজ দিচ্ছে।

ঝাড়গ্রামের কংসাবতীর আমদই ঘাটে ফেয়ার ওয়েদার সাঁকো।

ঝাড়গ্রামের কংসাবতীর আমদই ঘাটে ফেয়ার ওয়েদার সাঁকো। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
 ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:০২
Share: Save:

কংসাবতীর উপর বাঁশের সাঁকোটিই দুই জেলার প্রান্তবাসীদের ‘লাইফ লাইন’। সেই সাঁকো পেরোতে গেলে চড়া হারে দিতে হচ্ছে ‘টোল’।

ঝাড়গ্রাম ব্লকের চুবকা পঞ্চায়েতের আমদই ঘাটটি ৫০ লক্ষ টাকায় এক বছরের জন্য ঠিকাদারকে লিজ দিয়েছে ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদ। আমদই ঘাটের অপর প্রান্তে রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের ক‌নকাবতী ঘাট। দুই জেলার সংযোগকারী বাঁশের সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন যাতাযাত করেন কয়েক হাজার বাসিন্দা। অভিযোগ, বরাতপ্রাপ্ত ঠিকাদারের লোকজন চড়া হারে ‘টোল’ আদায় করছেন। টাকা নেওয়া হলেও কুপন দেওয়া হচ্ছে না। চুবকা পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ।

ঝাড়গ্রাম ব্লকের চুবকা, সর্ডিহা ও মানিকপাড়া পঞ্চায়েত এলাকার পাশাপাশি, লাগোয়া খড়্গপুর গ্রামীণের অর্জুনি পঞ্চায়েতের বাসিন্দারা আমদই ঘাটের সাঁকো পেরিয়ে সহজে মেদিনীপুর শহরে যাতায়াত করেন। চুবকা অঞ্চল থেকে ঝাড়গ্রাম জেলা শহরের দূরত্ব ৩০ কিমি। তবে চুবকা এলাকা থেকে আমদই ঘাটের সাঁকো পেরিয়ে মেদিনীপুর শহরের দূরত্ব ১০ থেকে ১২ কিমি। ফলে এলাকার লোকজন সদর মেদিনীপুর শহরের উপর বেশি নির্ভরশীল।

আগে পশ্চিম মেদি‌নীপুর জেলা পরিষদ থেকে আমদই ঘাটের লিজ দেওয়া হতো। বছর দু’য়েক হল ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদ টেন্ডার ডেকে ওই ঘাটের লিজ দিচ্ছে। চলতি বছরের মাঝামাঝি ঘাটের লিজ দেওয়ার জন্য ই-টেন্ডার ডেকেছিল ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদ। পাঁচটি ঠিকাদার গোষ্ঠী দরপত্র জমা দিয়েছিল। সর্বোচ্চ দর প্রদানকারী গোষ্ঠী ৫০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে গত ১৭ জুলাই ঘাটের লিজ পাওয়ার পর বাঁশের সাঁকো তৈরি করেছে। নিয়ম হল, যে ঠিকাদার লিজ পান, তিনি বাঁশের ফেয়ার ওয়েদার সাঁকো তৈরি করেন। যাতায়াতকারীদের থেকে ‘টোল’ আদায় করেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার বা ঠিকাদার গোষ্ঠী। বর্ষায় সাঁকো ভেঙে গেলে তখন নৌকা পারাপারের দায়িত্বও তাঁদের। যে দর দিয়ে লিজ নেওয়া হয় তা উঠে যাওয়ার পর বাকিটা ঠিকাদারের লাভ।

আমদই ঘাটে গিয়ে দেখা গেল, নদীর পাড়ে ছাউনিতে ঠিকাদারের লোকজন টোল আদায় করছেন। ‘পারাপারের মূল্যে’র ঝোলানো তালিকা অনুযায়ী একজন একবার হেঁটে গেলে দিতে হবে পাঁচ টাকা। বাইক নিয়ে গেলে ১০ টাকা। মোটরবাইকে গেলে ১৫ টাকা। একই দিনে যাওয়া আসা করলে তখন পথচারীর থেকে নেওয়া হয় ৮ টাকা, সাইকেল ১৫ টাকা ও বাইকে ২৫ টাকা। ছোটগাড়ির যাতায়াতের দর তালিকায় নেই। তবে একটি গাড়িকে ৬০ টাকা দিয়ে সাঁকো পেরিয়ে মেদিনীপুরের দিকে যেতে দেখা গেল। এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ, কোনও কুপন না থাকায় অনেক ক্ষেত্রেই দু’বার পুরো টোল আদায় করা হয়।

টোল আদায়কারী আমদই গ্রামের বিমল মাজি, রাংড়াকোলা গ্রামের মানু খাঁড়া, চন্দ্রশেখর পাল জানালেন, তাঁদের মতো এলাকার বিভিন্ন গ্রামের ২৭ জন মিলে মূল ঠিকাদার অনুপ ঘোড়াইয়ের নামে ঘাটের লিজ নিয়েছেন। মানু, চন্দ্রশেখরদের দাবি, ঘাটের রাস্তা মেরামত, বিদ্যুতের ব্যবস্থা, নৌকা ও মাঝি প্রস্তুত রাখা, সাঁকো তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বহন করতে হচ্ছে। কুপন ছাপানো হলে বাড়তি খরচ। তবে কে কতবার যাচ্ছেন হিসেব লিখে রাখা হয়। চন্দ্রশেখরের কথায়, ‘‘৫০ লক্ষ টাকা দিয়ে লিজ নিয়েছি লাভ করার জন্য। জেলা পরিষদের অনুমতি নিয়ে টোলের হার নির্ধারণ করা হয়েছে।’’

যদিও জেলা পরিষদের বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ বিরবাহা সরেন টুডু দাবি করছেন, ‘‘এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই।’’ জেলা পরিষদের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, পারাপারের মূল্য নিধারণ করে দেওয়া হয়নি। চুবকা পঞ্চায়েতের প্রধান শকুন্তলা সিং বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। জেলা পরিষদের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jhargram
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE