Advertisement
০৮ মে ২০২৪
বড় নোটে বড় চোট, ভোগান্তির হপ্তা পার

কয়েনেই কেনাকাটা সোনার

ডিসেম্বরে ছেলের বিয়ে। খড়্গপুরের ইন্দার বাসিন্দা লাবণী চক্রবর্তী বৌমার গয়না কিনবেন বলে ৮ নভেম্বরের মধ্যে তিন দফায় ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলেছিলেন। সবই পাঁচশো-হাজারের নোট। ৮ নভেম্বর রাতেই নরেন্দ্র মোদীর ঘোষণায় সেই সব নোট বাতিল হয়ে গিয়েছে।

খুচরোই ভরসা। খড়্গপুরের গোলবাজারে।-রামপ্রসাদ সাউ।

খুচরোই ভরসা। খড়্গপুরের গোলবাজারে।-রামপ্রসাদ সাউ।

দেবমাল্য বাগচী
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৬ ০০:২৬
Share: Save:

ডিসেম্বরে ছেলের বিয়ে। খড়্গপুরের ইন্দার বাসিন্দা লাবণী চক্রবর্তী বৌমার গয়না কিনবেন বলে ৮ নভেম্বরের মধ্যে তিন দফায় ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলেছিলেন। সবই পাঁচশো-হাজারের নোট। ৮ নভেম্বর রাতেই নরেন্দ্র মোদীর ঘোষণায় সেই সব নোট বাতিল হয়ে গিয়েছে। পরদিন থেকে একের পর এক সোনার দোকানে ছুটেছেন লাবণীদেবী। কিন্তু কেউই ওই টাকা নেয়নি। লাবণীদেবী বলছেন, “বাড়িতে এত টাকা রাখতে ভয় লাগছে। আর ব্যাঙ্কে এত লাইন যে টাকা জমা দেওয়া যাচ্ছে না। কী ভাবে কী হবে জানি না।”

নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের পরে সপ্তাহ পার হল মঙ্গলবার। সব্জি, মাছ, মুদি দোকানের পাশাপাশি নোট-চোটে কাহিল সোনার বাজারও। সামনেই বিয়ের মরসুম। অথচ খড়্গপুর শহরে সোনার গয়নার দোকানগুলি কার্যত ফাঁকা। গোলবাজার থেকে ইন্দা, ছোট-বড় সব দোকানেই এক ছবি। খদ্দের এলেও গয়না দেখে চলে যাচ্ছেন। বিক্রি হচ্ছে নামমাত্র। ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডের কেনার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু ক্রেতাদের অনেকেই তাতে অভ্যস্ত নন। আর কিছু সোনার দোকান চেক নিলেও সমস্যা হচ্ছে। কারণ, সোনার দোকানের মালিক চেক ভাঙিয়ে টাকা না পাওয়া পর্যন্ত ক্রেতা গয়না হাতে পাচ্ছে না। সব মিলিয়ে সোনার বাজারে ধস। অবস্থা এমন যে কী ভাবে কর্মীদের বেতন দেবেন, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন সোনার দোকানিরা।

খড়্গপুর গোলবাজারের ‘গোল্ড মার্কেট’ শহরবাসীর কাছে সোনাবাজার বলে পরিচিত। এখানকার প্রায় সব দোকানিই জানাচ্ছেন, ৭০ শতাংশের বেশি ব্যবসা মার খেয়েছে। কোথাও আবার খুচরো পয়সা দিয়ে চলছে কেনাকাটা। এ দিন খুচরো পয়সা নিয়ে সোনার দোকানে এসেছিলেন সোনি কুমারী, সীমা কুমারীরা। তাঁরা বলছিলেন, “বাড়িতে একটা টাকাও নেই। ঘটে বহুদিন ধরে দশ টাকার কয়েন জমিয়েছিলাম। প্রায় তিন হাজার টাকা হয়েছিল। ওই টাকা জমা রাখলাম। পরে বাকি টাকা এনে গয়না কিনে নিয়ে যাব।”

খড়্গপুরের একটি সোনার গয়নার বিপনির মালিক বিক্রম রাও বলছিলেন, “গত ৯ নভেম্বর থেকে ব্যবসায় হাঁড়ির হাল। কার্ড ও চেক নিচ্ছি। কিন্তু লোক আসছে না। কী ভাবে দোকানের খরচ সামলে কর্মচারীদের বেতন দেব সেটাই ভাবনা।” সোনাবাজারের এক একটি সোনার গয়নার শো-রুমের মালিক নরেন গুপ্তেরও বক্তব্য, “বিয়ের মরসুমেও দোকান ফাঁকা। চোখে দেখা যাচ্ছে না।” এই শহরে খোদ বিজেপির এক কর্মী আবার সোনা দোকানি। গোলবাজারের সেই ব্যবসায়ী শৈলেশ শুক্লেরও বক্তব্য, “মানুষের সমস্যা হচ্ছে। আর আমাদের লোকসানের বহর বাড়ছে। কার্ডে কেনাকাটা করতে মানুষ ভয় পাচ্ছে। আগে দিনে ৪ লক্ষ টাকার বিক্রি হত। এখন দিনে এক টাকার বিক্রিও হচ্ছে না।” তবে বাজারে নতুন পাঁচশো টাকার নোট এলেই সমস্যা কেটে যাবে বলে আশা রাখছেন ব্যবসায়ীরা।

তবে যে সব বাড়িতে বিয়ে, সোনা-সঙ্কট রীতিমতো ভোগাচ্ছে। অনেকেই অর্ডার দেওয়া গয়না টাকার অভাবে নিয়ে যেতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে কেউ কেউ আবার যে পরিমাণ গয়না কিনবেন ঠিক করেছিলেন, তার থেকে কম কিনছেন। কলকাতার একটি স্বর্ণ বিপণির ইন্দার শাখা এ দিন ফাঁকা ছিস। দোকানের প্রধান সন্তোষ শেঠ ও ম্যানেজার সুজয় নাথ বললেন, “আমরা কার্ডে টাকা নিচ্ছি। কিন্তু অধিকাংশ ক্রেতা চাইছেন পাঁচশো-হাজারের নোট দিতে। তা নিতে না পারায় গত ৯ নভেম্বর থেকে ব্যবসা ৯০ শতাংশ কমে গিয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Money Gold Currency
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE