ঘাটাল আদালতে ধৃতেরা। নিজস্ব চিত্র।
ছক কষা হয়েছিল ‘ফিল্মি’ কায়দায়। পুলিশ-টুলিশ নয়। একেবারে সিআইডি সেজে মামার ছেলেকে অপরহরণ করে টাকা হাতিয়ে নেওয়াই ছিল উদ্দেশ্য। কিন্তু চিত্রনাট্য তত জোরালো ছিল না। তাই শেষ পর্যন্ত অপহৃতকে ফেলে রেখেই চম্পট দিল দুষ্কৃতীরা। যদিও গ্রেফতার হয়েছে ওই দলের তিনজন।
বুধবার ঘাটাল থানার শিমুলিয়া সাক্ষী রইল এমনই এক ঘটনার। পুলিশ সূত্রের খবর, স্থানীয় বাসিন্দা স্বদেশ মণ্ডল সোনার ব্যবসায়ী। মুম্বইতে তাঁর একটি গয়নার দোকানও রয়েছে। সেখানে স্বদেশবাবুর তিন ছেলে প্রসেনজিৎ, সুরজিৎ ও বাপন মণ্ডল থাকেন। ওই দোকানেই কাজ করতেন প্রসেনজিতের পিসতুতো দাদা বিশ্বজিৎ মাইতি।
জানা গিয়েছে, সম্প্রতি মুম্বইয়ের দোকান থেকে সোনা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ তুলে বিশ্বজিৎকে কাজ থেকে সরিয়ে দেন প্রসেনজিৎ। স্বদেশবাবুর অভিযোগ তারপর থেকেই ভাগ্নের সঙ্গে মনোমালিন্যের শুরু। সেই ঘটনার প্রতিশোধ তুলতেই মামাতো ভাইকে অপরহরণ করে টাকা, সোনা হাতিয়ে নেওয়ার ছক কষেন বিশ্বজিৎ। ভোটের জন্য সম্প্রতি মুম্বই থেকে বাড়ি ফিরেছিলেন প্রসেনজিৎ। সে সব খবর নিয়ে গত বুধবার রাতে মামার বাড়িতে হানা দেয় বিশ্বজিৎ ও তাঁর ভাই সঞ্জিৎ। তবে নিজেরা নয়। সামনে ছিল আবদুল হাইত নামে এক সোনা পাচারকারী এবং তার দলবল। তারাই নিজেদের সিআইডির অফিসার পরিচয় দিয়ে মণ্ডল বাড়িতে ঢোকে।
বলে, দিল্লিতে একটি মামলায় প্রসেনজিতের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। অভিযোগ, তারপর প্রসেনজিৎকে বাড়ি থেকে জোর করে গা়ড়িতে তুলে নেয়। চিৎকার করলে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়। তবে বিষয়টি আঁচ করতে বেশিক্ষণ লাগেনি স্বদেশবাবুদের। ‘সিআইডি-র গাড়ি’তে দুই আত্মীয়কেও দেখে ফেলেন তাঁরা।
থানায় অভিযোগ জানানোর আগেই মুক্তিপণ চেয়ে ফোন আসে বাড়িতে। প্রসেনজিৎকে নিয়ে ঘাটাল ছাড়ার আগেই অপহরণকারীরা পাঁচ কিলো সোনা এবং দেড় লক্ষ টাকা নিয়ে নির্দিষ্ট একটি জায়গায় আসতে বলে পরিবারের লোকজনকে। খবর দেওয়া হয় পুলিশে। সেই অনুযায়ী স্বদেশবাবুদের নিয়ে পুলিশ নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছনোর আগেই বেপাত্তা হয়ে যায় দুষ্কৃতীরা।
ইতিমধ্যে ঘাটাল থানার পুলিশ দাসপুরের সুরথপুর থেকে গ্রেফতার করে সঞ্জিৎকে। তাঁকে জেরা করেই বারুইপুরের ঠিকানা পাওয়া যায়। বৃহস্পতিবার রাতে স্বদেশ মণ্ডল ও ধৃত সঞ্জিৎ মাইতিকে নিয়ে বারুইপুরে যায়। সেখানে বলবলিয়া গ্রাম থেকেই পাকড়াও করা হয় দুই ‘সিআইডি’ অফিসার শালম হালদার এবং রাজু সর্দারকে। তাদের জেরা করে ওই এলাকা থেকেই প্রসেনজিৎকে উদ্ধারও করে পুলিশ। কিন্তু মূল অভিযুক্ত বিশ্বজিৎ ও আবদুল হাইত ফেরার।
ধৃতদের জেরা করে প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে, মাস তিনেক আগেই বিশ্বজিৎ বারুইপুরে আবদুল হাইতের ওই ডেরায় যাতায়াত শুরু করে। সোনা বিক্রি করতে গিয়েই তার সঙ্গে আলাপ হয় নোডা ওরফে আবদুল হাইতের। বারুইপুর এলাকায় আবদুল অটো চালালেও তার মূল ব্যবসা বেআইনি ভাবে সোনা কেনাবেচা। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে দীর্ঘ এক দশকের বেশি সময় ধরে আবদুল হাইত এই অবৈধ কারবারের সঙ্গে যুক্ত। এলাকারই জনা দশেক যুবকও যুক্ত রয়েছে তার সঙ্গে।
ঘাটাল থানার ওসি চিত্ত পাল বলেন, “আবদুলের সঙ্গে আলাপের পরই অপহরণ ছকের কথা জানায় বিশ্বজিৎ। মামাতো ভাইকে অপহরণ করলে অন্তত পক্ষে কিলো পাঁচেক সোনা রোজগার হবে— এও জানায়।’’ তারপরেই ‘সিআইডি’-র ছদ্মবেশ।
শনিবার ধৃতদের ঘাটাল আদালতে তোলা হলে বিচারক সাত দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন। জেলা পুলিশ সুপার ভাদনা বরুণ চন্দ্রশেখর বলেন, “কলকাতার বারুইপুর থেকে দু’জনকে পাকড়াও করা হয়েছে। দাসপুর থেকে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের জেরা করে বাকি অভিযুক্তদের ধরতে শুরু হয়েছে চিরুনি তল্লাশি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy