Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
আন্দোলন: জিগিরজিতা গব্‌চন

নাছোড় ধর্নায় এ বার বসছে কুড়মি সমাজ

এমনিতেই জঙ্গলমহলে আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায়ের বিভিন্ন দাবি এবং আন্দোলনের হুঁশিয়ারিতে চাপে রয়েছে প্রশাসন। সেই সঙ্গে কুড়মিরাও আন্দোলনের ডাক দেওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েছে শাসক শিবির।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:৪৮
Share: Save:

‘ডহর ছেঁকা’র পর ‘জিগিড়জিতা গব্‌চন’!

কুড়মিদের আদিবাসী তালিকাভুক্ত করা এবং কুড়মালি ভাষা ও সারনা ধর্মের স্বীকৃতির দাবিতে এ বার জঙ্গলমহল জুড়ে প্রশাসনের দরজায় নাছোড় ধর্নায় বসতে চলেছে ‘আদিবাসী কুড়মি সমাজ’। সেই আন্দোলনেরই নাম ‘জিগিড়জিতা গব্‌চন’ অর্থাৎ সংগ্রামে জয়লাভের জন্য অবস্থান। তাঁদের সংগঠন সূত্রে জানানো হয়েছে, আগামী ১৭ ডিসেম্বর ঝাড়গ্রামে এক সম্মেলনে আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপরেখা স্থির করা হবে।

এমনিতেই জঙ্গলমহলে আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায়ের বিভিন্ন দাবি এবং আন্দোলনের হুঁশিয়ারিতে চাপে রয়েছে প্রশাসন। সেই সঙ্গে কুড়মিরাও আন্দোলনের ডাক দেওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েছে শাসক শিবির।

জানা গিয়েছে, নতুন বছরের গোড়ায় ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার ব্লক, মহকুমা ও জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের দরজা আটকে নাছোড় ধর্নায় বসবেন ‘কুড়মি সেনা’রা। এ দিকে, মঙ্গলবার পুরুলিয়ার কোটশিলার জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, কুড়মিদের আদিবাসী তালিকাভুক্ত করার জন্য সুপারিশ করে কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছে রাজ্য সরকার। কুড়মালি ভাষাকে আদিবাসী ভাষা হিসেবে গণ্য করার জন্যও কেন্দ্রকে সুপারিশ করা হয়েছে। কুড়মালি ভাষা ও সংস্কৃতির প্রসারের জন্য রাজ্য সরকার ‘কুড়মি উন্নয়ন ও সংস্কৃতি পর্ষদ’ গড়া হচ্ছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তবে আদিবাসী কুড়মি সমাজের নেতাদের দাবি, পঞ্চায়েত ভোটের আগে এ সব কথার কথা। এখনও এ রাজ্যে সরকারি উদ্যোগে কুড়মালি ভাষায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকস্তরে পড়ার সুযোগ নেই। অথচ জঙ্গলমহলের চার জেলা-সহ সারা রাজ্যে ৫০ লক্ষ কুড়মালিভাষী মানুষ আছেন। কুড়মি ছাড়াও চার জেলার অন্য সম্প্রদায়ের মানুষও কুড়মালি ভাষায় কথা বলেন। ‘আদিবাসী কুড়মি সমাজ’-এর রাজ্য সম্পাদক রাজেশ মাহাতোর অভিযোগ, “কুড়মিদের দাবি নিয়ে রাজ্যের তরফে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হচ্ছে না। সেই কারণে নাছোড় আন্দোলনে যাওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

গত ২০ সেপ্টেম্বর নানা দাবিদাওয়া নিয়ে সংগঠনের ডাকে ‘ডহর ছেঁকা’ অর্থাৎ রাস্তা অবরোধের কর্মসূচি পালিত হয়েছিল। সে দিন এই চার জেলায় জাতীয় ও রাজ্য সড়ক অবরোধ করা হয়েছিল। সূত্রের খবর, গ্রামেগঞ্জে সংগঠন গড়ে তুলছে কুড়মি সমাজ। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনের জন্য যুবকদের নিয়ে গঠন করা হচ্ছে ‘কুড়মি সেনা’। যদিও সংগঠনের দাবি, অহিংস পথে দাবি আদায়ের আন্দোলনেই বিশ্বাসী তাঁরা। তবে প্রশ্ন উঠছে, যে তিনটি দাবিতে কুড়মিরা সোচ্চার হয়েছেন, তার সব ক’টিই কেন্দ্রীয় সরকারের এক্তিয়ারভুক্ত। ফলে এই আন্দোলনের পিছনে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির সমর্থন রয়েছে বলে আশঙ্কা করছে শাসক শিবির। যদিও রাজেশ মাহাতোর সাফ বক্তব্য, কুড়মিদের অধিকার রক্ষা ও আত্মপরিচিতির দাবিতে এই আন্দোলন একেবারেই অরাজনৈতিক। সমাজিক আন্দোলনে সবস্তরের কুড়মি মানুষ জনের সমর্থন রয়েছে।

সংগঠনের তরফে দাবি, পরাধীন ভারতে ১৯৩১ সাল পর্যন্ত উপজাতি তালিকাভুক্ত ছিলেন কুড়মিরা। ব্রিটিশ সরকারের আমলেই কুড়মিদের তফসিলি উপজাতিদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। স্বাধীন ভারতে পাঁচের দশকে যখন নতুন করে সেই তালিকা তৈরি হয়, তাতে ১৯১৩ সালে গঠিত দেশের ১৩টি উপজাতির তালিকার মধ্যে ১২টি উপজাতিকে মান্যতা দেওয়া হলেও বাদ পড়ে কুড়মি সম্প্রদায়। কেন তাঁরা বাদ পড়েছিলেন, সে ব্যাখ্যা অবশ্য মেলেনি।

অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণমন্ত্রী চূড়ামণি মাহাতো নিজে কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষ। তিনি বলেন, “দাবিগুলি মন্ত্রিসভায় আলোচনা করে কেন্দ্রের কাছে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী কুড়মিদের দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল। কিছু লোক জন কুড়মিদের নাম করে অযথা গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kurmi society Dharna tribal Group
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE