Advertisement
E-Paper

জমি পড়ে, স্কুল হয়নি চার দশকেও

চার দশকেরও বেশি সময় ধরে ফাঁকা পড়ে জমি। এগরার মহেশপুর এলাকায় শিক্ষার প্রসারে প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য ওই ৯ ডেসিমেল জমি দান করেছিলেন এক নিরক্ষর বৃদ্ধা। কিন্তু আজও তাঁর সেই দানকে মর্যাদা দেয়নি প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা দফতর ও পুরসভা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:১৪
এই জমিতেই স্কুল হওয়ার কথা। —নিজস্ব চিত্র।

এই জমিতেই স্কুল হওয়ার কথা। —নিজস্ব চিত্র।

চার দশকেরও বেশি সময় ধরে ফাঁকা পড়ে জমি। এগরার মহেশপুর এলাকায় শিক্ষার প্রসারে প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য ওই ৯ ডেসিমেল জমি দান করেছিলেন এক নিরক্ষর বৃদ্ধা। কিন্তু আজও তাঁর সেই দানকে মর্যাদা দেয়নি প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা দফতর ও পুরসভা। অবহেলায় ও অনুৎসাহে স্কুল না হওয়ায় হতাশ এলাকাবাসী ও জমিদাতার পরিবারের সদস্যরা।

কয়েক বছর আগেও পুরসভার অন্য এলাকা থেকে এ করকম বিচ্ছিন্ন থেকে অনুন্নত ছিল তফসিলি জাতি-উপজাতি ও সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই অঞ্চল। ছিল না রাস্তা,বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের সুব্যবস্থা। বর্তমানে সেই সব পরিষেবা পৌঁছলেও শিক্ষার হার কম। অধিকাংশ পরিবারই কৃষিজীবি বা শ্রমজীবী। পিছিয়ে পড়া এই এলাকায় স্কুল নেই। তাই দেড় দুই কিলোমিটার দূরে পুরুষোত্তমপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একলাবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়েই যেতে হয় মহেশপুরে কচিকাঁচাদের। পার হয়ে যেতে হয় সদা ব্যস্ত এগরা-খড়গপুর ও এগরা-বাজকুল রাস্তা। অতীতে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি বা আহত হওয়ার ঘটনায় অভিভাবকরা আবার ওই দুই স্কুলে ছেলেমেয়েদের পাঠাতে ভরসাও পান না। এক দশক আগে ও এলাকার অনেকেই প্রাথমিক শিক্ষার গণ্ডিটুকুও পেরোতে পারেননি।

অশিক্ষাই পিছিয়ে থাকার মূল কারণ বুঝতে পেরে স্কুল গড়তে জমি দানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নিরক্ষর এক কৃষিজীবী সুরেন্দ্রনাথ কোটাল। তাঁর অকালমৃত্যুর পরে স্ত্রী অহল্যাদেবী ১৯৭৫ সালের ২৮ অক্টোবর জেলা স্কুল পরিদর্শককে (প্রাথমিক) ওই জমি দান করেন। কিন্তু বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হননি কেউই। অহল্যাদেবী ও তাঁর ছেলে প্রয়াত হয়েছেন। অহল্যাদেবীর নাতি প্রৌঢ় জগন্নাথবাবু চাষবাস করেই সংসার চালান। কোটাল পরিবারের সদস্য ফাল্গুনী কোটাল বলেন, “বহু গ্রামেই জমি সমস্যায় স্কুল তৈরি হয় না। আটকে যায় অনেক উন্নয়নের কাজও। আর এখানে একচল্লিশ বছর ধরে জমি পড়ে রয়েছে। নানা সময়ে নানা অছিলায় চাপা পড়ে থাকছে বিদ্যালয় তৈরির উদ্যোগ। বিষয়টি খুবই বেদনাদায়ক।” জমির বর্তমান বাজার দর ২৫-৩০ লক্ষ টাকা। অভাবের সংসার কোটাল পরিবারের। জমে থাকা অভিমান থেকে তাঁরা এখন বলছেন, “ওই জমি ফেরত দেওয়া হোক। তাতে পরিবারের ছেলেরা সেই টাকায় ব্যবসা করবে।”

এলাকার বাসিন্দা মাধবচন্দ্র কর বলেন, “স্কুলের জন্য তিরিশ বছর ধরে স্থানীয় পঞ্চায়েত (এখন পুরসভা) থেকে রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত বারবার দরবার করেছি। আশ্বাস পেলেও কাজ হয়নি। এখনও মহেশপুরের চল্লিশ শতাংশ মানুষ নিরক্ষর। মাধ্যমিক উত্তীর্ণের হারও নিতান্ত কম। তবুও এই বঞ্চনা।” প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে জমির অভাবে নানা জায়গায় উন্নয়নের কাজ থমকে, সেখানে জমি পেয়েও এত দিনেও স্কুল হল না কেন? এ ক্ষেত্রে পুরসভা সব দায় চাপিয়ে দিয়েছে প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা দফতরের উপর। পুরপ্রধান শংকর বেরা বলেন, “জেলা প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা দফতর, সর্বশিক্ষা মিশন, জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদে বারবার নথি পাঠানো হয়েছে কিন্তু অজ্ঞাত কারণে অনুমোদন মেলেনি।’’

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, মহেশপুরে জমি নির্দিষ্ট থাকলেও ২০০১ সালে পাশের মৌজা পুরুষোত্তমপুরে একটি শিশু শিক্ষাকেন্দ্রের অনুমোদন দেওয়া হয়। ওই কেন্দ্রের প্রধান সহায়িকা ঝর্না বেগম জানান, বর্তমানে পড়ুয়া সংখ্যা ১১২ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৮০-তে। মহেশপুর এলাকার অভিভাবকরা ওই কেন্দ্রে শিশুদের পাঠান না।

২০১০ সাল থেকেই সর্বশিক্ষা মিশনের প্রস্তাব ছিল যে শিশুশিক্ষা কেন্দ্রটিকে ওই ফাঁকা জমিতে এনে প্রাথমিক স্কুলে রূপান্তরিত করার। পরে তাও বন্ধ হয়। জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ মামুদ হোসেন বলেন, “সর্বশিক্ষা মিশন থেকে জেলায় কয়েক বছরে নতুন ১২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় হয়েছে। মহেশপুর কেন বাদ গেল তা খোঁজ নিয়ে দেখছি। ওই জমিতে যাতে নিশ্চিত ভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয় হয় তার চেষ্টা করব।” জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) কাবেরী নাগ বলেন, “বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।” সর্বশিক্ষা মিশনের জেলা প্রকল্প আধিকারিক গৌতম মাইতির বক্তব্য, ‘‘বিষয়টি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষা দফতরে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন দিলে তাঁরাই দেবেন।’’ জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সভাপতি মানস দাস বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা স্কুলবিহীন কোনও গ্রাম থাকবে না। ওই বিষয়টি আমার জানা নেই। জমি থাকলে স্কুলের দ্রুত অনুমোদন দেব।”

দায় এড়ানো ও প্রতিশ্রুতির পালা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু, মহেশপুরে আদৌ স্কুল হবে কি? ভোটের মুখে ফের প্রশ্ন তুলল মহেশপুর।

land school building jhargram
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy