Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
রেলের অফিসে কর্মী-বিক্ষোভ

ট্রেন চালকের আত্মহত্যা কি মানসিক চাপে!

শহরের পুরাতনবাজারের ভাড়া বাড়ি থেকে গুড্ডুকুমার কেশরী (২৭) নামে ওই ট্রেন চালকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। এই ঘটনায় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সরব হয়ে রেলের চালক-গার্ডদের ‘কম্বাইন্ড ক্রু লবি’ অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান ট্রেন চালকেরা।

খড়্গপুরে ট্রেন চালকদের বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র

খড়্গপুরে ট্রেন চালকদের বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৮ ০২:১৮
Share: Save:

ছুটি না দিয়ে মানসিক চাপ তৈরি করা হচ্ছে, আর তার জেরেই তাঁদের সহকর্মী আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন— গুড্ডুকুমার কেশরী নামে ব্যক্তির দেহ উদ্ধারের ঘটনায় এমনই অভিযোগে বিক্ষোভ দেখালেন ট্রেন চালকেরা। শনিবার খড়্গপুর শহরের বোগদা এলাকায় রেলের অফিসে ভাঙচুর চালানো হয় বলেও অভিযোগ।

এ দিন শহরের পুরাতনবাজারের ভাড়া বাড়ি থেকে গুড্ডুকুমার কেশরী (২৭) নামে ওই ট্রেন চালকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। এই ঘটনায় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সরব হয়ে রেলের চালক-গার্ডদের ‘কম্বাইন্ড ক্রু লবি’ অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান ট্রেন চালকেরা। ছুটে আসে আরপিএফ। ধস্তাধ্বস্তি বেধে যায় আরপিএফ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে। অভিযোগ, সাংবাদিকেরাও ছবি তুলতে গিয়ে আক্রান্ত হয়। এক সাংবাদিকের জামা ছিঁড়ে দেওয়া হয়। পৌঁছয় পুলিশও। তবে রেলের পক্ষ থেকে অভিযোগ না মেলায় পুলিশও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি।

রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, আদতে ধানবাদের বাসিন্দা গুড্ডুকুমার কেশরী ২০১৬ সালে খড়্গপুর রেল ডিভিশনে অ্যাসিস্ট্যান্ট লোকো পাইলট পদে কাজে নিযুক্ত হন। তারপর থেকে এই ডিভিশনেই কাজ করছিলেন। রেলের জরুরি বিভাগে কাজ করার দরুন চালক-গার্ডরা কম ছুটি পান। সেই নিয়মে গুড্ডুকুমারও কম ছুটি পেতেন। গত ১৮ অক্টোবর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর চিকিৎসার প্রয়োজনে রেলের চিফ ক্রু কন্ট্রোলার সুনীল কুমারের কাছে ছুটির আবেদন জানিয়েছিলেন গুড্ডুকুমার। গত ১৮ অক্টোবর ভোরে কাজ সেরে ছুটিতে চলেও গিয়েছিলেন। কিন্তু রেলের পক্ষ থেকে তাঁর ছুটির আবেদন মঞ্জুর করা হয়নি। কিন্তু অনুমতি ছাড়াই তিনি ছুটিতে চলে যাওয়ায় অসন্তুষ্ট হন বিভাগীয় আধিকারিকেরা। এমনকী শনিবার পর্যন্ত তিনি কাজে যোগ দেননি বলে দেখানো হয় রেলের খাতায়। তার মাঝেই এ দিন ভোরে গুড্ডু কুমারের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের ঘটনায় শোরগোল শুরু হয়।

ট্রেন চালকদের অভিযোগ, চিফ ক্রু কন্ট্রোলার সুনীল কুমার ও চিফ ক্রু জেনারেল লক্ষ্মীকান্ত বেহেরা বিভাগের চালকদের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছেন। দিনের পর দিন ছুটি না দিয়ে চালকদের ওপর মানসিক চাপ তৈরি করা হচ্ছে। তার জেরেই তিনি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন। বিক্ষোভকারীদের দাবি, গত ১৮ অক্টোবর তিন দিনের ছুটি কাটিয়ে ফিরে এসেছিলেন গুড্ডুকুমার। কিন্তু তার পরেও তাঁকে কাজে যোগ দিতে দিচ্ছিলেন না সুনীল কুমার ও লক্ষ্মীকান্ত বেহেরা। তাঁর সঙ্গে একই ভাড়া বাড়িতে থাকা অন্য দুই সহকর্মী কাজে গেলেও তিনি কাজে যেতে না পারায় তৈরি হচ্ছিল মানসিক অবসাদ। এর জেরেই তিনি আত্মঘাতী হন। এ দিন তাই ওই চালকের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ, চাকরি, চালকদের ওপর অত্যাচার বন্ধ এবং সুনীল কুমার ও লক্ষ্মীকান্ত বেহেরাকে চাকরি থেকে বহিষ্কারের দাবিতে সরব হয় গুড্ডুকুমারের সহকর্মী চালকেরা।

এ দিকে এমন ঘটনায় বিক্ষোভকারীদের সকলেই মুখে কুলুপ এঁটেছেন। এক চালকের কথায়, “আমাদের কোনও নেতা নেই। আমরা সকলে নেতা। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে লড়াই করছি। সুনীল কুমার ও লক্ষ্মীকান্ত বেহেরা আমাদের সঙ্গে ভৃত্যের মতো আচরণ করে। ছুটি দেয়। তাই একজন সহকর্মীকে আমরা হারিয়েছি। ওঁদের শাস্তি চাই।”

চিফ ক্রু কন্ট্রোলার সুনীল কুমার দাবি করেন, “ওই সহকারী চালক ছুটির আবেদন জানালেও তা গৃহীত হয়নি। অথচ উনি ছুটিতে চলে গিয়েছিলেন। এ দিন পর্যন্ত কাজে যোগ দেননি। আমাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মিথ্যা।” বিষয়টি নিয়ে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করেছে রেল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death suicide Loco Pilot
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE