ম্যালেরিয়ার প্রকোপ ছড়াল নারায়ণগড়ের মুড়াকাটা গ্রামে। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত মকরামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মুড়াকাটা গ্রামের ১১জনের রক্তে ম্যালেরিয়ার জীবাণু পাওয়া গিয়েছে। বুধবার সকালে স্বাস্থ্য দফতরের একটি প্রতিনিধিদল মুড়াকাটা গ্রামে যায়।
দুর্গাপুজোর পরে আদিবাসী অধ্যুষিত এই গ্রামের ২২ জন যুবক ঝাড়খণ্ডে ফুটবল প্রতিযোগিতায় খেলতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফিরে আসার পরে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে গ্রামের ওই যুবকরা একের পর এক জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়েন বলে অভিযোগ। আক্রান্তদের বেলদা গ্রামীণ হাসপাতাল, খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল ও মেদিনীপুর মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়। রক্ত পরীক্ষার পরে আপাতত ভর্তি থাকা ১১জনের রক্তে ম্যালেরিয়ার জীবাণু মিলেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৫ অক্টোবর ওই গ্রামের বাসিন্দা থিপো মুর্মু, রঘুনাথ মুর্মু, অনিল মাণ্ডি-সহ ২১ জন যুবক ঝাড়খণ্ডে ফুটবল প্রতিযোগিতায় খেলতে গিয়েছিলেন। গত ১৮ অক্টোবর তাঁরা ঝাড়খণ্ড তেকে ফিরে আসেন। গত ২ নভেম্বর থেকে ঝাড়খণ্ড থেকে ফিরে ওই যুবকেরা একে একে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়েন বলে অভিযোগ। কয়েকদিন চিকিৎসার পরও জ্বর না কমায় তাঁদের প্রথমে বেলদা গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অসুস্থদের মধ্যে একজনকে হিজলি গ্রামীণ হাসপাতাল ও ৪জনকে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। একজনকে স্থানান্তরিত করা হয় মেদিনীপুর মেডিক্যালে। অসুস্থদের মধ্যে রঘু মাণ্ডি, অনিল মাণ্ডি, রঘুনাথ মুর্মু, ইন্দ্র মাণ্ডি, অনিল মাণ্ডি, অনিল মুর্মুর রক্তে ফ্যালসিফেরাম ম্যালেরিয়ার জীবাণুও পাওয়া গিয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর।
আক্রান্ত অনিল মুর্মুর দাদা ভীম মুর্মু বলেন, “গ্রামের মধ্যে এতজন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় চিন্তায় আছি। কিন্তু এখনও আমাদের এলাকায় স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে মশানাশক তেল স্প্রে করা হয়নি।” বুধবার সকালে এলাকায় গিয়েছিলেন জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক-সহ একটি জেলা স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিদল। ম্যালেরিয়ার জেলা নোডাল অফিসার তথা উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, “ওই গ্রামের যে যুবকেরা আক্রান্ত হয়েছে তাঁরা ঝাড়খণ্ডে ফুটবল খেলতে গিয়ে পাহাড় ঘেঁষা এলাকায় মশারি ছাড়া শুয়েছিল। আর ঝাড়খণ্ড, বিহার, ওড়িশা ম্যালেরিয়ার আঁতুরঘর। তাই আমাদের ধারণা, ওখান থেকেই জীবাণু ছড়িয়েছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এই বিষয়ে মানুষের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা গ্রামে থেকে নজরদারি চালাচ্ছে। ভয়ের কোনও কারণ নেই।”
এ দিন গ্রামে এক সচেতনতা শিবিরও করে স্বাস্থ্য দফতর। ওই ফুটবল দলের টিম লিডার থিপো মুর্মু বলেন, “গ্রামের বন্ধুরা মিলে ঝাড়খণ্ডে খেলতে গিয়েছিলাম। সেখানে আমার দিদির বাড়িতেই সকলে ছিল। ২১-২২জনের জন্য মশারি টাঙানো সম্ভব হয়নি। তাই হয়তো ম্যালেরিয়া ছড়িয়েছে।’’ তাঁর দাবি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য দফতরের আরও জোরালো ভূমিকা নেওয়া উচিত। এ বিষয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “খেলতে গিয়ে ঝাড়খণ্ড থেকেই ম্যালেরিয়ার জীবাণু বয়ে এনেছে। আমাদের একটি দল মুড়াকাটা গ্রামে নজরদারি চালাচ্ছে। ১১জনের বাইরে গ্রামে আর কেউ নতুন করে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়নি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy