Advertisement
E-Paper

খাসজমি-জট কাটবে, আশা মমতা-বার্তায়

চার মাস আগে খড়্গপুর আইআইটির সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এলে মুখ্যমন্ত্রীকে এই জমি সমস্যার কথা জানান খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার। সমাধানের আশ্বাসও দেন মুখ্যমন্ত্রী।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:১০
জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ ও সহ-সভাধিপতি অজিত মাইতিকে নির্দেশ দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার মেদিনীপুরে প্রশাসনিক বৈঠকে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ ও সহ-সভাধিপতি অজিত মাইতিকে নির্দেশ দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার মেদিনীপুরে প্রশাসনিক বৈঠকে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

রায়ত জমি হয়ে গিয়েছে খাস। বাড়ি করেও বিপাকে পড়েছেন মেদিনীপুর ও খড়্গপুর শহরের অনেক মানুষ। মঙ্গলবার মেদিনীপুরে প্রশাসনিক বৈঠকে খাস হয়ে যাওয়া জমি সমস্যার সমাধানে জোর দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের প্রধান সচিব মনোজ পন্থকে এ নিয়ে ক্যাবিনেটে পরিকল্পনা পেশ করতে বলেছেন তিনি।

চার মাস আগে খড়্গপুর আইআইটির সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এলে মুখ্যমন্ত্রীকে এই জমি সমস্যার কথা জানান খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার। সমাধানের আশ্বাসও দেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে ফের মেদিনীপুরের এমন জমির সমস্যার কথা তুলে ধরেন বিধায়ক দীনেন রায়। সমস্যার কথা শুনেই ভূমি দফতরের প্রধান সচিব মনোজ পন্থের উদ্দেশ্যে মমতা বলেন, “এখানে একটা খাস জমির সমস্যা রয়েছে। চার মাস আগে আমি যখন আইআইটিতে এসেছিলাম তখন খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ আমাকে সমস্যার কথা জানিয়েছিল। তোমরা আলোচনাতেই বিষয়গুলো ফেলে রেখে দাও। তার পরে কাজগুলো হয় না। এটা কেন হবে?” সেই সময়ে মনোজ পন্থকে বলতে শোনা যায়, “একটা ‘পলিসিগত’ সিদ্ধান্ত নিয়ে আপনাকে জানাবো।” এই কথা শুনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “চারমাস হয়ে গিয়েছে। পরের ক্যাবিনেটে যেন এই বিষয়টি রাখা হয়। আমি মুখ্যসচিবকেও বিষয়টি বলে রাখলাম।”

খড়্গপুর শহরের খাসজঙ্গল মৌজা নিয়ে কমিটি গড়ে আন্দোলনে নেমেছে স্থানীয় বাসিন্দারা। মেদিনীপুর শহরের কর্ণেলগোলা, চাঁদিয়ানাবাজার, বাড়পাথর ক্যানটনমেন্ট ও কেরানিতলা মৌজায় একই সমস্যার শিকার এলাকার বাসিন্দারা। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, মেদিনীপুর ও খড়্গপুরের এই পাঁচটি মৌজার কিছু খাস জমি ব্রিটিশ জমানায় ১৯৪৫ সাল থেকে ৩০ বছরের জন্য লিজে দেওয়া হয়েছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ওই জমি কেনা-বেচা শুরু হয়। নেওয়া হত খাজনাও। দিনে দিনে বেড়েছে বসতিও। মিউটেশনও করে দিয়েছে পুরসভা। সকলেই পেয়েছেন হোল্ডিং নম্বর।

প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, নিয়ম মেনে ১৯৭৫ সালে সরকারি লিজের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। অভিযোগ, তার পরেও চলেছে জমি কেনা-বেচা। মিলেছে ব্যাঙ্ক ঋণও। খড়্গপুরের মালঞ্চ পল্লিশ্রী এলাকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ককর্মী বৈদ্যনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, “আমি নিজে ১৯৭৫ সালের পরেও ব্যাঙ্কের ঋণ নিয়ে বাড়ি তৈরি করেছি। পুরসভা মিউটেশন করে দিয়েছে।”

সমস্যার শুরু ২০১৫ সালে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি) নির্দেশিকা জারি করে এই জমি খাস বলে জানান। সেই নির্দেশিকা অনুযায়ী জলের সংযোগ, মিউটেশন, হোল্ডিং নম্বর, জমির কেনা-বেচা বন্ধ হয়ে যায়। সুরাহার আশায় খড়্গপুরের খাসজঙ্গল মৌজার ভুক্তভোগী বাসিন্দারা গড়ে তোলেন ‘খড়্গপুর খাসজঙ্গল মৌজা জমি-মালিক কমিটি’ নামে একটি মঞ্চ। তাঁরা জেলা প্রশাসন, মুখ্যমন্ত্রী-সহ বিভিন্ন মহলে সমস্যার কথা জানিয়েছেন বলে দাবি। এ বার মুখ্যমন্ত্রী ওই জমি সমস্যার সমাধানে জোর দেওয়ায় আশার আলো দেখছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

খড়্গপুর খাসজঙ্গল মৌজা জমি-মালিক কমিটি আহ্বায়ক চঞ্চল চক্রবর্তী বলেন, “গত তিন বছর ধরে লড়াই করছি। মুখ্যমন্ত্রীর কথায় একটু স্বস্তি পাচ্ছি। তবে আমরা চাইছি যেন জমিগুলি রায়ত হিসাবে ক্যাবিনেটে পাশ হয়।” এ নিয়ে খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর ওপর আস্থা রয়েছে। উনি আমার আবেদনে সাড়া দিয়েছেন। আমার নাম উল্লেখ করে দফতরের সচিবকে দ্রুত সমস্যার সমাধানের নির্দেশ দিয়েছেন। এর থেকে খুশির আর কি হতে পারে।”

প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, আপাতত চলছে জমি সমীক্ষার কাজ। অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) উত্তম অধিকারী বলেন, “এখন জমি সমীক্ষার কাজ চলছে। দফতর থেকে ক্যাবিনেটে প্রস্তাব মঞ্জুর হবে। এ ক্ষেত্রে ওই জমি লিজে না রায়ত হিসাবে দেওয়া হবে তা দফতর ঠিক করবে।”

Mamata Banerjee Kharagpur Vested Land
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy