Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
বাড়িতে শৌচাগার নেই, মৃত্যুতে মাসুল বৃদ্ধের

ভোরে বাঁশঝাড়ে হাতির মুখে

নীলকন্ঠ রেলের চতুর্থ শ্রেণির অবসরপ্রাপ্ত কর্মী ছিলেন।

সরঞ্জাম এলেও তৈরি হয়নি শৌচালয়। ঝাড়গ্রামের চেনা ছবি। ইনসেটে মৃত নীলকণ্ঠ মাহাতো।  —নিজস্ব চিত্র

সরঞ্জাম এলেও তৈরি হয়নি শৌচালয়। ঝাড়গ্রামের চেনা ছবি। ইনসেটে মৃত নীলকণ্ঠ মাহাতো। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৯ ০০:০২
Share: Save:

সরকারি প্রকল্পে বাড়িতে শৌচাগার হয়নি। তাই বাড়ির অদূরে বাঁশঝাড়ে প্রাতঃকৃত্য সারতে গিয়েছিলেন অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী নীলকন্ঠ মাহাতো (৭৭)। সেখানেই বুনো হাতির হামলায় মৃত্যু হল তাঁর।

শনিবার ভোর চারটে নাগাদ ঝাড়গ্রাম শহরের অদূরে খড়িকাশুলি গ্রামে এই ঘটনার পরে কেন্দ্রের স্বচ্ছ ভারত বা রাজ্যের মিশন নির্মল বাংলার মতো প্রকল্পের সরকারি সাফল্যের দাবি নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। নীলকন্ঠ রেলের চতুর্থ শ্রেণির অবসরপ্রাপ্ত কর্মী ছিলেন। তাঁর বড় ছেলে জিতেন বলেন, ‘‘বাড়িতে শৌচাগার নেই বলে আমরা মাঠেই যাই। বাবাও প্রতিদিনের মতো এ দিন ভোরে বাঁশঝাড়ে প্রাতঃকৃত্য সারতে গিয়েছিলেন। তখনই হামলা চালায় হাতিটি।’’ জিতেনের আক্ষেপ, ‘‘বাড়িতে শৌচাগার থাকলে হয়তো বাবাকে এ ভাবে হারাতাম না।’’

খড়িকাশুলি গ্রামে বাম আমলে সরকারি শৌচাগার তৈরির জন্য বাড়ি-বাড়ি সমীক্ষা হয়েছিল। কিন্তু সন্ত্রাস পর্বে মাওবাদীরা এই এলাকার বাসিন্দাদের বাড়িতে হানা দিয়ে ইলেকট্রিক বিল-সহ নানা সরকারি নথি নষ্ট করে দিয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দা ঠাকুরদাস মাহাতো, অশোক দাস বলেন, ‘‘শৌচাগার সমীক্ষার নথিও নষ্ট করে দিয়েছিল মাওবাদীরা। তারপর দশ বছর গড়িয়ে গেলেও খড়িকাশুলি ও পার্শ্ববর্তী বড় ধবনি, ছোট ধবনি ও উত্তরশোল গ্রামে সরকারি শৌচাগার তৈরির জন্য নতুন করে আর সমীক্ষা হয়নি।’’ ব্যক্তিগত উদ্যোগে কয়েকজনের বাড়িতে অবশ্য শৌচাগার হয়েছে।

ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ উজ্জ্বল দত্তের অবশ্য দাবি, ‘‘জেলায় মিশন নির্মল বাংলার কাজ খুবই ভাল ভাবে চলেছে। গ্রামীণ এলাকার ৭০ শতাংশ বাড়িতে শৌচাগার করে দেওয়া হয়েছে।’’ সেই সঙ্গে উজ্জ্বলের আশ্বাস, এখনও যে সব এলাকায় শৌচাগার হয়নি, এ‌লাকাবাসীর আবেদনের ভিত্তিতে সেখানে শৌচাগার বানিয়ে দেওয়া হবে। ঝাড়গ্রামের ডিএফও বাসবরাজ হলেইচ্চি বলেন, ‘‘ওই বৃদ্ধ মাঠে প্রাতঃকৃত্য সারতে গিয়ে হাতির দলের সামনে পড়ে যান। মৃতের পরিবারকে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।’’

বন দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, লালগড়ের দিক থেকে ১৪টি হাতির দল বৈতার কাছে কংসাবতী পেরিয়ে ভোর চারটে নাগাদ খড়িকাশুলি গ্রামে ঢুকে পড়ে। ওই সময় হাতির দলটি যাওয়ার সময় বাঁশঝাড়ের ধারে নীলকন্ঠ বসেছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একটি হাতি নীলকন্ঠকে পা দিয়ে কয়েকবার ফুটবলের মতো লাথি মারে। ছিটকে পড়েন বৃদ্ধ। হাতির দলটি অবশ্য গ্রামে কোনও ক্ষয়ক্ষতি করেনি। তারা বাঁশতলার কাছে লোয়াগড়ের জঙ্গলে গিয়ে আশ্রয় নেয়।

বন দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে কেবলমাত্র ঝাড়গ্রাম জেলায় মাঠে প্রাতঃকৃত্য সারতে গিয়ে ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। জঙ্গলমহলে যেমন বেশ কিছু বাসিন্দার বাড়িতে শৌচাগার নেই। তেমনই আবার সরকারি শৌচাগার পেয়েও ব্যবহার করেন না একাংশ বাসিন্দা। তাঁরা মাঠে যেতেই স্বচ্ছন্দ্যবোধ করেন। আবার পঞ্চায়েতের ঘরে ৯০০ টাকা জমা দিয়েও বাসিন্দারা শৌচাগার পাননি এমন অভিযোগও শোনা যায়। বরাতপ্রাপ্ত ঠিকাদার ঝাড়গ্রাম জেলার বহু জায়গায় নিম্ন মানের শৌচাগার বানিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Elephant Attacks Jhargram
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE