Advertisement
১৫ মে ২০২৪

এ বার মাওবাদী বন্‌ধে সাড়া নেই জঙ্গলমহলে

ছত্রধর মাহাতো বনাম সশস্ত্র মাওবাদী! মাওবাদীদের ডাকা দু’টি বন্‌ধের দুই চিত্র জঙ্গলমহলে! বন্‌ধের এই বৈপরীত্য ভাবাচ্ছে গোয়েন্দাদের। চিত্র-১) ইউএপি মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত জনগণের কমিটির জেলবন্দি নেতা ছত্রধরের মুক্তির দাবিতে গত ২৫ মে জঙ্গলমহলে ১২ ঘন্টা বন্ধের ডাক দিয়েছিল মাওবাদীরা।

রবিবার ঝাড়গ্রামে ছিল হাটবার। বন‌্ধ উপেক্ষা করেই জঙ্গলমহলের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন এসেছিলেন। জমজমাট ছিল বাজার।  —নিজস্ব চিত্র।

রবিবার ঝাড়গ্রামে ছিল হাটবার। বন‌্ধ উপেক্ষা করেই জঙ্গলমহলের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন এসেছিলেন। জমজমাট ছিল বাজার। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৫ ০৫:০১
Share: Save:

ছত্রধর মাহাতো বনাম সশস্ত্র মাওবাদী!

মাওবাদীদের ডাকা দু’টি বন্‌ধের দুই চিত্র জঙ্গলমহলে! বন্‌ধের এই বৈপরীত্য ভাবাচ্ছে গোয়েন্দাদের।

চিত্র-১) ইউএপি মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত জনগণের কমিটির জেলবন্দি নেতা ছত্রধরের মুক্তির দাবিতে গত ২৫ মে জঙ্গলমহলে ১২ ঘন্টা বন্ধের ডাক দিয়েছিল মাওবাদীরা। বন্‌ধ ডেকেছিল জনগণের কমিটিও। সেই বন্‌ধ ভাঙতে জঙ্গলমহলে শাসক দল ও পুলিশকে পথে নামতে হয়েছিল।

চিত্র-২) ঝাড়খণ্ডের পলামুতে মাওবাদী-নিধনের প্রতিবাদে ঝাড়খণ্ড, ছত্তীসগঢ়, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ -এই চার রাজ্যে মাওবাদীরা ১২-১৪ জুন ৭২ ঘন্টা বন্‌ধের ডাক দিয়েছিল। কিন্তু শুক্র থেকে রবিরার তিন দিনের মাওবাদী-বন্‌ধে কার্যত সাড়া দিল না জঙ্গলমহল। বন্‌ধে ব্যর্থ করতে পুলিশ অথবা শাসক দলের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন পড়ল না।

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, গত তিন দিন জঙ্গলমহল একেবারে স্বাভাবিক রয়েছে। দোকান-বাজার খোলা। অফিস, ব্যাঙ্ক, ডাকঘরে স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে। গ্রীষ্মের ছুটির জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও ভর্তি প্রক্রিয়া চলেছে। রাস্তাঘাটে বাস-ট্রেকার স্বাভাবিক চলেছে। রবিবার ছুটির দিনে জমজমাট ছিল ঝাড়গ্রাম শহর-সহ জঙ্গলমহলের সমস্ত এলাকার দোকান-বাজার।

গত ২৫ মে-র বন্‌ধ ব্যর্থ করার জন্য পুলিশের তরফে মাইকে প্রচার চালানো হয়েছিল। দোকানে দোকানে গিয়ে পুলিশ দোকান খোলা রাখার ফতোয়াও দিয়েছিল। বন্‌ধের আগের দিন ঝাড়গ্রাম শহর-সহ জঙ্গলমহলের বিভিন্ন এলাকায় বন্ধ বিরোধী মিছিল ও পথসভা করেছিল তৃণমূল। তারপরও শেষ রক্ষা হয়নি। ২৫ মে-র বন্‌ধে বেলপাহাড়ি ও লালগড়ের অধিকাংশ দোকানপাট বন্‌ধ ছিল। পরে পুলিশের উদ্যোগে দোকানপাট খোলানো হয়।

এ বার অবশ্য শাসক দল কিংবা পুলিশ কাউকেই পথে নামতে হয় নি। বন্ধও হয়নি। কেন এবার বন্‌ধ হল না? গোয়েন্দা সূত্রের ব্যাখ্যা, পলামুতে মাওবাদী স্কোয়াডের সদস্যরা নিহত হয়েছেন। জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের খুন-সন্ত্রাসের দিনগুলি মানুষ ভুলে যান নি। তাই মাওবাদী-নিকেশের প্রতিবাদে ডাকা বন‌্ধে মানুষ এ বার সাড়া দেন নি। পক্ষান্তরে, গত মাসে ছত্রধরের মুক্তির দাবিতে মাওবাদীদের পাশাপাশি, জনগণের কমিটির নামেও বন্ধের পোস্টার পড়েছিল। ওই বন্‌ধে কয়েকটি জায়গায় প্রভাব পড়েছিল।

ছত্রধরের স্ত্রী নিয়তি মাহাতোও মনে করেন, জঙ্গলমহলের মানুষ এখনও তাঁর স্বামীকে ভালবাসেন। নিয়তিদেবী বলেন, “গত ২৫ মে আমার স্বামীর মুক্তির দাবিতে ডাকা বন্‌ধে মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সাড়া দিয়েছিলেন। এই জন্যই পরে পুলিশ জোর করে দোকানপাট খুলিয়েছিল। উনি আন্দোলন করেছিলেন বলেই আজ জঙ্গলমহলে এত উন্নয়ন হচ্ছে সেটা এলাকাবাসী জানেন। আর তাই সরকারের এত অস্বস্তি।”

ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশের এক আধিকারিকের অবশ্য দাবি, “এলাকায় মাওবাদীদের কোনও জনসমর্থন নেই। তা ছাড়া পুলিশ সব সময় সতর্ক রয়েছে। সেই কারণে বন্‌ধের কোনও প্রভাব পড়েনি।” তাহলে গত বারের বন‌্ধে পুলিশ ‘অতিসক্রিয়’ থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে কয়েকটি এলাকায় বন্‌ধের প্রভাব পড়েছিল? সেই প্রশ্নের অবশ্য জবাব মেলেনি। বেলপাহাড়ির প্রবীণ কংগ্রেস নেতা সুব্রত ভট্টাচার্য বলেন, “ছত্রধর-কাণ্ডে রাজ্য সরকারের দ্বিচারিতার বিরুদ্ধে গত বারের বন্‌ধে এলাকার মানুষ ক্ষোভ জানিয়েছিলেন। এ বারের বন্‌ধে মাওবাদীদের হিংসাত্মক রাজনীতির বিরুদ্ধে এলাকাবাসী নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন।”

গোয়েন্দাদের অবশ্য আশঙ্কা, জঙ্গলমহলে জনসমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে এভাবেই ফের গণতন্ত্রের মুখ ও মুখোশকে ঢাল করতে চায় মাওবাদীরা। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jangalmahal Maoist chattradhar mahato Jhargram
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE