Advertisement
১৭ মে ২০২৪

বন্ধ গোলবাজার, পুজোর মরসুমে ভোগান্তি

দিন চারেক আগেও টোম্যাটো ছিল প্রতি কেজি ২০ টাকা। গত দু’দিনে সেই টোম্যাটোর দাম গিয়ে ঠেকেছে ৬০ টাকায়। প্রতি কেজি ১০ টাকার ঝিঙে হয়েছে ৩০ টাকা, ১০০ টাকার আপেল হয়েছে ১৩০ টাকা, ২০ টাকার পানিফল হয়েছে ৪০ টাকা।

বড়বাতিতে অস্থায়ী বাজারেই পসরা নিয়ে বসেছেন ফল ও সব্জি বিক্রেতারা।— রামপ্রসাদ সাউ।

বড়বাতিতে অস্থায়ী বাজারেই পসরা নিয়ে বসেছেন ফল ও সব্জি বিক্রেতারা।— রামপ্রসাদ সাউ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৫২
Share: Save:

দিন চারেক আগেও টোম্যাটো ছিল প্রতি কেজি ২০ টাকা। গত দু’দিনে সেই টোম্যাটোর দাম গিয়ে ঠেকেছে ৬০ টাকায়। প্রতি কেজি ১০ টাকার ঝিঙে হয়েছে ৩০ টাকা, ১০০ টাকার আপেল হয়েছে ১৩০ টাকা, ২০ টাকার পানিফল হয়েছে ৪০ টাকা।

এই ছবি রেলশহর খড়্গপুরের। শনিবার কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর আয়োজন করতে গিয়ে সত্যিই মাথায় হাত গৃহস্থদের। চাহিদার অনুপাতে জোগান কম হওয়ায় ফল, সব্জির দাম এ বার গোটা জেলাতেই চড়া। তবে খড়্গপুরে দামটা আরও একটু বেশি, কারণ অশান্তির জেরে গোলবাজারের প্রধান পাইকারি বাজার দিন তিনেক হল বন্ধ। গুদামে পড়ে নষ্ট হতে চলা সব্জি এ দিন কোনওমতে বের করে চড়া দরে বিক্রি করেছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। আর তার জেরেই খুচরো ব্যবসায়ীদের কাছেও ফল-সব্জির দাম বেড়েছে। মধ্যবিত্ত বাঙালি বাধ্য হয়েছেন চড়া দামে জিনিস কিনে পুজোর আয়োজন করতে। প্রাণকেন্দ্র গোলবাজার বন্ধ থাকায় ভোগান্তি বেড়ছে খড়্গপুরবাসীর।

ক’দিন আগে গোলবাজারের মধ্যেই এক তরুণকে পিটিয়ে খুনের ঘটনা ঘটে। তার জেরে বেশ কয়েকদিন ঝাঁপ বন্ধ ছিল দোকানের। পরে দোকান খুললেও দুর্গাপুজোর আগে বাজার তেমন জমেনি। নিরাপত্তার কারণে সন্ধের পরে অনেক ক্রেতাই গোলবাজারমুখো হননি। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গত বুধবার রাতে ফের খড়্গপুর শহরে এক গোলমাল হয়। তার জেরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শহরের সব দোকানপাটই বন্ধ ছিল। ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত শহর জুড়ে ১৪৪ ধারাও জারি করা হয়। এরই মধ্যে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো পড়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েন শহরবাসী। অবশ্য শুক্রবার থেকে গোলবাজারের ফল ও সব্জি ব্যবসায়ীরা শহরের বড়বাতিতে অস্থায়ী বাজার পেতে বসেছেন। এ দিন সেখানে এসে কিছু পাইকারি ব্যবসায়ীও গুদামের সব্জি বিক্রি করেছেন। এ দিন খুলেছে খরিদা, ইন্দা বাজারও। তবে শুক্রবার রাতে ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠকে বসে নিরাপত্তার আশ্বাস দেওয়া হলেও গোলবাজারে দোকানপাট খোলেনি। সকালে তৃণমূল ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে গোলবাজারের ব্যবসায়ীদের দিয়ে কয়েকটি দোকান খোলার চেষ্টা হলেও আধ ঘন্টার মধ্যে তা বন্ধ হয়ে যায়। খোলেনি সব্জির পাইকারি বাজারও।

এই পরিস্থিতিতে শহরের অন্য বাজার আগুন। প্রতি কেজি আলু ৩৫ টাকা, কুমড়ো ২০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, বেগুন ৩০ টাকা, ঢেঁড়শ ৪০ টাকা, মূলো ৩০ টাকা, টোম্যাটো ৬০ টাকা, ছোট একটা ফুলকপি ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। ফলের দামও চড়া। প্রতি ডজন কলা (চাপা) ৩০ টাকা, কলা (কাঁঠালি) ৬০টাকা, এক পিস বাতাবিলেবু ২০ টাকা, নারকেল ২০ টাকায় বিকিয়েছে। শুধু ফল-সব্জি নয়, ফুল থেকে লক্ষ্মী প্রতিমা সব কিছুই বিক্রি হয়েছে বেশি দামে। গতবার যেখানে ১০ টাকায় গাঁদার মালা পাওয়া গিয়েছিল, এ বার তার দাম ২০ টাকা। দেড় ফুটের ছাঁচের লক্ষ্মী প্রতিমা বিক্রি হয়েছে ৩০০ টাকায়, যার দাম গত বছর ছিল ১০০ টাকা।

ফল-সব্জির দাম বাড়ার ক্ষেত্রে গোলবাজার বন্ধ থাকাটা যে অন্যতম কারণ, তা ব্যবসায়ীদের কথাতেই স্পষ্ট। বড়বাতিতে অস্থায়ীভাবে বসা খুচরো সব্জি ব্যবসায়ী কার্তিক দোলুই বলছিলেন, ‘‘লক্ষ্মীপুজোর জন্য জিনিসের আমদানি কম। তার মধ্যে খড়্গপুরে পাইকারি বাজার বন্ধ থাকায় অনেক কষ্ট করে আমাদের সব্জির জোগান দিতে হচ্ছে। আমাদেরই ৫-৮টাকা বেশি দামে সব্জি কিনতে হচ্ছে। তাই দাম একটু বেশি।’’ গোলবাজারের পাইকারি বিক্রেতাদের এ দিন বড়বাতিতে খুচরো দরে সব্জি বিক্রি করতে দেখা গিয়েছে। পাইকারি ব্যবসায়ী কেপি গুপ্তা, ইন্দ্রজিৎ যাদবের বক্তব্য, ‘‘বাজার বন্ধ। গুদামে সব্জি পচে যাচ্ছে। অর্ধেক সব্জি ফেলে দিতে হয়েছে। আমদানি কম হচ্ছে। তাই এখানে বসে যেটুকু ভাল সব্জি ছিল তা খুচরো বাজারে একটু চড়া দামে বিক্রি করে দিচ্ছি। ক্রেতাদের সঙ্গেও দর কষাকষি করতে হচ্ছে।’’ একই অবস্থা খরিদা বাজারেও। এই বাজারের সব্জি বিক্রেতা লক্ষ্মী ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা গোলবাজারের পাইকারি বাজার থেকে সব্জী কিনে থাকি। কিন্তু তিনদিন ধরে সব্জি পাচ্ছি না। খুব কষ্ট করে আনতে হচ্ছে। তাই দাম বেশি নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।”

চড়া দাম দিয়ে জিনিস কিনতে বাধ্য হওয়ায় শহরের গৃহস্থেরা নাখুশ। দুপুরে পুজোর বাজার সেরে ফেরার আগে সুকান্তপল্লির বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক ধনঞ্জয় দাস বলছিলেন, “একটা ১০০ টাকার প্রতিমা কিনতে হল ২৫০ টাকা দিয়ে। সব্জি থেকে ফল সব কিছু আগুন। গোলবাজার বন্ধ। শেষ সময়ে বড়বাতিতে অস্থায়ী এই বাজারে যা পেলাম বেশি দাম দিয়ে তাই কিনলাম। কারণ পুজোর সঙ্গে আপস করতে পারব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Market
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE