মেদিনীপুরের ক্ষুদিরাম পার্কে পড়ে রয়েছে বোট।
বোট রয়েছে। রয়েছে জলের ব্যবস্থাও। কিন্তু বোটিং হয় না। অব্যবহৃত হয়ে পড়ে থাকতে থাকতে নষ্ট হয়ে গিয়েছে সেগুলি। বর্তমানে বোটগুলির ঠাঁই হয়েছে জলাধারের পাশের পাঠে।
টয় ট্রেন চেপে পার্কের ঘোরার ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু সেই ট্রেন আর চলে না। দাঁড়িয়ে থাকাটাই এখন তার দস্তুর।
মেদিনীপুর শহর জুড়ে বিনোদনের জন্য বিভিন্ন সময়ে তৈরি করা হয়েছিল বেশ কয়েকটি পার্ক। কিন্তু তৈরির সময় যে সমস্ত পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল বর্তমানে তার কিছুই নজরে পড়ছে না। উল্টে যত দিন যায় ততই পার্কের ভেতরগুলি অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন হচ্ছে। অথচ, পার্কে মানুষের যাতায়াত একেবারেই কম নয়। প্রতিদিনই সকাল থেকেই প্রতিটি পার্কে মানুষের যাতায়াত রয়েছে। তা সত্ত্বেও কেন এই অব্যবস্থা? সদুত্তর মেলেনি।
ধরা যাক, গোপগড় হেরিটেজ অ্যান্ড নেচার ইকো ট্যুরিজম পার্কের কথা। জায়গাটি প্রাকৃতিক কারণেই ভীষণ সুন্দর। রয়েছে একটি টিলা। চারদিকে নানা ধরনের গাছগাছালি, পাখিদের ভিড়। যখন এখানে পার্ক ছিল না তখনও মানুষের আকর্ষণ ছিল ওই জায়গাটির উপর। জায়গাটি নিয়ে নানা উপকথাও প্রচলিত রয়েছে। এখানে নাকি এক সময় পাণ্ডবেরা লুকিয়ে ছিলেন। গোপগড় থেকে নাকি সুড়ঙ্গ ছিল রাজা নরেন্দ্রলাল খানের বাড়ি (এখন যেখানে রাজা নরেন্দ্রলাল খান মহিলা মহাবিদ্যালয়)। এই এলাকাতেই প্রাকৃতিক পরিবেশ বজায় রেখে পরিষ্কার করে গাছ লাগানো হয়েছিল, রাস্তা তৈরি হয়েছিল, তৈরি হয়েছিল অতিথিশালা, বাগান, বোটিংয়ের জন্য হয়েছিল জলাধার নির্মাণ। পশু পাখি রাখারও পরিকল্পনাও করা হয়েছিল। কোথায় কী? এখনও তার কিছু এগোয়নি। আদৌ ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে বন দফতর কোনও পদক্ষেপ নেবে কিনা তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। অথচ, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য এখানে অনেকেই আসতে চান। পুরনো পরিকল্পনাগুলি বাস্তবায়িত করা গেলে আরও বহু মানুষ আকৃষ্ট হয়ে সপ্তাহান্তে যে এখানে ছুটে আসতেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
পুলিশ লাইনের সুকুমার সেনগুপ্ত উদ্যানের কথাই ধরা যাক। এলাকাটি নিতান্ত কম নয়। রয়েছে নানা ধরনের ফুলের গাছ, বোটিংয়ের ব্যবস্থা এমনকী টয় ট্রেনও। এক সময় পার্কটি খুবই সাজানো ছিল। পরবর্তীকালে অ্যাকোরিয়াম, ফোয়ারার মতো দু’একটি ছোট বিষয়ের সংযোজন ঘটেছে ঠিকই, কিন্তু এখন নিয়মিত বোটিং হয় না। বেশিরভাগ বোট ভেঙে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। জলাধারের জলও ভীষণ নোংরা। টয় ট্রেনও নিয়মিত চলে না। মাঝে মধ্যে সেটি শুধু বিকেলে চালানো হলেও সেক্ষেত্রেও নানা নিয়ম রয়েছে। ন্যূনতম ৭-৮ জন না হলে ট্রেন চালানো হবে না। ফলে পরিবারের সকলকে নিয়ে গিয়ে অনেক সময়ই হতাশ হয়ে ফিরতে হয়।
রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে গোপগড় ইকো ট্যুরিজম পার্ক আগাছাময়।
একই অবস্থা ক্ষুদিরাম পার্কেও। মোহনপুর সেতুর কাছে কাঁসাই নদীর ধারে ওই পার্ক তৈরি করা হয়েছিল মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য। শীতকালে পিকনিক করতে অবশ্য অনেকেই যান। সেখানেও এক হাল। জলাধার থাকলেও বোটিং হয় না। বোট ভেঙে পড়ে রয়েছে বছরের পর বছর। অথচ, নদীর ধারে সুন্দর পরিবেশে সকলেই পরিবার নিয়ে যেতে চান। কিন্তু কিছুই না থাকলে যাবেন কী করতে? তাই এখন পার্কগুলিতে ভিড় হয় বলতে অল্প বয়সী ছেলেমেয়েদের। কিন্তু সপরিবারে গিয়ে সুন্দর পরিবেশে একটু আনন্দ করার জায়গা নেই।
তাহলে পার্ক থেকে কী লাভ? উঠছে সেই প্রশ্নও। পার্ক মানেই তো বাচ্চাদের খেলাধূলোর জায়গা, পরিবারের সকলকে নিয়ে অক্সিজেন নেওয়ার জায়গা। বোটে প্যাডল করতে করতে জল এ ফোঁড় ও ফোঁড় করা বা টয় ট্রেনে কয়েক চক্কর মারা। তার সঙ্গে বাগানে বসে একটু জিরিয়ে নেওয়া, স্লিপে সাঁ করে নেমে যাওয়া না, এ সবের বেশিরভাগই নেই। থাকলেও অচল। পার্ক নিয়ে মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা শ্রাবন্তী সাহার অভিযোগ, “ছেলের আবদার পার্কে টয়ট্রেন চড়বে, বোটিং করবে। কিছুই তো হল না। বাড়ির সামনের মাঠেই এখন ছেলে খেলে। পার্কে যেতেও চায় না।” স্থানীয় বাসিন্দা সৌরভ চক্রবর্তীর কথায়, “বোটিং, টয় ট্রেন ছেড়েই দিলাম। স্লিপ, দোলনাও ভেঙে পড়েছে অনেক জায়গায়। সে দিকে যে কেন নজর দেওয়া হয় না, জানি না।”
সমস্যার কথা স্বীকার করে মেদিনীপুরের ডিএফও বিজয় সালিমত বলেন, “পার্কগুলি থেকে যে আয় হয় তা দিয়ে শুধু পার্ক পরিচ্ছন্ন রাখ যায়। কিন্তু সংস্কার বা নতুন কিছু সংযোজন অসম্ভব। এবার সাতটি পার্কের জন্য প্রায় ১ কোটি টাকার প্রকল্প তৈরি করে সরকারকে দিয়েছি।” পার্ক নিয়ে পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের বন ও ভূমি স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ কাজী আব্দুল হামিদও। তাঁর কথায়, “ক্ষুদিরাম পার্কে বোটিং চালানোর পাশাপাশি পার্কটি আরও সম্প্রসারণ করা হবে। অন্য পার্কগুলিকেও মানুষের কাছে আকর্ষণীয় করতে বৈঠক ডাকব।”
বৈঠকের পরেই অবশ্য জানা যাবে পার্কগুলি নিয়ে কী পরিকল্পনা নিল প্রশাসন। না কি শহরের পার্কের ছবি একই থাকবে। এর উত্তর অবশ্য দেবে সময়ই।
ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy