Advertisement
০১ মে ২০২৪
Alcohol Sale

সুরা বিক্রিতে লক্ষ্য ‘সেঞ্চুরি’

এক আবগারি কর্তা মনে করাচ্ছেন, পুজোয় কোনও ‘ড্রাই-ডে’ নেই। বছর কয়েক আগেই এই নীতি নিয়েছে রাজ্য সরকার। এ বারও তা বহাল রয়েছে।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২৩ ০৬:০৫
Share: Save:

চলতি মাস তথা অক্টোবর হল উৎসবের মাস। উৎসবের মাসে অর্থাৎ চলতি মাসে এবং তার কিছুদিন আগে-পরে মিলিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরে মদ বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকার! এক জেলায়, এক মাসে, এত বিপুল টাকার মদ বিক্রি সম্ভব? একাংশ আবগারি কর্তার মতে, এই লক্ষ্যপূরণ সম্ভব!

এক আবগারি কর্তা মনে করাচ্ছেন, পুজোয় কোনও ‘ড্রাই-ডে’ নেই। বছর কয়েক আগেই এই নীতি নিয়েছে রাজ্য সরকার। এ বারও তা বহাল রয়েছে। এতে খুশি সুরাপ্রেমীরা! একাংশ আবগারি কর্তা মনে করাচ্ছেন, যত মদ বিক্রি হবে, ততই সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। ক’বছর ধরেই কর্পোরেট কায়দায় বছরের শুরুতে কোন জেলায়, কত পরিমাণ মদ বিক্রি করা যাবে, কত আয় হবে, তার একটা পরিকল্পনা ছকে ফেলে আবগারি দফতর। জেলাওয়াড়ি আবগারি রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রাও ধার্য করা হয়। এরপর জেলা আবগারি দফতর লাইসেন্সপ্রাপ্ত দোকানদারদের মধ্যে সেই লক্ষ্যমাত্রা ভাগ করে দেয়।

চলতি বছরে (২০২৩-’২৪) এই লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে ৯৮০ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা! জানা গিয়েছে, এর মধ্যে সেপ্টেম্বরে মদ বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৯ কোটি ৬২ লক্ষ টাকা, অক্টোবরে রয়েছে ৮৭ কোটি ৯ লক্ষ টাকা, নভেম্বরে রয়েছে ৮২ কোটি ১১ লক্ষ টাকা, ডিসেম্বরে রয়েছে ৭৮ কোটি ৪২ লক্ষ টাকা। কয়েক বছর আগেও অবশ্য জেলায় এত মদ বিক্রি হত না। তখন এমন লক্ষ্যমাত্রাও থাকত না। ২০১৮-’১৯ সালে যেমন এ জেলায় মদ বিক্রি হয়েছিল ২৭৩ কোটি ১২ লক্ষ ৩৩ হাজার টাকার। এক আবগারি কর্তার কথায়, ‘‘কোন জেলায় কত পরিমাণ মদ বিক্রি করা হবে, কত আয় হবে, তার একটা প্রাথমিক পরিকল্পনা বছরের শুরুতেই করে নেওয়া হয় এখন।’’ জানা গিয়েছে, এ বারও পুজোর সময় ‘ড্রাই-ডে’ নেই। তবে কোনও মদ বিক্রেতা চাইলে, অষ্টমী এবং দশমীর দিন দোকান বন্ধ রাখতে পারেন। তবে সেটা অনুমতি সাপেক্ষে। অনুমতি নিতে হবে আবগারি দফতর থেকে। মদ বিক্রির ক্ষেত্রে পশ্চিম মেদিনীপুরে আবগারির চারটি রেঞ্জ রয়েছে। যথাক্রমে মেদিনীপুর (সদর), খড়্গপুর, ঘাটাল এবং বেলদা। আর সার্কেল রয়েছে ১৩টি। এর মধ্যে মেদিনীপুর (সদর) রেঞ্জের মধ্যে রয়েছে তিনটি সার্কল। যথাক্রমে মেদিনীপুর (সদর), শালবনি এবং গোয়ালতোড়। খড়্গপুর রেঞ্জের মধ্যে রয়েছে চারটি সার্কল। যথাক্রমে খড়্গপুর শহর, খড়্গপুর গ্রামীণ, ডেবরা এবং সবং। ঘাটাল রেঞ্জের মধ্যে রয়েছে তিনটি সার্কল। যথাক্রমে ঘাটাল, চন্দ্রকোনা এবং গড়বেতা। বেলদা রেঞ্জের মধ্যেও রয়েছে তিনটি সার্কল। যথাক্রমে বেলদা, নারায়ণগড় এবং দাঁতন। গত সেপ্টেম্বরে জেলায় ৭৪ কোটি ১২ লক্ষ টাকার মদ বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ, লক্ষ্যমাত্রার ৯৩ শতাংশ পূরণ হয়েছে। জানা গিয়েছে, চারটি সার্কেলে মদ বিক্রি তুলনায় কম হয়েছে। ঘাটাল, গড়বেতা, খড়্গপুর শহর এবং সবংয়ে। ঘাটালে লক্ষ্যমাত্রার ৭৯ শতাংশ, গড়বেতায় ৯০ শতাংশ, খড়্গপুর শহরে ৮৬ শতাংশ, সবংয়ে ৮৮ শতাংশ পূরণ হয়েছে। আবার চারটি সার্কলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি মদ বিক্রি হয়েছে। মেদিনীপুরে (সদর) ১০৬ শতাংশ, বেলদায় ১১৩ শতাংশ, নারায়ণগড়ে ১১২ শতাংশ, দাঁতনে ১০১ শতাংশ। জানা গিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেলায় মদ বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৮৪ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা। সেখানে মদ বিক্রি হয়েছে ৪৭৪ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকার।

জানা গিয়েছে, পশ্চিম মেদিনীপুরে সরকার অনুমোদিত মদের দোকান ছিল ৩২৮টি। নতুন করে আরও চারটি অন-শপ চালুর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। মদ বিক্রি করে রাজস্ব আদায় ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোরও। বিজেপির রাজ্য নেতা তুষার মুখোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূল সরকারের আমলে চপশিল্প আর মদশিল্প ছাড়া কিছুই হয়নি! এখানে রাজকোষ ভরাতে বিয়ার, হুইস্কি, রামই ভরসা!’’ তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক প্রদ্যোত ঘোষের দাবি, ‘‘বেআইনি জাল মদের কারবারে রাশ টানতে প্রশাসন সচেষ্ট।’’ আবগারি দফতর সূত্রেরও দাবি, জাল মদে রাশ টানা গিয়েছে। তাই বৈধ মদের বিক্রি বেড়েছে অনেকটাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

midnapore festive season
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE