জলে নোংরা
মেদিনীপুরে পুরসভার টাইম কলের জলের প্রায়ই নোংরা ভেসে আসে বলে অভিযোগ। কখনও কখনও কল থেকে ঘোলাটে জলও পড়ে। এই অভিযোগে দিন কয়েক আগেই শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রাজারপুকুর এলাকার একাংশ বাসিন্দা পুরসভায় স্মারকলিপি জমা দেন। মেদিনীপুরের পুর- পারিষদ (জল) মৌ রায়ের দাবি, “মাঝেমধ্যেই পাইপ লাইনে নোংরা জমে যায়। নোংরা জমে গেলে জল ঘোলাটে হয়। তখন ওই পাইপ লাইনগুলো পরিষ্কার করতে হয়।” খড়্গপুরেও টাইম কলের জলে পোকা থাকার অভিযোগও মিলেছে। শহরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ইন্দুভূষণ সাহা বলেন, ‘‘বাড়ির সামনে টাইম কলে সকালে ঘোলা জল আসে। এই জল খেয়ে পেটের অসুখ হচ্ছে অনেকেরই। পুরসভার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।’’
নেই পরীক্ষাগার
মেদিনীপুর শহরে সরবরাহ করা জল পানের উপযুক্ত কিনা, তা দেখার জন্য নিয়মিত পরীক্ষা করা হয় না বলে শহরের বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ। মেদিনীপুর পুরসভার পৃথক ভাবে জল পরীক্ষার পরিকাঠামো নেই। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের এই পরিকাঠামো রয়েছে। জলের মান দেখার জন্য পুরসভাকে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের উপরেই নির্ভর করতে হয়। মেদিনীপুরের উপ-পুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাস বলেন, “জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর মাঝেমধ্যেই জল পরীক্ষা করে। শহরে আর্সেনিকের সমস্যা নেই। নোংরা জল সরবরাহ হওয়ার খবর এলেই দ্রুত পদক্ষেপ করা হয়।” খড়্গপুর পুরসভারও নিজস্ব জলের পরীক্ষাগার নেই।
নালার পাশেই কল
মেদিনীপুর ও খড়্গপুর দুই শহরেই পানীয় জলের অনেক ট্যাপ কল রয়েছে নিকাশি নালার পাশে। ফলে বাধ্য হয়ে নিকাশি নালার পাশে দাঁড়িয়েই পানীয় জল নিতে হয়। নালার জল থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কাও রয়েছে। শহরের বাসিন্দাদের দাবি, রাস্তায় ট্যাপকলগুলির চারিদিক বাঁধিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করুক পুরসভা। অনেক ক্ষেত্রে রাস্তার থেকে নীচে ট্যাপ কল থাকায় নোংরা জলে কল ডুবে যায় বলেও অভিযোগ। রাস্তার একটু উপরে ট্যাপ কল বসানো হোক, এমনটাও দাবি করছেন অনেকে।
জোগানে ঘাটতি
খড়্গপুর শহরে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ লোকের বাস। দৈনিক জলের চাহিদা প্রায় চার মেগা গ্যালন। যদিও নদীভিত্তিক জলোত্তোলন প্রকল্পের মাধ্যমে জলের চাহিদা সম্পূর্ণ পূরণ করা সম্ভব হয় না। শহরের দ্বিতীয় জল প্রকল্পের কাজ এখনও শেষ হয়নি। ফলে জলের সমস্যা মেটেনি বলে অভিযোগ। মেদিনীপুর শহরেও দৈনিক ১৮.২ মিলিয়ন লিটার জল সরবরাহ করা হয়। যদিও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপর্যাপ্ত বলে অভিযোগ। শহরে দু’টি পাম্প হাউস রয়েছে। একটি রাঙামাটিতে, অন্যটি নজরগঞ্জে। রাঙামাটি থেকে ৫.৭ মিলিয়ন লিটার এবং নজরগঞ্জ থেকে ৫.৫ মিলিয়ন লিটার জল পাওয়া যায়। বাকি জল গভীর নলকূপের মাধ্যমে তোলা হয়। মেদিনীপুরের উপ-পুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাসের আশ্বাস, “মেদিনীপুরে ২০০ কোটি টাকার নতুন জলপ্রকল্প চালু হলে দৈনিক ৪২ মিলিয়ন লিটার জল সরবরাহ করা সম্ভব হবে। তখন আর জলের সমস্যা থাকবে না।”
পুকুরই ভরসা
পর্যাপ্ত জল আসে না। তাই খড়্গপুর শহরের রেল এলাকার বাসিন্দারা বাধ্য হয়ে পুকুর, ডোবার জল বাসন মাজা, কাপড় কাচার মতো দৈনন্দিন নানা কাজে ব্যবহার করেন। শহরের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিধাননগরের রেলবস্তির বাসিন্দা রেনু মাইতি, তারাপদ লাহা, বুলু পণ্ডিতেরা বলেন, ‘‘পুরসভার টাইম কলে যে জল আসে তা দিয়ে পানীয় জলের চাহিদা মেটে। তবে বাড়ির যাবতীয় কাজের জন্য ডোবার জলই ভরসা।’’ তাঁদের কথায়, ‘‘নোংরা রয়েছে জেনেও সেই জল বাধ্য হয়ে ব্যবহার করতে হচ্ছে। প্রায়ই পেটের গোলমালে আমাদের হাসপাতালেও ছুটতে হয়। কী করব!”
মাত্রাছাড়া লোহা
খড়্গপুর শহরের আয়মা, নিমপুরা, রাজগ্রাম, খরিদা, ট্রাফিক, ইন্দার খাসপাড়া, সাউথ ডেভেলপমেন্ট, রবীন্দ্রপল্লিতে গভীর নলকূপের জলে লোহার পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত বলে অভিযোগ। স্থানীয়দের অভিযোগ, লোহা বেশি থাকায় জল কিছুক্ষণ রাখার পরেই লালচে হয়ে যায়। এলাকায় পুরসভার টাইমকলের জল আসে না। তাই বাধ্য হয়ে লোহামিশ্রিত জলই পান করতে হয়। খরিদার বাসিন্দা শান্তি রজক, গোপাল দাস বলেন, “জলে লোহার ভাগ বেশি। সেই কারণে টাইম কলের মুখে কাপড় জড়িয়ে রাখি। পরিবারের প্রত্যেকেই পেটের অসুখে ভুগছেন। আমরা ভয়েই থাকি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy