দুর্নীতিতে নাম জড়াল শুভেন্দুর। — ফাইল চিত্র।
রাজ্যে নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত বিরোধী দলনেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীও। বৃহস্পতিবার আদালত চত্বরে এমনই অভিযোগ তুলেছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ২০১১-১২ সালের সময়কাল উল্লেখ করেই শুভেন্দুকে নিশানা করেছেন জেলবন্দি পার্থ। গত বছর ডিসেম্বরে এ প্রসঙ্গে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে তদন্ত চেয়ে হাই কোর্টে মামলাও হয়েছিল। যদিও সেই মামলা পত্রপাঠ খারিজ করেছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ সূত্রে খবর, ২০০৯ সালে বাম আমলেই জেলায় ৩,৯২৪ জন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল। তবে চাকরি প্রার্থীদের আন্দোলনের জেরে তখন নিয়োগ হয়নি। ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পরই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়। তৎকালীন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ সভাপতি গোপালচন্দ্র সাহুর দাবি, ‘‘নিয়ম মেনে পরীক্ষা নিয়েই নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছিল।’’ একসময় তৃণমূল শিক্ষা সেলের জেলা সভাপতি পদে থাকা গোপাল বলছেন, ‘‘যিনি এ সব বলছেন, আগে নিজের অবস্থা দেখুন। আমি তখন সংসদ সভাপতি ছিলাম। সম্পূর্ণ স্বচ্ছভাবেই নিয়োগ হয়েছিল।’’
তবে পার্থের সুরেই জেলা সিপিএমের সম্পাদক নিরঞ্জন সিহির অভিযোগ, ‘‘চাকরিপ্রার্থীদের থেকে ৬ লক্ষ টাকা করে ঘুষ নেওয়া হয়েছিল। তৎকালীন জেলা পরিষদের সহ-সভাপতি মামুদ হোসেনের মাধ্যমে সেই টাকা নেন শুভেন্দু।’’
শুধু শিক্ষক নিয়োগ নয়, শুভেন্দু মন্ত্রী থাকাকালীন সেচ ও পরিবহণ দফতরেও বেআইনি নিয়োগের অভিযোগ রয়েছে। এই মর্মে চঞ্চল নন্দী এবং রাখাল বেরা নামে দু’জনের বিরুদ্ধে কলকাতায় অভিযোগও দায়ের হয়েছিল। তাঁদের শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠ বলে দাবি করেছিল তৃণমূল। হাই কোর্টের নির্দেশে দু’জনেই আপাতত জামিনে রয়েছেন।
২০১৪ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত মালদহ ও উত্তর দিনাজপুরের তৃণমূলের পর্যবেক্ষক ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। এই সময়ের মধ্যে ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে প্রাথমিকে নিয়োগে ওই দুই জেলায় হয়েছে। অভিযোগ, মেদিনীপুরের বহু যুবক-যুবতীর নিয়োগ এই জেলায় করে পরে তাঁদের বদলি করে মেদিনীপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। শুভেন্দুর বিরুদ্ধে পঞ্চায়েত ভোটে টিকিট বিলি থেকে টাকার বিনিময়ে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে পদ বিলিরও অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের অন্দরে।
এ দিন পার্থের মন্তব্যের পর রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে তৃণমূল-বিজেপির। দক্ষিণ কাঁথির বিজেপি বিধায়ক অরূপ দাসের মন্তব্য, ‘‘যে সময়কার কথা বলা হচ্ছে তখন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন ব্রাত্য বসু। আর পার্থ চট্টোপাধ্যায় মন্ত্রিসভার দু'নম্বর সদস্য। এতদিন বাদে কেন উনি মুখ খুললেন?’’ তৃণমূলের বিধায়ক তথা দলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তরুণ মাইতির পাল্টা বক্তব্য, ‘‘আসলে তদন্ত হলে যদি শুভেন্দু ধরা পড়ে যান তাই ‘এতদিন বাদে’র অজুহাত খাড়া করা হচ্ছে। জেলায় সবাই জানেন কী ভাবে ২০১১-১২ সালে প্রাথমিক স্কুলগুলিতে শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছিল।’’
তৃণমূলে থাকাকালীন মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া-সহ জঙ্গলমহলেও চাকরি দেওয়া নিয়ে স্বজনপোষণের অভিযোগ ওঠে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে। মেদিনীপুরের এক সমবায় ব্যাঙ্কে এমন কয়েকজনের চাকরি হয়, যাঁরা তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী হিসেবে পরিচিত। তখন ওই ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান ছিলেন শুভেন্দুই। তিনি বিজেপি-তে যাওয়ার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও অভিযোগ করেছেন, ‘‘মেদিনীপুরের চাকরি কী ভাবে নিয়ে গিয়েছ, আমরা জানি। দাদামণি, আপনি যাদের চাকরি দিয়েছিলেন, তাঁদের চাকরি থাকবে তো? ওদের ধরবে না সিবিআই?’’
শুভেন্দু অবশ্য এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে একাধিকবার দাবি করেছেন, মুখ্যমন্ত্রী যদি প্রমাণ করতে পারেন, তাহলে তিনি রাজনীতি থেকে অবসর নেবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy