Advertisement
০৫ মে ২০২৪

শিশুর পেটে মিলল সাত মাসের ভ্রূণ

সাড়ে চার বছরের শিশুর পেটে অস্ত্রোপচার করে মিলল প্রায় সাত মাসের একটি পরিপুষ্ট ভ্রূণ। রবিবার রাতে ঝাড়গ্রাম শহরের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে রাকেশ গোয়ালা নামে ওই শিশুর সফল অস্ত্রোপচার করেন চিকিত্‌সকরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৫ ০১:৩০
Share: Save:

সাড়ে চার বছরের শিশুর পেটে অস্ত্রোপচার করে মিলল প্রায় সাত মাসের একটি পরিপুষ্ট ভ্রূণ। রবিবার রাতে ঝাড়গ্রাম শহরের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে রাকেশ গোয়ালা নামে ওই শিশুর সফল অস্ত্রোপচার করেন চিকিত্‌সকরা। অস্ত্রোপচারের পরে বিনপুরের খড়িকাবাদ গ্রামের রাকেশের অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানিয়েছেন চিকিত্‌সকরা।

রাকেশের বাবা অমল গোয়ালা দিনমজুরি করে সংসার চালান। রাকেশ মাতৃহারা। রাকেশ জন্মানোর চার মাস পরে টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে তার মা গীতাদেবীর মৃত্যু হয়। মাস ছ’য়েক আগে রাকেশের পেটের উপরের ডান দিকে শক্ত ফোলা ভাব লক্ষ্য করেন অভিভাবকরা। রাকেশকে স্থানীয় কুই গ্রামের এক হোমিওপ্যাথি চিকিত্‌সকের কাছে নিয়ে যান অমলবাবু। কিন্তু হোমিওপ্যাথি ওষুধে কাজ দেয়নি। কিছুদিনের মধ্যে ফোলা ভাব ও ব্যথা বাড়তে থাকে। এরপর অসহ্য ব্যথা শুরু হওয়ায় গত ১ অক্টোবর রাকেশকে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় ‘উন্নততর চিকিত্‌সার জন্য’ রাকেশকে এসএসকেএমে রেফার করে দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে অবশ্য ঝাড়গ্রামেরই একটি নার্সিংহোমে শিশুটির অস্ত্রোপচার হয়।

কী হয়েছিল রাকেশের? শল্যচিকিত্‌সক শীর্ষেন্দু গিরি জানাচ্ছেন, আলট্রাসোনোগ্রাফি ও সিটিস্ক্যান করে ধরা পড়ে রাকেশের পেটের মধ্যে ‘টেরাটোমা’ অর্থাত্‌ একটি জন্মগত টিউমার রয়েছে। রবিবার সন্ধ্যায় অস্ত্রোপচার করে পেটের মধ্যে একটি থলির ভিতরে থাকা প্রায় সাত মাস বয়সী মৃত ভ্রূণটি সফল ভাবে কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে। ওই ভ্রূণের হাত, পা, চুল, পাকস্থলী, অন্ত্র ও পুরুষাঙ্গও তৈরি হয়ে গিয়েছিল। শল্যচিকিত্‌সক শীর্ষেন্দু গিরি ও অ্যানেস্থেটিস্ট প্রসূন ঘোষের নেতৃত্বে রবিবার রাত ৮টা থেকে টানা দু’ঘন্টা অস্ত্রোপচার চলে। পেটের ভিতর এ ধরনের ভ্রূণ বেড়ে ওঠার উপসর্গটিকে চিকিত্‌সাশাস্ত্রে বলা হয়, ‘ফিটাস ইন ফিটু’। এ ক্ষেত্রে রাকেশের মায়ের গর্ভে যমজ সন্তানের একটি ভ্রূণের ভিতর আর একটি ভ্রূণের বিকাশ হয়েছিল। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, পাঁচ লক্ষ শিশুর মধ্যে একজনের এই উপসর্গ হতে পারে।

রাকেশের বাবা অমলবাবুর কথায়, ‘‘দিন আনি দিন খাই। ছেলেকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার মতো আর্থিক সঙ্গতি নেই। পরিচিত জনের মাধ্যমে ছেলেকে স্থানীয় একটা বেসরকারি নার্সিংহোমে নিয়ে যাই। সেখানকার চিকিৎসকরাই অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন।”

নার্সিংহোমের মালিক বুলবুল মাহাতো বলেন, “ওই বালকটির পরিবারের রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্যবিমা যোজনার কার্ড রয়েছে। কিন্তু আমাদের বেসরকারি নার্সিংহোমে ওই কার্ডের বিনিময়ে চিকিত্‌সা পরিষেবার সুবিধা নেই। মানবিকতার খাতিয়ে আমরা অস্ত্রোপচারের খরচ মকুব
করে দিয়েছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE