কেরানিতলা থেকে নান্নুরচকের রাস্তা।ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
যানজট রুখে শহরের গতি বাড়াতে ফুটপাথ তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে তড়িঘড়ি। কিন্তু সে কাজের বহর দেখে তাজ্জব মেদিনীপুরের বাসিন্দারা। কোথাও রাস্তার দু’ধার উঁচু করে তৈরি হয়েছে ফুটপাথ, কোথাও রাস্তার সমতলেই তৈরি হচ্ছে ফুটপাথ। সেখানে দাঁড়িয়ে আছে টোটো, লরি। ফুটপাথ দখল করে চলছে দোকান। জবরদখলকারীরা যেমন ছিলেন তেমনই আছেন।
কেরানিতলা থেকে সুইমিং ক্লাব হয়ে নান্নুরচক পর্যন্ত রাস্তার কথা ধরা যাক। রাস্তার সমতলে দু’পাশে প্রায় পাঁচ ফুট জায়গায় বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে লাল-হলুদ ইটের টালি। এটিই নাকি ফুটপাথ। আগে যে ভাবে রাস্তার ধারে লরি বা অন্যান্য গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকত, এখন সে ভাবেই ফুটপাথে দাঁড়িয়ে থাকছে। আগে রাস্তার ধারেই ফাস্ট ফুডের দোকান বসত বিকেল হলে। এখন তারা বসছে ঝাঁ চকচকে ফুটপাথের উপর।
আবার কেরানিতলা থেকে জজকোর্টের রাস্তাতেও ফুটপাথ হচ্ছে উঁচু করে। কিন্তু সেখানেও বসছে দোকান। ফুটপাথের উপরেই মোটর বাইক রেখে কেনাকাটা করছেন সাধারণ মানুষ। ফুটপাথের একটা বড় অংশ ঢেকে রাখছে দোকানের ছাউনি। মাঝে মধ্যেই টেলিফোন বা বিদ্যুতের খুঁটিও রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ফুটপাথ তৈরি হচ্ছে কোটি কোটি টাকা খরচ করে, অথচ জবরদখলকারীদের এক চুলও সরানো হয়নি। বরং যেখানে যতটুকু জায়গা মিলেছে সেখানেই তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে ফুটপাথ। জায়গা না-পাওয়া গেলে ফুটপাথও হচ্ছে না।
তা হলে মানুষ চলবেন কোন পথে? রাস্তার জায়গা তো কমল বৈ বাড়ল না। এমন ফুটপাথের প্রয়োজনটা কী?মুখ্যমন্ত্রী নিজে যেখানে জবর দখলকারীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করছেন সেখানে কেন তাদের উচ্ছেদ করা গেল না?
পুরপ্রধান প্রণব বসুর জবাব, “যেখানে যেমন জায়গা মিলেছে, সেখানে সে ভাবেই ফুটপাত তৈরি করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী তো নতুন জবর দখলকারীদের কথা বলেছেন। পুরনোদের তুলব কী করে?”
দু’ধাপে প্রায় ৯ কিলোমিটার রাস্তার দু’দিকে ফুটপাত তৈরির অনুমোদন মিলেছিল মেদিনীপুর শহরে। প্রথম দফায় কেরানিতলা থেকে জজকোর্ট হয়ে নতুনবাজার এবং গোলকুঁয়াচক থেকে বটতলাচক, কেরানীতলা হয়ে উড়ালপুল পর্যন্ত ফুটপাত তৈরির অনুমোদন ছিল। দ্বিতীয় দফায় অনুমোদন মিলেছিল ধর্মা থেকে গোলকুঁয়াচক, কালেক্টরেট মোড়, এলআইসি চক, পঞ্চুরচক হয়ে কেরানিতলা পর্যন্ত ও স্টেডিয়াম রোড অর্থাৎ গাঁধী স্ট্যাচু থেকে নান্নুরচক পর্যন্ত। সব মিলিয়ে প্রায় ৫ কোটি টাকা মঞ্জুর করে সরকার।
প্রথমে সিদ্ধান্ত হয়, রাস্তা ও তার দু’দিকে গার্ডওয়াল মিলিয়ে ৫ ফুট জায়গার উপর ফুটপাত তৈরি হবে। হকারদেরও কিছুটা পিছিয়ে দেওয়া হবে। কাজ শুরু হতেই দেখা গেল, সে সব কিছুই হচ্ছে না। স্থানীয় স্বপন পালের প্রশ্ন, “হকাররা তো আগের মতোই থাকছে। তাঁদের জায়গা ছেড়েই তৈরি হচ্ছে ফুটপাথ। তা হলে লাভটা কী হল? রাস্তা তো আরও কমে গেল!” প্রদীপ আদকের কথায়, “আগে রাস্তায় গ্যারাজের লোকজন গাড়ি রেখে সারাত। এখন সে কাজ চলছে ফুটপাথে। আমাদের রাস্তা দিয়েই হাঁটতে হবে। যানজট কমবে কী করে?”
একই অভিযোগ তুলছেন কংগ্রেস কাউন্সিলর সৌমেন খানও। তাঁর কথায়, “খরচ করে ফুটপাথ বানাল পুরসভা, অথচ মানুষ হাঁটতে পারলেন না। লাভটা কী হল। প্রশ্নটা আমরাও তুলেছিলাম। পুরসভা শুনল না।” পাশাপাশি তিনি প্রশ্ন তুলেছেন জবর দখলকারীদের নিয়ে পুরসভার নরম মনোভাব নিয়েও। পুরপ্রধান যদি বলেন, উচ্ছেদ করব কী করে, তা হলে তো প্রতিদিনই নতুন করে ফাঁকা জায়গা বেদখল হবে।
হচ্ছেও তাই। আগে স্টেডিয়ামের রাস্তার দু’দিক ফাঁকাই ছিল। এখন সেখানে দু’পাশে একাধিক দোকান গজিয়েছে। কলেজ ও কলেজিয়েট স্কুলের পাশের অংশেও একই অবস্থা। হকারদের পুনর্বাসনের জন্য এখনি হকার মার্কেট না তৈরি করলে তো ভবিষ্যতে ভয়ঙ্কর বিপদের মধ্যে পড়তে হবে। বারবার ডিভাইডার ভাঙা ও রঙ করার মতো কোটি কোটি টাকা খরচ করে তৈরি ফুটপাতও আবার নতুন করে ভেঙে গড়তে হবে। তা সত্ত্বেও গুরুত্বপূর্ণ এই কাজটিও কেন পরিকল্পনা মাফিক হচ্ছে না। পুরপ্রধান বলেন, “হকার মার্কেট নিয়ে পরে চিন্তাভাবনা করব।” অভিযোগ, পুরসভার এই উদাসীনতাই শহর একদিন অবরুদ্ধ হয়ে উঠবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy