অভাবের সংসারে বিষ্ণুপদ রায়ের মা রাজবালাদেবী মুড়ি ভেজে ছেলের পড়াশোনার খরচ জোগাতেন। আর বিষ্ণুবাবু স্বপ্ন দেখতেন, একদিন মায়ের নামে নিজের স্কুলে গ্রন্থাগার গড়বেন। কারণ, স্কুলে কোনও গ্রন্থাগার ছিল না। অবশেষে দীর্ঘ সাড়ে ছয় দশক পরে স্বপ্ন সফল হতে চলেছে আশি ছুঁই ছুঁই বিষ্ণুপদবাবুর। ঝাড়গ্রামের এই বর্ষীয়ান সমাজসেবীর উদ্যোগে ঝাড়গ্রাম শহরের ননীবালা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ‘রাজবালা রায় স্মৃতি পাঠাগার’টি চালু হতে চলেছে। আগামী ১৪ জুলাই এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। লক্ষাধিক টাকা খরচ করে বই ও আসবাবপত্র দিয়ে স্কুলের একটি ঘরে পুরোদস্তুর গ্রন্থাগার তৈরি করে দিচ্ছেন বিষ্ণুপদবাবু।
ননীবালা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অমৃতকুমার নন্দী বলেন, “আমাদের স্কুলে গ্রন্থাগারিক পদটাই নেই। সেই কারণে পুরোদস্তুর গ্রন্থাগার ছিল না। বিষ্ণুপদবাবুর এই উদ্যোগে আমরা অভিভূত।” কিন্তু গ্রন্থাগারটি চলবে কীভাবে? প্রধান শিক্ষক জানালেন, বিষ্ণুপদবাবুর পরিচিত দু’জন অবসরপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিক রাখহরি কুণ্ডু ও নিশিকান্ত মাইতি স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে গ্রন্থাগারটি চালাবেন। বিষ্ণুপদবাবুর উদ্যোগের কথা জানিয়ে স্থায়ী গ্রন্থাগারিক পদের জন্য শিক্ষা দফতরে আবেদন করা হবে।
বিষ্ণুপদবাবুর আদিবাড়ি লালগড়ে। অভাবের তাড়নায় অসুস্থ বাবা ও মায়ের হাত ধরে ১৯৫৫ সালে রুজির খোঁজে ঝাড়গ্রাম শহরে চলে আসেন। একটি ছিটেবেড়ার ঘরে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়। ১৯৫৭ সালে ননীবালা বিদ্যালয় থেকে স্কুল ফাইনাল পাস করার পরে পড়াশোনায় ইতি টানতে হয়। সংসার চালানোর জন্য খাদ্য দফতরে ৫৭ টাকা মাইনের পিওনের চাকরি জুটে যায়। নিজের যোগ্যতায় পরে করণিক থেকে খাদ্য দফতরের মুখ্য পরিদর্শক পদে উন্নীত হন। টাকার অভাবে কারও পড়াশুনা বন্ধ হতে বসেছে শুনলে স্থির থাকতে পারেন না তিনি। গত দু’দশক ধরে শতাধিক দুঃস্থ পড়ুয়াদের নিয়মিত উচ্চশিক্ষার জন্য খরচ জুগিয়েছেন।
নিজের স্থাবর-অস্থাবর যাবতীয় সম্পত্তি মায়ের নামে ট্রাস্ট গড়ে দান করেছেন এই ‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’। সেবামূলক এই ট্রাস্টে নিজের স্থাবর-অস্থাবর প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার সম্পত্তি দান করেছেন বিষ্ণুপদবাবু। খাদ্য দফতরের সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর ৭৯ বছর বয়সে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কের বিমা সংস্থায় এজেন্টের কাজ করছেন তিনি। এখন প্রতি মাসে নিজের পেনসন, বিমার কমিশন ও সঞ্চিত টাকার সুদের পুরোটাই খরচ হয়ে যায় রাজ্য ও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা দুঃস্থ পড়ুয়াদের উচ্চশিক্ষার জন্য।
এ বার লক্ষাধিক টাকার বই ও আসবাবপত্র দিয়ে স্কুলে গ্রন্থাগার তৈরি করে দিচ্ছেন বিষ্ণুপদবাবু। এ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “ঈশ্বর আমাকে সুযোগ দিয়েছেন। একশো বছর বেঁচে মানুষের জন্য কাজ করতে চাই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy