Advertisement
০৭ মে ২০২৪

এক দশকেও হয়নি প্রেক্ষাগৃহ

বিভিন্ন তহবিলে টাকা এসেছে বহুবার। নির্মাণকাজও এগিয়েছে অনেকটা। তবে এক দশক পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি বেলদায় প্রেক্ষাগৃহ গড়ার কাজ। বাম আমলে ২০০২ সালে স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতি শহরের শুসিন্দা এলাকায় এই প্রেক্ষাগৃহ গড়তে উদ্যোগী হয়েছিল।

অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে বেলদা প্রেক্ষাগৃহ। —নিজস্ব চিত্র।

অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে বেলদা প্রেক্ষাগৃহ। —নিজস্ব চিত্র।

দেবমাল্য বাগচী
বেলদা শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৫ ০০:৫০
Share: Save:

বিভিন্ন তহবিলে টাকা এসেছে বহুবার। নির্মাণকাজও এগিয়েছে অনেকটা। তবে এক দশক পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি বেলদায় প্রেক্ষাগৃহ গড়ার কাজ। বাম আমলে ২০০২ সালে স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতি শহরের শুসিন্দা এলাকায় এই প্রেক্ষাগৃহ গড়তে উদ্যোগী হয়েছিল। তারপর সাংসদ, বিধায়ক, বিআরজিএফ তহবিলে টাকা বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু কাজে সে ভাবে গতি আসেনি। ২০১৩ সালে তৃণমূল পঞ্চায়েত সমিতিতে ক্ষমতায় আসার পরে আশা ছিল দ্রুত কাজ শেষ হবে। কিন্তু এখনও প্রেক্ষাগৃহ পায়নি বেলদাবাসী। এ জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবকে দায়ী করেছে পঞ্চায়েত সমিতি।

পশ্চিম মেদিনীপুরের যাত্রা, নাটক, আবৃত্তি তথা সংস্কৃতি চর্চার অন্যতম ক্ষেত্র এই বেলদা। পাশের ব্লক কেশিয়াড়ি বা দাঁতনে সরকারি প্রেক্ষাগৃহ থাকলেও নারায়ণগড় ব্লকের সদর বেলদায় কিন্তু কোনও প্রেক্ষাগৃহ নেই। ফলে, ছোটখাট অনুষ্ঠানের জন্য অস্থায়ী মঞ্চই ভরসা। ঘিঞ্জি শহরে মঞ্চের জেরে যানজটও হয়। এলাকার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরাও চাইছিলেন একটা প্রেক্ষাগৃহ হোক। সেই মতো ২০০২ সালের ১৫ অগস্ট শুসিন্দার একটি জমিতে রাজ্যের তদানীন্তন মন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্র ওই প্রেক্ষাগৃহের শিলান্যাস করেন। নামকরণ করা হয় ‘ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত স্মৃতি সদন’। প্রেক্ষাগৃহ গড়তে প্রাথমিক পর্যায়ে আনুমানিক ৯৫ লক্ষ ৯১ হাজার ২৫০ টাকা খরচ ধার্য করে পঞ্চায়েত সমিতি। ২০০৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় দেড় কোটি টাকা। ২০০৫ সালের এপ্রিলে সাংসদ তহবিলের ২৪ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা পেয়ে কাজ শুরু হয়। পরে টাকা শেষ হয়ে গেলে ২০০৭ সালে ফের সাংসদ তহবিলে ২৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়। ওই বছরই বিধায়ক তহবিলেও ১৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু নির্মাণ কিছুটা এগোতেই বরাদ্দ টাকা ফুরিয়ে যাওয়ায় কাজ থমকে যায়।

২০১০ সালে ফের কাজের তোড়জোর শুরু হয়। ওই বছর সাংসদ তহবিলে ২৪ লক্ষ ও বিধায়ক তহবিলে ১৪ লক্ষ টাকা পাওয়া যায়। পরের বছর বিধায়ক তহবিলে পাওয়া যায় আরও ১৫ লক্ষ টাকা। ২০১২ সালে সাংসদ ৫০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়। এ ছাড়া ওই বছর বিআরজিএফ তহবিলে ৪৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে পঞ্চায়েত সমিতি। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত বরাদ্দ হয়েছে প্রায় ২ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা। রাজ্যে পালাবদলের পরে আবার প্রস্তাবিত প্রেক্ষাগৃহের নাম বদলে ‘বেলদা প্রেক্ষাগৃহ’ করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত প্রেক্ষাগৃহের মূল ভবন, মঞ্চ, গ্যালারি নির্মাণ হয়েছে। হয়েছে ছাউনি। তবে সীমানা পাঁচিল, আসন, অডিও সিস্টেম, দেওয়ালে কাঠের আস্তরণ-সহ নানা কাজ বাকি রয়েছে। বেলদার বাসিন্দা প্রবীণ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব যুগজিৎ নন্দ বলেন, ‘‘কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার ব্যাপারে আমাদের এলাকায় যে কী সমস্যা বোঝাতে পারব না। বাম আমলে প্রশাসন উদ্যোগী হওয়ায় আমরা আশার আলো দেখতে পেয়েছিলাম। কিন্তু এত বছরেও প্রেক্ষাগৃহ না হওয়ায় আমরা হতাশ।’’

দীর্ঘদিন ধরে কাজ বন্ধ থাকায় প্রেক্ষাগৃহের বাইরের অংশ রোদ, ঝড়, বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এখন নির্মাণকাজে আরও টাকা দরকার বলে জানিয়েছে পঞ্চায়েত সমিতি। ইতিমধ্যে জেলাশাসকের কাছে আবেদনও করেছেন তাঁরা। সীমানা পাঁচিল, কাঠের কাজ, রং-সহ নানা খাতে ২ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা প্রয়োজন বলে পঞ্চায়েত সমিতি জানিয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সনাতন মঙ্গল বলেন, ‘‘পরিকল্পনায় ত্রুটি ছিল। টাকার যে হিসেব দেওয়া হয়েছিল, তাতে প্রেক্ষাগৃহ বানানো সম্ভব নয়। আমরা টাকা চেয়ে জেলাশাসককে চিঠি দিয়েছি।’’

এ নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোরও। সিপিএমের প্রাক্তন জোনাল সম্পাদক তথা জেলা কমিটির সদস্য ভাস্কর দত্ত বলেন, ‘‘আমরা উদ্যোগী হয়ে অর্থের সংস্থান করে কাজ এগিয়েছি লাম। কখনও টাকার অভাব হয়েছিল। কিন্তু টাকা এলেই কাজ হয়েছে। ২০১১ সালের পর থেকে তৃণমূল পঞ্চায়েত সমিতিতে কাজে বাধা দেওয়া কাজ এগোয়নি। এখনও প্রেক্ষাগৃহ গড়তে পঞ্চায়েত সমিতির সদিচ্ছা দেখা যাচ্ছে না।’’ তৃণমূলের নারায়ণগড় ব্লক সভাপতি মিহির চন্দ বলেন, ‘‘বামেদের অপরিকল্পিত উদ্যোগের জন্য প্রেক্ষাগৃহের কাজ এগোয়নি। পঞ্চায়েত সমিতির পালাবদলের পরে কাজ শেষের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাই প্রেক্ষাগৃহের ছাউনি গড়ার সঙ্গে সীমানা পাঁচিলের কাজও চলছে। টাকা এলেই কাজ শেষ হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Belda cultural hall medinipur MLA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE