মেদিনীপুর ও ঘাটাল: বৃষ্টি কোথায়?, ভরদুপুরে আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললেন বৃদ্ধ চাষি।
‘‘আকাশে তো মেঘের দেখা নেই, উল্টে স্যালো চালিয়েও পরিস্থিতি সামলানো যাচ্ছে না। পাম্পের জল মাটির পড়তেই ‘ভ্যানিশ’। অনেকটা যেন ম্যাজিকের মতে। ধরণীর এতই জ্বালা।’’, বলছেন তিনি।
প্রায় এক বিঘা জমিতে এ বার সব্জি চাষ করেছিলেন শালবনির অমিয় পাল। তাঁর কথায়, ‘‘এক বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করতে প্রায় কুড়ি হাজার টাকা খরচ হয়েছে। গরমে পোকার উপদ্রবে ফসল নষ্ট হতে বসেছে। শুকিয়ে যাচ্ছে গাছের পাতাও।
একই বক্তব্য চন্দ্রকোনার কুঁয়াপুরের জীতেন নায়েকেরও। তিনি বলেন, “গরমে পুরো পাট শাকের খেত নষ্ট হতে বসেছে। এখনও সেচ দিয়ে ফসল বাঁচানোর শেষ চেষ্টা করছি। তবে কতদিন আর স্যালো পাম্প চালিয়ে চলবে। জল কিনতেও তো অনেক টাকা খরচ। বৃষ্টি হলে তবেই সমস্যা মিটবে।’’
ফুটিফাটা মাঠে শুকিয়ে যাচ্ছে ফসল। গাছের পাতা হলুদ হয়ে যাচ্ছে। বাড়ছে পোকার উপদ্রবও। এখন গ্রীষ্মকালীন সব্জি চাষের মরসুম। অনেক চাষিই জমিতে লাউ, বেগুন, কুঁদরি, শশা,ঝিঙে, চিচিঙ্গা, পটল-সহ বিভিন্ন সব্জি চাষ করেছেন। এ ছা়ড়া এখন মাঠে রয়েছে বোরো ধান, চিনা বাদাম, মুগ, তিল, সূর্যমুখী, ভুট্টার মতো ফসল। চলতি মরসুমে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ১ লক্ষ ৮৪ হাজার ১৯৮ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছিল। যার মধ্যে অবশ্য ২০ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়ে গিয়েছে। যদিও বেশিরভাগ জমিতে পড়ে রয়েছে ধান। গরমে ক্ষতি হচ্ছে ফসলের।
বিশেষজ্ঞদের মতে, একটানা বৃষ্টি না হওয়ায় শস্য দানা পুষ্ট হচ্ছে না। ফলে চাল লালচে রঙের ও সরু হবে। যা খাবার উপযোগী নয়। যে সময় থেকে শস্য পুষ্ট হওয়ার কথা, তখন থেকেই বৃষ্টির দেখা নেই। দিনে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড ছাড়িয়ে যাচ্ছে, রাতেও তাপমাত্রা সে ভাবে কমছে না। ফলে শস্য পুষ্ট হওয়ার সময় মিলছে না। শুধু সেচ দিয়ে এই সমস্যা মিটবে না। বৃষ্টি না হলে যে গতি নেই, তা মানছেন কৃষি দফতরের আধিকারিকরাও। চন্দ্রকোনার চাষি প্রলয় পালের কথায়, “আগে যে জমিতে সেচ দিতে ২ ঘণ্টা সময় লাগত, জলস্তর নেমে যাওয়ায় সেই জমিতে সেচ দিতে সাড়ে তিন ঘণ্টা লাগছে। সেচের খরচও প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি না হলে শুধু সেচের উপর নির্ভর করে বোরো চাষ করা কঠিন।”
সমস্যা মেটাতে উপায় কী?
কৃষি দফতরের আধিকারিকদের পরামর্শ, সঠিক উৎপাদন পেতে হলে নিয়মিত সেচ দিতে হবে। কিন্তু সেচ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রচণ্ড তাপে নিমেষে শুকিয়ে যাচ্ছে জমি। মাটির রস দ্রুত শুকিয়ে যাওয়ায় গাছের পাতা কুঁকড়ে যাচ্ছে। আবার মাঠে আগাছা জন্মালেও জলের অপচয় হবে। তাই গাছের গোড়ায় যাতে সরাসরি রোদ না পড়তে পারে সে জন্য শুকনো খড় বা ত্রিপল বিছিয়ে গাছের গোড়ার চারপাশের মাটি ঢেকে দেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে একদিকে যেমন দ্রুত মাটির রস শুকিয়ে যাবে না। তেমনই আগাছাও জন্মাবে না। কৃষি দফতরের সহকারী আধিকারিক (শস্য সংরক্ষণ) শুভেন্দু মণ্ডল বলেন, “যেখানে সেচের সুযোগ রয়েছে সেখানে পর্যাপ্ত সেচ দিতে হবে। আর দ্রুত যাতে মাটির রস না শুকিয়ে যায় সে জন্য খড় বা ত্রিপল দিয়ে মাটি ঢেকে দিতে পারলে ভাল হয়। নয়তো উৎপাদন কমার আশঙ্কা থেকেই যায়।”
জেলা উদ্যানপালন দফতরের আধিকারিক কুশদ্ধজ বাগ বলেন, “কমবেশি প্রায় সব ব্লক থেকেই চাষের ক্ষতির খবর আসছে। তবে ঝাড়গ্রাম মহকুমায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এখনও ক্ষয়ক্ষতির সঠিক হিসেব পাওয়া যায়নি।’’ কুশদ্ধজবাবু বলেন, “প্রকৃতির ওপর তো আমাদের কিছু করার নেই। বিষয়টি ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy