বিক্ষোভ: ডেবরা কলেজের গেট আটকে পড়ুয়াদের অবস্থান। নিজস্ব চিত্র
প্রথমে পরিচালন সমিতি ভেঙে প্রশাসক নিয়োগ। তার পরে কলেজ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের দুই ছাত্র গোষ্ঠীর সংঘর্ষ। এ বার কলেজ পরিচালন সমিতি গঠনে সরকারি প্রতিনিধি তালিকা ঘিরে উত্তেজনা ছড়াল ডেবরা কলেজে। সরকার মনোনীত প্রতিনিধিদের নাম বাতিলের দাবিতে অবস্থান-অনশনে বসলেন পড়ুয়ারা।
সোমবার সপ্তাহের প্রথম দিনেই পড়ুয়া বিক্ষোভের জেরে অচলাবস্থা দেখা দেয় ডেবরা শহিদ ক্ষুদিরাম মহাবিদ্যালয়ে। সকাল থেকেই কলেজের গেটে তালা দিয়ে অবস্থান-অনশনে বসেন পড়ুয়ারা। কলেজ পরিচালন সমিতি গঠনের জন্য সদ্য আসা সরকার মনোনীত প্রতিনিধি তালিকা ঘিরেই গোলমালের সূত্রপাত। ওই তালিকায় ডেবরার বিধায়ক সেলিমা খাতুনকে সভাপতি করতে বলা হয়েছে। নাম রয়েছে তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি রতন দে, গোলগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি শ্যামল মুখোপাধ্যায় ও নেতা শপথ দাসের। কিন্তু পড়ুয়াদের দাবি, কলেজ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত বছর এই সরকারি প্রতিনিধিরাই পড়ুয়াদের ওপর হামলা চালিয়েছিল। তাই ওই নামেপ তালিকা বাতিলের দাবিতে ‘কলেজের সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী বৃন্দ’ ব্যানারে অনশন-অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়। আন্দোলনে সামিল দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র দেবাশিস সামন্ত বলেন, “কলেজ ভোটের মনোনয়নের সময় পড়ুয়াদের উপর হামলায় এই সেলিমা খাতুন, রতন দে-সহ সরকারি প্রতিনিধি তালিকার চারজন জড়িত ছিলেন। তাঁরা যদি কলেজ পরিচালন সমিতিতে আসেন, তাহলে কলেজের ভবিষ্যৎ কী হবে!”
প্রায় দেড় বছর ধরে কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি পদ ঘিরে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে। আগে পরিচালন সমিতির সভাপতি ছিলেন তৃণমূলের জেলা যুব নেতা প্রদীপ কর। ২০১৬-এর নভেম্বরে নানা গরমিলের অভিযোগে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি কলেজ পরিদর্শনে আসে। এর পরেই কলেজ পরিচালন সমিতি ভেঙে মহকুমাশাসককে প্রশাসকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর পিছনে প্রদীপ-বিরোধী গোষ্ঠীর তৃণমূল নেতাদের কারসাজির অভিযোগ ওঠে। তার জেরে প্রদীপ-অনুগামী টিএমসিপির ব্লক সভাপতি সমর পালের সঙ্গে বিধায়ক সেলিমা খাতুনের অনুগামী তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি রতন দে-র গোলমাল বাধে। গত বছর ৬ জানুয়ারি ছাত্র সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দেওয়া নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কলেজ চত্বর। রতন দে-র অনুগামী ছাত্রদের সঙ্গে সমর পালের অনুগামী ছাত্রদের সংঘর্ষ পর্যন্ত হয়।
এ দিন গেট আটকে পড়ুয়াদের অবস্থানের জেরে কলেজে এসেও ঢুকতে পারেনি টিচার ইন-চার্জ-সহ ১৫ জন অধ্যাপক। ক্লাসও হয়নি। বিধায়ক সেলিমা খাতুন বলেন, “আমার নাম কলেজের সভাপতি হিসাবে সরকার পাঠিয়েছে। কিন্তু তাকে কেন্দ্র করে কলেজে কী হয়েছে জানা নেই।” আর তৃণমূলের ডেবরা ব্লকের নেতা রতন দে-র বক্তব্য, “সমর পালের ইন্ধনে কয়েকজন ছাত্র কলেজের গেট আটকে অনশন করছে। টিচার ইন-চার্জও প্রশ্রয় দিচ্ছে।” টিএমসিপির ব্লক সভাপতি সমর পাল অবশ্য বলেন, “গত বছর রতন দে, সেলিমা খাতুনদের উপস্থিতিতে পড়ুয়াদের হামলার প্রতিবাদ করেছিলাম। সেই রাগে আমাদের দিকে আঙুল তোলা হচ্ছে।”
কলেজের টিচার ইন-চার্জ সুতপা পালের বক্তব্য, “পরিচালন সমিতি গঠনে সরকারি প্রতিনিধি তালিকা এসেছে। ওই তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে, কিন্তু পড়ুয়ারা তাঁদের মানতে পারছেন না বলে অনশন-অবস্থান করছে। প্রশাসককে জানিয়েছি।” খড়্গপুরের মহকুমাশাসক তথা কলেজের প্রশাসক সুদীপ সরকার বলেন, “পড়ুয়াদের দাবি ঊর্ধ্বতন মহলে পাঠানো হবে। আশা করছি অবস্থান উঠে যাবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy