Advertisement
০৫ মে ২০২৪
কাল থেকে প্রশিক্ষণ রেলের

মোবাইল অ্যাপে টিকিট কাটতে হোঁচট

ট্রেনের অসংরক্ষিত টিকিট কাটার দুর্ভোগ এড়াতে মোবাইল অ্যাপ চালু করেছে রেল। কিন্তু দুর্ভোগ তাতেও! ক’দিন আগে খড়্গপুর স্টেশনে দাঁড়িয়ে স্মার্টফোনে ‘ইউটিএস’ অ্যাপ ডাউনলোড করছিলেন তালবাগিচার ব্যবসায়ী বিধান শীল।

দেবমাল্য বাগচী
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৬ ০১:০১
Share: Save:

ট্রেনের অসংরক্ষিত টিকিট কাটার দুর্ভোগ এড়াতে মোবাইল অ্যাপ চালু করেছে রেল। কিন্তু দুর্ভোগ তাতেও!

ক’দিন আগে খড়্গপুর স্টেশনে দাঁড়িয়ে স্মার্টফোনে ‘ইউটিএস’ অ্যাপ ডাউনলোড করছিলেন তালবাগিচার ব্যবসায়ী বিধান শীল। লাইনে দাঁড়ানোর ঝক্কি এড়িয়ে টিকিট কাটাই ছিল তাঁর লক্ষ্য। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও ওই অ্যাপ দিয়ে টিকিট কাটতে পারলেন না তিনি। শেষমেষ ছুটলেন টিকিট কাউন্টারে। সেখানে তখন লম্বা লাইন। বিরক্ত বিধান বলছিলেন, “ধুস! এই অ্যাপ দিয়ে একটা টিকিট কাটতে যা ঝক্কি, তার চেয়ে কাউন্টারে লাইন দিলে আগে টিকিট পাব। কী সব ওয়ালেট রিচার্জ করতে বলছিল। সে সব করতে গিয়েই তো দুর্ভোগ হল।”

অ্যাপে টিকিট কাটতে যাত্রীদের দুর্ভোগের কথা পৌঁছেছে রেলের কানে। তাই অ্যাপের কারিকুরি বোঝাতে বিভিন্ন স্টেশনে প্রশিক্ষণের বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। খড়্গপুর রেলের সিনিয়ার ডিভিশনাল কমার্শিয়াল ম্যানেজার কুলদীপ তিওয়ারি বলেন, “আগামী ৭ জুন থেকে ১৫ দিন ধরে বিভিন্ন স্টেশনে এই অ্যাপ সম্পর্কে যাত্রীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তা ছাড়া যাঁদের সমস্যা হচ্ছে তাঁরা টিকিট কাউন্টার ও অনুসন্ধান কেন্দ্রে যোগাযোগ করতে পারেন।’’

রেল কর্তারা এমন আশ্বাস দিচ্ছেন বটে, তবে বাস্তব ছবিটা কিন্তু আলাদা। ব্যস্ত সময়ে টিকিট কাউন্টার বা অনুসন্ধান কেন্দ্রে গিয়েও অনেকের সমস্যার সুরাহা হচ্ছে না। খড়্গপুর স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের এক কর্মী মানলেন, “আমাদের তো অনেক নিয়ম জানানো হয়। তবে ব্যস্ত সময়ে টিকিট কাউন্টারে বসলে মাথা তোলার সময় পাই না। অ্যাপ নিয়ে সমস্যার সমাধান করা সব সময় সম্ভব হয় না।”

দূরপাল্লার ট্রেনে আগেই অনলাইনে ই-টিকিট পরিষেবা চালু হয়েছে। পরে অ্যানড্রয়েড ও উইনডোজ মোবাইল অ্যাপেও মিলছে এই পরিষেবা। তাতে আগে শুধু সংরক্ষিত আসনের টিকিট কাটা যেত। কিন্তু এখন সব অপারেটিং সিস্টেমের স্মার্টফোনে ‘ইউটিএস অ্যাপ’ (আন-রিজার্ভড টিকিটিং সার্ভিস) নামে রেলের নতুন অ্যাপ ব্যবহার করে অসংরক্ষিত আসনের টিকিটও কাটা যাচ্ছে। শুধু সাধারণ ট্রেনের টিকিট নয়, সিজন টিকিট, প্ল্যাটফর্ম টিকিটও কাটা যাচ্ছে অ্যাপে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে রেলের খড়্গপুর ডিভিশনের হাওড়া-খড়্গপুর শাখায় স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা এই সুবিধা পাচ্ছেন। এই মোবাইল অ্যাপে ট্রেনের অসংরক্ষিত টিকিট কাটা যাবে। আগেই পূর্ব রেলের শিয়ালদহ ডিভিশনে চালু হয়েছিল এই ব্যবস্থা। পরে চাহিদা বুঝে খড়্গপুর ডিভিশনেও অ্যাপ চালু করা হয়। গত ২৮ মে থেকে ডিভিশনের খড়্গপুর-মেদিনীপুর, পাঁশকুড়া-হলদিয়া, হাওড়া-আমতা, সাঁতরাগাছি-শালিমার শাখাতেও মিলছে প্রযুক্তি সহায়ক এই পরিষেবা।

কিন্তু অ্যাপ ডাউনলোডের পরে টিকিট কাটার পদ্ধতি নিয়ে বিধান শীলের মতো অনেকেই হোঁচট খাচ্ছেন। টিকিট কাটার নিয়ম, টাকা দেওয়ার উপায় নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন। কিন্তু চটজলদি তার উত্তর মিলছে না। খড়্গপুরের খরিদার বাসিন্দা বাপ্পা দাস যেমন বলেন, “ইউটিএস অ্যাপে টিকিট কাটতে গেলেই ওয়ালেট রিচার্জ করতে বলছে। সেই রিচার্জ করতে গেলে ‘ডেবিট কার্ডে’র নম্বর চাইছে। আমি নেট ব্যাঙ্কিং পছন্দ করি না। এ ক্ষেত্রে রিচার্জের বিকল্প উপায় কী সেটা তো জানি না।”

তবে এই সমস্যা খুব বেশি যাত্রীর নয় বলেই রেল কর্তৃপক্ষের দাবি। কারণ, দিনে গড়ে সাড়ে তিন হাজার ট্রেন যাত্রী এই অ্যাপ ব্যবহার করে টিকিট কাটছেন। আর যাঁদের সমস্যা রয়েছে, তাঁদের জন্যই প্রশিক্ষণের বন্দোবস্ত করছেন রেল কর্তৃপক্ষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rail application train ticket
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE