নিজের ঘরের সামনে গোপীনাথ মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র
কয়েক বছর আগেও পান বরজে শ্রমিকের কাজ করতেন। কিন্তু বয়স বাড়ায় সে কাজে আর শরীর দেয় না। হাত-পা মাঝে মাঝেই অসাড় হয়ে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসার খরচ জোগাড়ে ভরসা সরকারি প্রকল্পে প্রতি মাসে পাওয়া ৪০০ টাকা বার্ধক্যভাতা। তবে গত ১০ মাস ধরে সেটাও বন্ধ। কারণ তিনি, মানে নন্দকুমারের শিবদত্তপুর গ্রামের বাসিন্দা ৬৭ বছরের গোপীনাথ মণ্ডল সরকারি খাতায় ‘মৃত’। ফলে সরকারি নিয়মেই মৃতের ভাতাও বন্ধ। বার্ধক্যভাতার প্রাপক তালিকা থেকে বাদ পড়েছে গোপীনাথের নাম। যদিও গ্রামে দিব্যি বাস করছেন তিনি।
বিষয়টি জানাজানির পর প্রশাসন নড়ে চড়ে বসলেও গ্রামের আর পাঁচ জনের কাছে একম আলোচনার খোরাক গোপীনাথ। অগত্যা নিজের বেঁচে থাকার প্রমাণ দিতে কিছুদিন আগে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সশরীরে বিডিওর কাছে আবেদনপত্র নিয়ে হাজির হয়েছিলেন গোপীনাথ। সব শুনে বিডিও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্মীর ভুলের জন্যই জীবন্মৃত গোপীনাথের পেনশন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তড়িঘড়ি গোপীনাথের পেনশন ফের চালু করতে শুরু হয়েছে প্রশাসনিক তৎপরতা।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ছেলে মিলন, বউমা সন্ধ্যারানি ও নাতি শুভেন্দুকে নিয়ে গোপীনাথের সংসার। বছর চারেক আগে মারা গিয়েছেন স্ত্রী। জমিজমাহীন পরিবারের ভরসা বলতে ছেলের দিনমজুরির আয়। পানের বরজে কাজ করেন ছেলে মিলন। ইন্দিরা আবাস যোজনায় বছর পাঁচেক আগে ঘর পেয়েছেন। ইন্দিরা গাঁধী জাতীয় বার্ধক্য ভাতা প্রকল্পে বছর সাতেক ধরে মাসিক ৪০০ টাকা ভাতা পাচ্ছিলেন গোপীনাথ। টাকার একটা বড় অংশ চলে যায় চিকিৎসায়। কিন্তু গত এপ্রিল মাস থেকে আচমকা ওই ভাতা বন্ধ হয়ে যায় বলে অভিযোগ। প্রথমে গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্যের কাছে ও পরে পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে পেনশন বন্ধের কারণ জানতে চেয়েছিলেন গোপীনাথ।
গোপীনাথের কথায়, ‘‘পেনশন বন্ধ হওয়া নিয়ে পঞ্চায়েত অফিসে গিয়েও সদুত্তর পাইনি। পরে বিডিও অফিসে খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারি আমি নাকি মরে গিয়েছি। মৃতকে পেনশন দেওয়া যায় না। তাই আমাপ পেনশনও বন্ধ হয়েছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘এমন কথা শুনে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। পরে ধাতস্থ হয়ে বিডিওর কাছে সব জানিয়ে ফের পেনশন পাওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছি।’’ প্রতিবেশী পূর্ণিমা মণ্ডল বলেন, ‘‘মাসদুয়েক আগে জানতে পারি, গোপীনাথাবু মৃত বলে তাঁর পেনশন বন্ধ করা হয়েছে। এই ঘটনায় বাসিন্দাদের অনেকেই ওঁকে নিয়ে ঠাট্টা, মশকরা করছেন।’’
প্রশাসন ও পঞ্চায়েত সূত্রে খবর, বার্ধক্য ভাতা প্রকল্পে ভাতাপ্রাপকদের জীবিত থাকার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষকে শংসাপত্র জমা দিতে হয়। এর জন্য প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসে পঞ্চায়েত কর্মীরা ভাতা প্রাপকদের পরিবারে গিয়ে খোঁজ নিয়ে ব্লক প্রশাসনকে রিপোর্ট জমা দেন। ভাতাপ্রাপকদের কারও মৃত্যু হলে পেনশন প্রাপকের তালিকা থেকে তাঁর নাম বাদ দেওয়া হয়। গোপীনাথবাবুর স্থানীয় কুমরচক পঞ্চায়েতের দেওয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে তাঁর পেনশন বন্ধ করা হয়েছে বলে ব্লক প্রশাসনের দাবি। নন্দকুমারের বিডিও মহম্মদ আবু তায়েব বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের রিপোর্টের ভিত্তিতে গোপীনাথবাবুর পেনশন বন্ধ হয়েছিল। পরে জানা গিয়েছে এটা ভুলবশত হয়েছে। কাজে গাফিলতির জন্য ওই পঞ্চায়েতের সহায়ককে শো-কজ করা হয়েছে। গোপীনাথবাবু যাতে ফের পেনশন পান তার জন্য দ্রুত ভুল সংশোধন করার চেষ্টা চলছে।’’
কুমরচক পঞ্চায়েতের প্রধান বাসুদেব মন্ত্রী বলেন, ‘‘একজন কর্মীর ভুলেই এমন কাণ্ড হয়েছে। তবে বিষয়টি নজরে আসার পরেই আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy