‘কৃষি আমাদের ভিত্তি শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ’ স্লোগানের সঙ্গে কি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরোধিতা মানানসই? তা-ও যখন প্রায় দুয়ারে হাজির পঞ্চায়েত ভোট! মেঘনাদের জবাব, ‘‘আমরা শিল্পের বিরোধী নই। আমরা চাই শিল্প হোক। সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প ভবিষ্যতের জন্য দরকার। তা বলে সরকারি বীজখামার ধ্বংস করে কেন? অনেক এলাকায় শিল্পের জন্য জমি নিয়েও পড়ে রয়েছে। তা ছাড়া সরকার নিজস্ব উদ্যোগেই করতে পারে এই প্রকল্প। কর্পোরেট সংস্থাকে দিয়ে কেন?’’
এখানেই শাসকদল সরকারি জমি নিয়ে সিপিএমের অবস্থানে বিভ্রান্তির অভিযোগ তুলছে। কারণ, ‘ভিত্তি-ভবিষ্যতের’ স্লোগান ওঠার আগে এখনকার মতোই বীজখামারের পুনরুজ্জীবনের পরিকল্পনা করেছিল বাম সরকার। তারপর শুরু মাওবাদী হিংসা পর্ব। এরপর ‘পরিবর্তন’। রাজনৈতিক জমি হারাতে থাকে বামেরা। ২০১৬ সালে ওই জমিতে কৃষিভিত্তিক শিল্পের দাবিতে সরব হয় তারা। বছর দুই আগেও শিল্প চেয়ে পদযাত্রা হয় ওই জমি থেকে। প্রাক্তন বিধায়ক কৃষ্ণপ্রসাদ দুলে বলেন, ‘‘এখন বলে নয়, বছর দুই আগেও আমরা ফার্ম এলাকা থেকে পদযাত্রা করেছি। তার আগেও আমরা দুর্গাবাঁধ বীজখামারের হাল ফেরাতে, সেখানে কৃষি ভিত্তিক শিল্পের দাবিতে আন্দোলন করেছি।’’ বীজখামারের আধুনিকীকরণ নাকি কৃষিভিত্তিক শিল্প? ওই জমি নিয়ে বামেদের অবস্থান কি স্পষ্ট? মেঘনাদ বলছেন, ‘‘সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প হলে সংস্থার নিজস্ব কিছু দক্ষ শ্রমিক ছাড়া, স্থানীয় তো কেউ কাজ পাবেন না। এ সবের জন্যই আমরা বলছি, বীজখামারকে ধ্বংস না করে তাকে পুনরুজ্জীবিত করা হোক।’’ খোঁচা দিতে ছাড়ছে না শাসকদল। শালবনির তৃণমূল বিধায়ক রাজ্যের মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাতো বলেন, ‘‘বীজখামার নিয়ে সিপিএম ভোল বদলে রাজনীতি করতে নেমেছে। একসময় ওরা শিল্পের দাবি জানাত, এখন উল্টো কথা। সেখানে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প হলে বহু কর্মসংস্থান হবে। তাই দিশাহারা হয়ে এসব করছে সিপিএম।’’
প্রশ্ন রয়েছে তৃণমূলের অবস্থানেও। ক্ষমতায় এসেই সরকারি ওই জমিতে শিল্প গড়তে উদ্যোগী হয় তৃণমূল সরকার। ২০১৩ সালে তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এলাকা পরিদর্শন করেন। ২০১৬ সালে ওই জমিকে শিল্পতালুক ঘোষণা করে শিল্প আনার তোড়জোড় শুরু হয়। রাস্তা হয়। সীমানা প্রাচীর হয়। তাতে নীল-সাদা পোঁচ পড়ে। কিন্তু ভারী শিল্পের দেখা মেলেনি। বর্তমানে এখানে ১২৫ মেগাওয়াট সম্পন্ন সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে সরকার। বিরোধীদের কটাক্ষ, এ হল নাকের বদলে নরুণ!
বীজখামার পুনরুজ্জীবনের দাবি নিয়ে শেষ যে মিছিল করেছে সিপিএম, তাতে নজর কেড়েছে ভিড়। সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুশান্ত ঘোষ বলেন, ‘‘এতবড় একটা বীজখামার তিলে তিলে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে, আমরা বসে থাকতে পারি না। সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া হবে এই আন্দোলন।’’ তবে ভিড়ে চিন্তা নেই তৃণমূলের। কারণ তাদের মতে, সিপিএমের ভিড় বাড়লেও ভোট বাড়ে না।
ভোটের আগে স্বপ্ন বিলি করেন রাজনীতিকরা। আর বছরের পর বছর ধরে শিল্পের প্রতীক্ষায় বসে থাকে বীজ খামারের জমি।