Advertisement
১১ মে ২০২৪
Solar Power Project

Industry: শিল্পের অনন্ত প্রতীক্ষা, জমি সাক্ষী প্রতিশ্রুতির

সরকারি ওই জমি নিয়ে তৃণমূল সরকারের সাম্প্রতিক পরিকল্পনা— সেখানে হবে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প। বিদেশি সংস্থা বিনিয়োগ করবে।

গোয়ালতোড়ে প্রস্তাবিত শিল্প তালুকের রাস্তা।

গোয়ালতোড়ে প্রস্তাবিত শিল্প তালুকের রাস্তা। নিজস্ব চিত্র।

রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য
গোয়ালতোড় শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২২ ০৭:২০
Share: Save:

বীজ খামারের জমিতে রোপণ হচ্ছে লাল-সবুজ স্বপ্ন। জল, সারের অভাবে শুকিয়েও যাচ্ছে স্বপ্নের চারাগাছ।

গোয়ালতোড়ের জিরাপাড়া অঞ্চলের দুর্গাবাঁধে সরকারি বীজখামারের জমি সাক্ষী দুই সরকারের নানা পরিকল্পনা, দ্বিধা, দ্বন্দ্ব আর অস্বস্তির।

সরকারি ওই জমি নিয়ে তৃণমূল সরকারের সাম্প্রতিক পরিকল্পনা— সেখানে হবে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প। বিদেশি সংস্থা বিনিয়োগ করবে। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে পথে নেমেছে সিপিএম। তাদের দাবি, সরকারি ওই বীজ খামারের পুনরুজ্জীবন করতে হবে। স্বভাবতই এর ফলে একদিকে যেমন তৃণমূল তাদের শিল্পবিরোধী তকমা দিচ্ছে, অন্যদিকে অভিযোগ উঠছে জমি নিয়ে তাদের বিভ্রান্তিমূলক অবস্থান নিয়েও। ক্ষমতায় থাকাকালীন পাশের ব্লক শালবনিতে শিল্প গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাম সরকার। তা হলে এখানে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরোধিতা কেন? সিপিএমের কৃষকসভার জেলা সম্পাদক মেঘনাদ ভুঁইয়া বলছেন, ‘‘কৃষক বিরোধী পদক্ষেপ হলেই আমরা কৃষকদের নিয়ে প্রতিবাদ করি, আন্দোলনে থাকি। তা সে সবংয়ে কৃষকদের জমি দখল করে ভেড়ি করাই হোক, আর গোয়ালতোড়ের বীজখামার। আমরা এলাকাতে গিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছি। সাড়াও পাচ্ছি।’’

‘কৃষি আমাদের ভিত্তি শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ’ স্লোগানের সঙ্গে কি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরোধিতা মানানসই? তা-ও যখন প্রায় দুয়ারে হাজির পঞ্চায়েত ভোট! মেঘনাদের জবাব, ‘‘আমরা শিল্পের বিরোধী নই। আমরা চাই শিল্প হোক। সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প ভবিষ্যতের জন্য দরকার। তা বলে সরকারি বীজখামার ধ্বংস করে কেন? অনেক এলাকায় শিল্পের জন্য জমি নিয়েও পড়ে রয়েছে। তা ছাড়া সরকার নিজস্ব উদ্যোগেই করতে পারে এই প্রকল্প। কর্পোরেট সংস্থাকে দিয়ে কেন?’’

এখানেই শাসকদল সরকারি জমি নিয়ে সিপিএমের অবস্থানে বিভ্রান্তির অভিযোগ তুলছে। কারণ, ‘ভিত্তি-ভবিষ্যতের’ স্লোগান ওঠার আগে এখনকার মতোই বীজখামারের পুনরুজ্জীবনের পরিকল্পনা করেছিল বাম সরকার। তারপর শুরু মাওবাদী হিংসা পর্ব। এরপর ‘পরিবর্তন’। রাজনৈতিক জমি হারাতে থাকে বামেরা। ২০১৬ সালে ওই জমিতে কৃষিভিত্তিক শিল্পের দাবিতে সরব হয় তারা। বছর দুই আগেও শিল্প চেয়ে পদযাত্রা হয় ওই জমি থেকে। প্রাক্তন বিধায়ক কৃষ্ণপ্রসাদ দুলে বলেন, ‘‘এখন বলে নয়, বছর দুই আগেও আমরা ফার্ম এলাকা থেকে পদযাত্রা করেছি। তার আগেও আমরা দুর্গাবাঁধ বীজখামারের হাল ফেরাতে, সেখানে কৃষি ভিত্তিক শিল্পের দাবিতে আন্দোলন করেছি।’’ বীজখামারের আধুনিকীকরণ নাকি কৃষিভিত্তিক শিল্প? ওই জমি নিয়ে বামেদের অবস্থান কি স্পষ্ট? মেঘনাদ বলছেন, ‘‘সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প হলে সংস্থার নিজস্ব কিছু দক্ষ শ্রমিক ছাড়া, স্থানীয় তো কেউ কাজ পাবেন না। এ সবের জন্যই আমরা বলছি, বীজখামারকে ধ্বংস না করে তাকে পুনরুজ্জীবিত করা হোক।’’ খোঁচা দিতে ছাড়ছে না শাসকদল। শালবনির তৃণমূল বিধায়ক রাজ্যের মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাতো বলেন, ‘‘বীজখামার নিয়ে সিপিএম ভোল বদলে রাজনীতি করতে নেমেছে। একসময় ওরা শিল্পের দাবি জানাত, এখন উল্টো কথা। সেখানে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প হলে বহু কর্মসংস্থান হবে। তাই দিশাহারা হয়ে এসব করছে সিপিএম।’’

প্রশ্ন রয়েছে তৃণমূলের অবস্থানেও। ক্ষমতায় এসেই সরকারি ওই জমিতে শিল্প গড়তে উদ্যোগী হয় তৃণমূল সরকার। ২০১৩ সালে তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এলাকা পরিদর্শন করেন। ২০১৬ সালে ওই জমিকে শিল্পতালুক ঘোষণা করে শিল্প আনার তোড়জোড় শুরু হয়। রাস্তা হয়। সীমানা প্রাচীর হয়। তাতে নীল-সাদা পোঁচ পড়ে। কিন্তু ভারী শিল্পের দেখা মেলেনি। বর্তমানে এখানে ১২৫ মেগাওয়াট সম্পন্ন সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে সরকার। বিরোধীদের কটাক্ষ, এ হল নাকের বদলে নরুণ!

বীজখামার পুনরুজ্জীবনের দাবি নিয়ে শেষ যে মিছিল করেছে সিপিএম, তাতে নজর কেড়েছে ভিড়। সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুশান্ত ঘোষ বলেন, ‘‘এতবড় একটা বীজখামার তিলে তিলে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে, আমরা বসে থাকতে পারি না। সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া হবে এই আন্দোলন।’’ তবে ভিড়ে চিন্তা নেই তৃণমূলের। কারণ তাদের মতে, সিপিএমের ভিড় বাড়লেও ভোট বাড়ে না।

ভোটের আগে স্বপ্ন বিলি করেন রাজনীতিকরা। আর বছরের পর বছর ধরে শিল্পের প্রতীক্ষায় বসে থাকে বীজ খামারের জমি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Solar Power Project midnapore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE