Advertisement
০২ মে ২০২৪

বালি খাদানে অভিযানে খোদ পুলিশ সুপার, আটক তিন

নয়াগ্রাম ব্লকের একাধিক বেআইনি বালি খাদানের বিরুদ্ধে অভিযান চালালেন ঝাড়গ্রামের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ। রবিবার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভারতীদেবীর নেতৃত্বে বিশাল পুলিশবাহিনী নয়াগ্রামের ডাহি এলাকায় সুবর্ণরেখার চরে দু’টি বালি খাদানে অভিযান চালায়।

জঙ্গলকন্যা সেতুর উপর থেকে পুলিশের নজরদারি। — নিজস্ব চিত্র

জঙ্গলকন্যা সেতুর উপর থেকে পুলিশের নজরদারি। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৩১
Share: Save:

নয়াগ্রাম ব্লকের একাধিক বেআইনি বালি খাদানের বিরুদ্ধে অভিযান চালালেন ঝাড়গ্রামের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ। রবিবার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভারতীদেবীর নেতৃত্বে বিশাল পুলিশবাহিনী নয়াগ্রামের ডাহি এলাকায় সুবর্ণরেখার চরে দু’টি বালি খাদানে অভিযান চালায়। এসপি ভারতীদেবী বলেন, “নয়াগ্রামে সুবর্ণরেখার চরে দু’টি বালি খাদান কর্তৃপক্ষ অবৈধ ভাবে বালি তুলছিলেন বলে আমরা জানতে পারি। অভিযান চালিয়ে তিন জনকে আটক করা হয়েছে। ৩৫টি লরি এবং বেশ কিছু বালি উত্তোলনের যন্ত্রাংশ আটক করা হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হচ্ছে।”

পুলিশ সূত্রের খবর, এলাকায় এ ভাবে অবৈধ বালি খাদান চলার জন্য নয়াগ্রাম থানার আইসি বিধান ভট্টাচার্যকে ঝাড়গ্রাম পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে। আপাতত, ডিএসপি (নয়াগ্রাম) অনিরুদ্ধ ঠাকুর আইসি-র দায়িত্ব সামলাবেন। অবৈধ বালি উত্তোলন ঠেকাতে নদীর চরে সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

নয়াগ্রামের ডাহি এলাকায় সুবর্ণরেখার চরে দু’টি অবৈধ বালি খাদান দীর্ঘদিন ধরে চলছিল। অভিযোগ, শাসক দলের স্থানীয় এক নেতার প্রশ্রয়ে বেআইনি বালি খাদানগুলি প্রকাশ্যে বালি তুলছিল। পে লোডারে বালি তুলে দশ চাকা ও বারো চাকার লরিতে বোঝাই করে বালি পরিবহন করা হত। পুলিশ থানার নাকের ডগায় দিনের পর দিন কয়েকশো লরি এভাবে বহন ক্ষমতার চেয়ে অত্যন্ত বেশি পরিমাণে বালি নিয়ে যাতায়াত করত। অভিযোগ, পুলিশ ও শাসক দলের একাংশের সঙ্গে যোগসাজশের ফলে বালি মাফিয়া-রাজ চলছিল। বেশ কিছুদিন ধরে একাংশ এলাকাবাসী অভিযোগ করছিলেন, বালি তোলার পরে লরিগুলি জল ঝরানোর জন্য জঙ্গলকন্যা সেতুর অ্যাপ্রোচ রোডের উপর পর পর দাঁড়িয়ে থাকত। এর ফলে সেতুর অ্যাপ্রোচ রাস্তাটির ক্ষতি হচ্ছিল। কিন্তু বালি মাফিয়াদের সঙ্গে শাসক দলের একাংশের যোগসাজশ থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করার সাহস পাননি। এ দিকে বেআইনি ভাবে বালি তোলার ফলে নদী পাড়ের একাংশে ভাঙন ধরেছে। গত বছর বালি তোলার ফলে নদীর মাঝে থাকা বিদ্যুতের একটি টাওয়ার ভেঙে পড়েছিল। যার জেরে গত বছর প্রায় দু’সপ্তাহ নয়াগ্রামে বিদ্যুত্‌ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল।

রবিবার ঘটনাচক্রে এসপি ভারতীদেবী গোপীবল্লভপুর থানা পরিদর্শন করে নয়াগ্রামের জঙ্গলকন্যা সেতু দিয়ে খড়্গপুরে যাচ্ছিলেন। সন্ধ্যায় সেতুর অপ্রোচ রোডের ধারে সার সার ভিজে বালিবোঝাই লরি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বিস্মিত হন ভারতীদেবী। পুলিশ সূত্রের খবর, এরপর ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুর পুলিশ লাইনে ফোন করে প্রায় দু’শো ফোর্স তলব করেন এসপি। বিশাল পুলিশ বাহিনী গোটা এলাকাটি ঘিরে তল্লাশি চালায়। থানাকে বাদ দিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত তল্লাশি অভিযানে নেতৃত্ব দেন এসপি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন নয়াগ্রামের আইসি বিধান ভট্টাচার্য। সূত্রের খবর, রুষ্ট এসপি আইসির কাছে জানতে চান, কীভাবে থানার নাকের ডগায় অবৈধ বালি খাদান চলছে। সোমবার আইসিকে ক্লোজ করার নির্দেশ জারি করেন এসপি। দু’টি খাদানের মালিকরা গা-ঢাকা দিয়েছেন বলে খবর। তাঁদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।

তবে প্রশ্ন উঠেছে, মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও কীভাবে নয়াগ্রামে এভাবে বেআইনি বালি খাদান চলছিল! কিছুদিন আগে নয়াগ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপের অভিযোগে তৃণমূলের নয়াগ্রাম ব্লক সভাপতির পদ থেকে উজ্জ্বল দত্তকে সরিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। নয়াগ্রামের বিধায়ক দুলাল মুর্মুকে দলের ব্লক সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। উজ্জ্বলবাবু অবশ্য নয়াগ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পদে রয়েছেন। সূত্রের খবর, উজ্জ্বলবাবুর ডানা ছাঁটার প্রক্রিয়া চলেছে। তার জেরেই পুলিশের এই অভিযান।

নয়াগ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি উজ্জ্বল দত্ত অবশ্য দাবি করেছেন, “খাদান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই। বরং অবৈধ বালি খাদান নিয়ে আমরাই বহুবার প্রশাসনকে জানিয়েছি। এসপি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে অভিযান চালিয়েছেন। এটা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

police patrolling sand pit
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE