Advertisement
E-Paper

বদল হয়নি, অচল নোটই ‘কাঁটা’ সন্ধ্যাদেবীর

একশো দিনের কাজ করেই গত বছর তিনটে পুরনো পাঁচশো টাকার নোট পান সন্ধ্যাদেবী। গত বছরের নভেম্বর মাসের প্রথম দিকে সেই টাকা ব্যাঙ্ক থেকে তুলে আনেন তিনি।

দেবমাল্য বাগচী

শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৩৩
দিশাহারা: এই তিনটি পুরনো পাঁচশো টাকার নোটই চিন্তার কারণ সন্ধ্যাদেবীর। নিজস্ব চিত্র

দিশাহারা: এই তিনটি পুরনো পাঁচশো টাকার নোটই চিন্তার কারণ সন্ধ্যাদেবীর। নিজস্ব চিত্র

বছর খানেক আগে একশো দিনের কাজ করে দেড় হাজার টাকা পেয়েছিলেন তিনি। তিনটি পুরনো পাঁচশো টাকার নোটে মিলেছিল মজুরির টাকা। সেই টাকা খরচ করা দূরের কথা, এক বছর এই তিনটি নোটই যন্ত্রণার কারণ হয়ে উঠেছে খড়্গপুর-১ ব্লকের তেঁতুলমুড়ির বাসিন্দা প্রৌঢ়া সন্ধ্যা দাসের। নোটবন্দির ঘোষণার কথা জানতে না পারায় পুরনো নোট বদল করতে পারেননি। এখন এই অচল নোট নিয়েই দিশাহারা সন্ধ্যাদেবী।

একশো দিনের কাজ করেই গত বছর তিনটে পুরনো পাঁচশো টাকার নোট পান সন্ধ্যাদেবী। গত বছরের নভেম্বর মাসের প্রথম দিকে সেই টাকা ব্যাঙ্ক থেকে তুলে আনেন তিনি। তখন দরকার ছিল না বলে সন্ধ্যাদেবী টাকাটা তুলে রাখেন। তারপরেই ৮ নভেম্বর পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল করার কথা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যদিও ঘরে টিভি বা রেডিও না থাকায় সেই ঘোষণার কথা জানতে পারেননি সন্ধ্যাদেবী। প্রতিবেশীদের থেকে এ বিষয়ে কিছু শোনেননি বলে দাবি তিনি।

সন্ধ্যাদেবীর দাবি, গত বছর ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে টাকার দরকার পড়ায় তিনি ওই পাঁচশো টাকার নোট নিয়ে দোকানে জিনিস কিনতে যান। তখনই তিনি জানতে পারেন, ওই পুরনো নোট আর বাজারে চলবে না। ততদিনে অবশ্য পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বদলের সময়সীমা পেরিয়ে গিয়েছে। তারপরে ব্যাঙ্ক থেকে ডাকঘর— সর্বত্র ঘুরলেও টাকা আর বদল করা যায়নি।

বছর তিরিশেক আগেই মারা যান সন্ধ্যাদেবীর স্বামী গুইরাম দাস। অভাবের সংসারে স্বামীর মৃত্যুর পরে একটি মেয়েকে কোনও রকমে বড় করেছেন তিনি। মেয়ের বিয়েও দিয়ে দিয়েছেন। পাট্টা পাওয়া সামান্য বাস্তুজমি ও চার কাঠা চাষের জমিই একমাত্র সম্বল। দিনমজুরির কাজ করে কোনও রকমে সংসার চালান। সরকারি সাহায্য না মেলায় মাটির বাড়ির জীর্ণ দশা। অভিযোগ, সরকারি আবাস প্রকল্পের টাকাও মেলেনি। জোটেনি বিধবা ভাতাও।

অভাবের সংসারে এমনিতেই নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। তার উপরে তিন তিনটে পাঁচশো টাকার নোট হাতে থাকা সত্ত্বেও খরচ করতে না পারায় সমস্যায় সন্ধ্যাদেবী। তিনি বলেন, “প্রশাসনের সকলের হাত ধরে মিনতি করেছি। তবুও বিধবা ভাতা জোটেনি। এত অভাব সত্ত্বেও বিপিএল তালিকাতেও নাম ওঠেনি। বাড়ি মেরামতির টাকাও পাচ্ছিনা।” স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য মেঘনাদ সিংহ বলেন, “সত্যিই সন্ধ্যাদেবী কঠিন লড়াই করছেন। আসলে বাম আমলে বিপিএল তালিকায় ওর নাম না ওঠায় উনি বিধবা ভাতা পাচ্ছেন না। তবে আমরা চেষ্টা করছি। কেন্দ্রীয় আবাস যোজনায় ওঁর নাম পাঠিয়েছি।”

একদিন বদলাতে পারবেন, এই আশায় তিনটে পুরনো ৫০০ টাকার নোট সযত্নে রেখে দিয়েছেন সন্ধ্যাদেবী। তাঁর কথায়, “নিজের উপার্জনের টাকা। অচল হলেও যত্ন করে রেখে দিয়েছি। একদিন হয়তো বদল করতে পারব!”

Coins Money Demonetisation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy