Advertisement
২৬ অক্টোবর ২০২৪
Lok Sabha Election 2024 Result

দায় কি কারও একার, প্রশ্ন তৃণমূলেই

পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা বিধানসভায় চারটি অঞ্চলে ভোট সংখ্যার নিরিখে বিজেপির থেকে পিছিয়ে রয়েছে তৃণমূল।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০২৪ ০৮:৫৮
Share: Save:

কর্তৃত্ব ফলাবেন যিনি দায় তো তাকেই নিতে হবে। কাজের এক্তিয়ার বেঁধে দেওয়া হলে পরাজয়ের দায় কি সম্পূর্ণ তার উপরে দেওয়া যায়? লোকসভা ভোটের ফল বিশ্লেষণ এমন অস্বস্তিকর প্রশ্ন উঠে আসছে তৃণমূলের অন্দরে। পদ হারানোর আশঙ্কায় প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলছেন না। তবে অনেকেই ঘনিষ্ঠমহলে প্রকাশ করছেন ক্ষোভ। মূলত পরামর্শদাতা সংস্থার বিরুদ্ধেই জমছে কালো মেঘ।

নির্বাচনী প্রচারে এসে দলের অন্দরে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা ছিল, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে ভোটে দলকে ভুগতে হলে প্রয়োজনে জেলায় দলের খোলনলচে আমূল বদলে দেওয়া হবে। তাঁর বার্তা ছিল, নিজের এলাকায় পিছিয়ে পড়লে সংশ্লিষ্ট নেতাকে দায়িত্ব থেকে সরতে হবে। তৃণমূল পিছিয়ে রয়েছে, জেলায় এমন অঞ্চল, ওয়ার্ডের সংখ্যা খুব কম নয়। পিছিয়ে পড়া এলাকার তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের মতে, নির্বাচনী প্রচার চলেছে দলের পরামর্শদাতা সংস্থার নির্দেশে, পরামর্শে। তা হলে কেন শাস্তি কেউ এক পাবেন! দায় কি কারও একার! পরামর্শদাতার দায়িত্বপ্রাপ্ত কারও নয়?

তৃণমূল শীর্ষনেতৃত্ব সূত্রের খবর, পরামর্শদাতা সংস্থার কাজ সীমিত। তবে সীমিত পরিসরেও তাদের মূল্যায়ন যে গুরুত্বপূর্ণ তা মেনে নিচ্ছেন অনেকেই। তৃণমূল সূত্রের খবর, যাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে তাঁরা নজরদারির মধ্যে ছিলেন। কোনও ক্ষেত্রে অন্তর্ঘাত আবার কোনও ক্ষেত্রে একশো শতাংশ উজাড় করে না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে।

পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা বিধানসভায় চারটি অঞ্চলে ভোট সংখ্যার নিরিখে বিজেপির থেকে পিছিয়ে রয়েছে তৃণমূল। এই সব অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত নেতাকর্মীদের ভোটে কী ভূমিকা ছিল, সে নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। এক বুথ সভাপতি বলছেন, ‘‘উপর থেকে যেমন নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, সে ভাবেই আমরা ভোটের কাজ করেছি। এখন আমাদের বলির পাঁঠা করলে, সেটা অন্যায় হবে!’’ চন্দ্রকোনা রোডের শঙ্করকাটা অঞ্চলের কয়েকটি বুথে পিছিয়ে পড়েছে তৃণমূল। এখানকার তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধান জ্ঞানাঞ্জন মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রচারে আমাদের কারও খামতি ছিল না। তাই পিছিয়ে পড়ার পিছনে কাউকে দোষারোপ করা ঠিক নয়। তবে সর্বাগ্রে আমাদের খুঁজে দেখতে হবে, কোথায় ঘাটতি ছিল।’’

এ বারের লোকসভায় মেদিনীপুর বিধানসভা থেকে তৃণমূলের লিড ২,১৭০ ভোটের। এরমধ্যে গ্রামাঞ্চল থেকে লিড এসেছে প্রায় ৭,২০০। শহরে তৃণমূল বিজেপির চেয়ে পিছিয়ে প্রায় ৫,১০০ ভোটে। তৃণমূলের এক জেলা নেতার কথায়, ‘‘শহরে পিছিয়ে থাকার দায় পরামর্শদাতা সংস্থার লোকেরা অস্বীকার করতে পারেন না! দলের স্থানীয় নেতাদের একাংশের মতপার্থক্য নতুন নয়। নির্বাচনী কমিটি গঠনের সময়ে সেটা নতুন মাত্রা নিয়েছিল। উচিত ছিল কমিটি গঠনে ভারসাম্য রাখা। সেটা হয়নি!’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, ‘‘কোন অঞ্চলে পিছিয়ে থাকলে, বুথে পিছিয়ে থাকলে, জেলা সভাপতি হিসেবে আমিও তার দায় এড়িয়ে যেতে পারি না। বুথে হারলে, দায় বুথের সভাপতির থাকলে, আমারও কিছুটা দায় থাকে।’’

ঝাড়গ্রাম জেলায় তৃণমূলের সভাপতি থেকে জয়ী সাংসদ প্রত্যেকেই বলছেন, লোকসভায় প্রচার হয়েছে আইপ্যাকের পরামর্শ মত। যা নিয়ে সরব হয়েছেন মন্ত্রীও। কারণ মন্ত্রী চেয়েছিলেন লালগড়ে ব্লকের স্পর্শকাতর এলাকা নেতাইয়ে তৃণমূল প্রার্থী প্রচার করুক। এ নিয়ে মন্ত্রী দলীয় স্তরে জানিয়েছিলেন। কিন্তু নেতাইয়ে যাননি প্রার্থী। সাংসদ কালীপদ সরেন বলছেন, ‘‘আইপ্যাকের বন্ধুরা যেরকম কর্মসূচি ঠিক করে দিয়েছিল ও আমাকে যেখানে যেখানে যেতে বলেছিল, সেখানেই গিয়েছি। নেতাইয়ে কর্মসূচির জন্য আইপ্যাক বলেনি। নিজে কী করে যাব।’’

রদবদল হচ্ছেই। কেউ পুরস্কৃত হবেন। কেউ পদ হারাবেন। কিন্তু কী হবে তার অভিঘাত। আলোচনা থামছে না তৃণমূলের অন্দরে। (শেষ)

(তথ্য সহায়তা: বরুণ দে, রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য, রঞ্জন পাল)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 midnapore TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE