Advertisement
E-Paper

দুর্ঘটনা, উদ্বেগে পুলিশও

মাস খানেক আগে মোটর বাইক চালিয়ে চন্দ্রকোনা শহরে আসার সময় বিদ্যুতের খুঁটিতে সজোরে ধাক্কা মারেন মদন লোহার। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় সংসারের একমাত্র রোজগেরে মদনের।

অভিজিৎ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৬ ০০:৪৫
ঘাটাল শহরে প্রাণ হাতে নিয়ে এ ভাবেই ছোটে মোটরবাইক। কৌশিক সাঁতরার তোলা ছবি।

ঘাটাল শহরে প্রাণ হাতে নিয়ে এ ভাবেই ছোটে মোটরবাইক। কৌশিক সাঁতরার তোলা ছবি।

মাস খানেক আগে মোটর বাইক চালিয়ে চন্দ্রকোনা শহরে আসার সময় বিদ্যুতের খুঁটিতে সজোরে ধাক্কা মারেন মদন লোহার। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় সংসারের একমাত্র রোজগেরে মদনের।

দাসপুরের শ্যামসুন্দরপুরের অনুপ ডোগরা ও টুম্পা ডোগরা ছোট্ট ছেলেটাকে বাড়িতে রেখে মোটর বাইকে করে ভোট দিতে এসেছিলেন দাসপুরে। ফেরার সময় দাসপুর বাজারে একটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাঁদের ধাক্কা মারে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ডোগরা দম্পতির।

দু’টি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। খবরের কাগজ খুললে প্রতিদিনই টুকরো টুকরোভাবে ছড়িয়ে থাকে মোটর বাইক দুঘর্টনায় মৃত্যুর খবর। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়ে বেড়েই চলেছে দুঘর্টনার সংখ্যা। ঘাটাল মহকুমার চারটি থানায় গত এক বছরে দুঘর্টনার হিসাব দেখলেই পরিষ্কার হয়ে যায় ছবিটা। ২০১৫ সালের মে মাস থেকে ২০১৬ সালের মে মাস পর্যন্ত ঘাটাল থানা এলাকায় মোট ৪২টি দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা হয়েছে ১২ জনের। দাসপুরে ৩৮টি দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা ৯। গত এক বছরে গড়বেতা থানা এলাকায় ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে ৩৯টি দুর্ঘটনায়। কেশপুরে ৩৬টি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের।

মূলত মদ্যপ অবস্থায় বা বেপরোয়া গাড়ি চালানো, হেলমেট ব্যবহার না-করার জন্যই একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটে চলছে। উদ্বিগ্ন জেলা পুলিশও। তাই দুঘর্টনার রাশ টানতে এ বার সচেতনতার উপরই বেশি জোর দিচ্ছে তারা।

জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালালে সংশ্লিষ্ট চালকের লাইসেন্স বাতিল করা হবে। এ জন্য নিয়মিত নাকা হবে। বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালালেই পাকড়াও করা হবে গাড়ি।” ভারতীদেবী জানান, স্কুল-কলেজে তো বটেই বিভিন্ন গঞ্জ এলাকাতেও শিবির করা হবে।

সমস্যার কিন্তু নানা রূপ। জেলার শহরাঞ্চলে গুলিতে এখন ফুটপাথ বলতে কিছুই অবশিষ্ট নেই। শুধু সদর শহরগুলি নয়। গ্রামের মূল সড়কগুলির ফুটপাথও দখল হয়ে গিয়েছে। রাস্তার ধারে পূর্ত দফতরের সমস্ত জমি দখল করেই গড়ে উঠেছে বড় বড় দোকান এমনকী বিশাল বসত বাড়ি।

এখানেই শেষ নয়। স্থানীয় বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছেন, রাস্তার উপরেই ইট, বালি ফেলে রাখা হয় যত্রতত্র। ফলে পথচারীদেরও হেঁটে যেতে হয় মাঝরাস্তা দিয়ে। পথ চলতি এক প্রৌঢ় কটাক্ষ করে বলেই ফেললেন, ‘‘ইদানীং ট্রাফিক আইন মেনে চলাটা তো যেন ভিন গ্রহের নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। মদ্য খাওয়া আর তুফান গতিতে গাড়ি চালানোটা ট্রেন্ড।’’ পুলিশি হিসাবও ওই প্রৌঢ়ের মন্তব্যকে সমর্থন জোগায়। মোটর বাইক হোক বা চারচাকা— মদ্যপ চালকের কারণেই দুঘর্টনা বেশি ঘটছে। সেই সঙ্গে সত্তর শতাংশ মোটর বাইক আরোহীই হেলমেট ব্যবহার করেন না।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাস্তায় পুলিশের নিয়ন্ত্রণও তেমন থাকে না। অপরিসর এবং ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাতেও গাড়ি ছুটে চলে দ্রুত গতিতে। ফলে হামেশাই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সংঘর্ষ ঘটছে। পুলিশের তথ্য বলছে, জেলার কমবেশি সব থানাতেই ফি বছর ৪০-৫০টি দুঘর্টনা ঘটে। বলাই বাহুল্য এটি সরকারি তথ্য। বাস্তব বলছে সব দুঘর্টনার খবর পুলিশের কাছে পৌঁছয় না। পুলিশি নজর এড়িয়ে যাওয়া দুঘর্টনার সংখ্যাও নেহাত কম নয়। ঝক্কি এড়াতে দুঘর্টনার পর অনেকেই আপোসে টাকা-পয়সা দিয়েই মিটিয়ে নেন।

জেলা পুলিশ সুপারের বক্তব্য, “দুঘর্টনা একেবারে বন্ধ করা যাবে না। কিন্তু মানুষ সচেতন হলে, নজরদারি বাড়ালে দুঘর্টনা একটু কমবে।” তাঁর দাবি, ইতিমধ্যেই জেলা পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ মোড় গুলিতে গার্ড-রেলের ব্যবস্থা করেছে। শুরু হয়েছে নাকাও। বেগড়বাই করলেই মামলা হচ্ছে, লাইসেন্সও কেড়ে নেওয়া শুরু হয়েছে।

এমনিতে নতুন বছরের গোড়ায় পালিত হয় পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ। এই সময় দুঘর্টনা অনেকটাই কম হয়। পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ আর নির্দিষ্ট কয়েকদিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে বছরের সব সময়ই নজরদারি চলাতে চাইছে পুলিশ। শিবির করে হেলমেট ব্যবহার, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো বন্ধের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এর জন্য মাইকিং ও করা হবে বলে জানা গিয়েছে।

Accident police Death-rate
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy