Advertisement
E-Paper

ফাঁকা বাড়িতে ধর্ষণ করে খুনের নালিশ

পাশের গ্রামে যাত্রা দেখতে গিয়েছিল গ্রামের অধিকাংশ লোক। ফলে অন্য দিনের তুলনায় সুনসানই ছিল মাইশোরা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার জগন্নাথপুর গ্রাম। সেই সুযোগে শনিবার রাতে বাড়িতে ঢুকে রেখা দোলইকে (৩৮) ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ উঠল। রবিবার সকালে রেখাদেবী ঘুম থেকে উঠতে দেরি করায় সন্দেহ হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৫ ০১:০০

পাশের গ্রামে যাত্রা দেখতে গিয়েছিল গ্রামের অধিকাংশ লোক। ফলে অন্য দিনের তুলনায় সুনসানই ছিল মাইশোরা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার জগন্নাথপুর গ্রাম। সেই সুযোগে শনিবার রাতে বাড়িতে ঢুকে রেখা দোলইকে (৩৮) ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ উঠল।

রবিবার সকালে রেখাদেবী ঘুম থেকে উঠতে দেরি করায় সন্দেহ হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। বাড়ি গিয়ে রেখাদেবীর রক্তাত্ত দেহ দেখতে পান তারা। খবর দেওয়া হয় রেখাদেবীর মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে। মৃতার মেয়ে পুলিশে মাকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ জানান। মৃতার পরিবারের লোকেদের অভিযোগ, পুলিশ ধর্ষণের অভিযোগ না নিয়ে শুধু খুনের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে। ঘটনার খবর পেয়ে পাঁশকুড়া থানার পুলিশ গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না-তদন্তের জন্য তমলুক জেলা হাসপাতালে পাঠায়। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার সুকেশকুমার জৈন বলেন, ‘‘ওই মহিলাকে খুনের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তাঁকে ধর্ষণের কোনও চিহ্ন পাওয়া যায়নি। মৃতদেহের ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পাওয়া গেলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। খুনের কারণ ও এই ঘটনায় জড়িতদের ধরতে তদন্ত শুরু হয়েছে।’’ অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ মৃতার শ্বশুর, ভাসুর ও দেওরকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে আটক করছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস চারেক আগে পাঁশকুড়া থানার জগন্নাথপুর গ্রামের বাসিন্দা ওই মহিলার স্বামীর অপমৃত্যু হয়। অভিযোগ, পারিবারিক অশান্তির জেরে তিনি বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন। মাছ চাষ ও দিন মজুরি করেই তাঁদের সংসার চলত। রেখাদেবীর দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বছর দু’য়েক আগে পাশের দাসপুর থানার ধর্মা গ্রামে তাঁদের বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়া ছেলে মামা বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করে। বছর ছ’য়েকের ছোট মেয়েকে নিয়েই ওই বাড়িতে থাকতেন রেখাদেবী।

স্থানীয় সূত্রে খবর, শনিবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ ছোট মেয়েকে নিয়ে দাসপুরের ধর্মা গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন ওই মহিলা। মেয়েকে সেখানে রেখে বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ একাই বাড়ি ফিরে আসেন তিনি। এ দিন রাতে বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে পাশের বাকুলদা গ্রামে যাত্রা ছিল। জগন্নাথপুরের অধিকাংশ লোকেরাই সেই অনুষ্ঠান দেখতে চলে যায়। প্রতিবেশীরা যাত্রা দেখতে গেলেও ওই মহিলা বাড়িতেই ঘুমিয়ে ছিলেন। এ দিন রাতে ওই মহিলার বাড়ির রান্নাঘরের চাঁচের বেড়ার দেওয়াল ভেঙে ঘরের মধ্যে দুষ্কৃতী ঢুকে তাঁকে খুন করে পালায় বলে অভিযোগ।

রবিবার সকালে ওই মহিলা ঘুম থেকে না ওঠায় প্রতিবেশীরা তাঁকে ডাকতে যান। স্থানীয় বাসিন্দারা দেখেন রেখাদেবীর ঘরের প্রবেশ পথের দরজায় ভিতর থেকে তালা দেওয়া। যদিও হাঁক়ডাকে রেখাদেবী কোনও সাড়া দিচ্ছেন না। এরপরই ঘরের দরজা ভেঙে ঘরের মধ্যে রেখাদেবীর রক্তাত্ত দেহ দেখতে পান স্থানীয়রা। অভিযোগ, রেখাদেবীর পোশাক অবিন্যস্ত অবস্থায় ছিল। তাঁর মাথাতেও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান তমলুকের সার্কেল ইনস্পেক্টর দেবাশিস ঘোষ। মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে ওই মহিলার বড় মেয়েও আসেন। তিনি পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান, তাঁর মায়ের উপর শারীরিক অত্যাচার করে খুন করা হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করেননি। এই ঘটনায় যুক্তদের দ্রুত ধরার দাবিও জানান তিনি।

রেখাদেবীর প্রতিবেশী তৃপ্তি অধিকারী বলেন, ‘‘স্বামী মারা যাওয়ার পরে বড় মেয়ের সাহায্যেই সংসার চালাতেন রেখাদেবী। পাড়ায় কারও সঙ্গে তাঁর গণ্ডগোলও ছিল না। ওই মহিলার ছোট মেয়ে প্রায়ই পিসি ও দিদির বাড়িতে গিয়ে থাকত। শনিবারও ছোট মেয়েকে পিসির বাড়িতে দিয়ে বিকেলেই বাড়িতে ফেরেন তিনি।’’ তিনি জানান, শনিবার রাতে তাঁরা পাশের গ্রামে যাত্রা দেখতে চলে গিয়েছিলেন। রাতে একাই বাড়িতে ছিলেন ওই মহিলা। ওই সময়ের মধ্যেই এই ঘটনা বলে তাঁদের অনুমান।’’

মৃতার বাড়ির কিছুটা দূরেই থাকেন তাঁর দেওর প্রশান্ত দোলই। তিনি বলেন, ‘‘শনিবার রাতে আমরা পাশের গ্রামে যাত্রা দেখতে গিয়েছিলাম। তাই এই ঘটনা টের পাইনি। তবে যে ভাবে ঘরের মধ্যে বিছানায় তাঁর দেহ পড়েছিল, তা দেখে আমাদের অনুমান দুষ্কৃতীরা বৌদির উপর অত্যাচার করে তারপর খুন করেছে। আমরা চাই, অভিযুক্তদের দ্রুত ধরুক পুলিশ।’’ ওই গ্রামের বাসিন্দা তথা স্থানীয় মাইশোরা গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান পুতুল ভুমিজ বলেন, ‘‘কী কারণে ওই মহিলাকে খুন করা হয়েছে বুঝতে পারছি না। তবে এই ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক। পুলিশ ওই ঘটনায় জড়িতদের ধরার পাশাপাশি এলাকার নিরাপত্তার জন্যও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিক।’’

Panskura Rape Midnapore Murder Police Security
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy