Advertisement
০২ মে ২০২৪

স্পিকারের কাছে রাস্তার দাবি বিরিহাঁড়ির

এক সময়ের মাওবাদী প্রভাবিত বিরিহাঁড়ি-সহ ১২টি গ্রামের সংযোগকারী মূল রাস্তাটি বেহাল। রাজ্য রাজনীতির পালাবদলেও চেহারা ফেরেনি ঝাড়গ্রাম ব্লকের কলাবনি থেকে বিরিহাঁড়ি হয়ে ফাঁসিতলা যাওয়ার প্রায় ১৪ কিলোমিটার রাস্তাটির

রাস্তা: এমনই বেহাল। —নিজস্ব চিত্র।

রাস্তা: এমনই বেহাল। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
 ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৭ ০১:১৫
Share: Save:

মহানবমীর বিকেল। প্রত্যন্ত বিরিহাঁড়ি গ্রামের থিম পুজো দেখতে সপরিবারে হাজির পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়! ঘটনাচক্রে তখন প্রতিমা ও মণ্ডপ দর্শনে এসেছিলেন ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মধ্যক্ষ শুভ্রা মাহাতোও। দু’জনকে কাছে পেয়ে গ্রামের মূল কাঁচা রাস্তাটি পাকা করার দাবি জানিয়ে ফেললেন বাসিন্দারা।

এক সময়ের মাওবাদী প্রভাবিত বিরিহাঁড়ি-সহ ১২টি গ্রামের সংযোগকারী মূল রাস্তাটি বেহাল। রাজ্য রাজনীতির পালাবদলেও চেহারা ফেরেনি ঝাড়গ্রাম ব্লকের কলাবনি থেকে বিরিহাঁড়ি হয়ে ফাঁসিতলা যাওয়ার প্রায় ১৪ কিলোমিটার রাস্তাটির। গোটা পথ জুড়ে বড় বড় গর্ত। নেদাবহড়ার কাছে আবার রয়েছে একটি বিপজ্জনক কাঠের সাঁকো। সে সাঁকো দিয়েই মোটর বাইক, যাত্রীবাহী ট্রেকার ও মালবাহী ছোট গাড়ি যাতায়াত করে। বেহাল রাস্তার জন্যই এখনও ওই রুটে কোনও বাস চালু করা যায়নি।

বাম জমানায় ঝাড়গ্রাম শহরের অদূরে জঙ্গল ঘেরা নেদাবহড়া ও আগুইবনি পঞ্চায়েত এলাকার ১২ টি গ্রামে গড়ে উঠেছিল মাওবাদীদের সংগঠন। সে সময় কলাবনি থেকে বিরিহান্ডি হয়ে আগুইবনি যাওয়ার কাঁচা রাস্তার দু’পাশের গ্রামগুলির নিয়ন্ত্রণ ছিল মাওবাদীদের হাতে। সন্ত্রাস পর্বে এলাকার ২৬ জনকে খুন করেছিল মাওবাদীরা।

বাসিন্দাদের আক্ষেপ, দুর্গম এলাকায় রাস্তাঘাট তৈরি হয়ে যাচ্ছে, অথচ এই ১২ টি গ্রামের যোগাযোগের রাস্তাটি তৈরি হচ্ছে না।

গত বছর থেকে বিরিহাঁড়ি গ্রামের উদীয়মান তরুণ সঙ্ঘের উদ্যোগে সর্বজনীন পুজো শুরু হয়েছে। এ বার দ্বিতীয় বর্ষের পুজোর থিম অদৃশ্য দুর্গা দেখতেও মানুষের ঢল নেমেছিল। রাজ্য সরকারের বিশ্ববাংলা সম্মান ও ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশের সেরা পুজোর পুরস্কার জিতে নিয়েছে এই পুজো। প্রতিদিন ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থী এসেছেন।

আর পুজোর মরসুমে দিনরাত কয়েকশো গাড়ি যাতায়াতের ফলে রাস্তার আরও দফারফা। ভাড়ার গাড়ির চালক অর্ক প্রামাণিক বলেন, ঝাড়গ্রাম থেকে বিরিহাঁড়ি গ্রাম মাত্র সাত কিলোমিটার। কিন্তু খারাপ রাস্তার জন্য পৌঁছতে এক ঘণ্টার বেশি সময় লাগছে। পুজোর সময় যানজটও হয়েছে বিস্তর।

পুজোয় সপরিবারে ঝাড়গ্রামে ব্যক্তিগত সফরে এসেছিলেন স্পিকার বিমানবাবু। গত শুক্রবার নবমীর বিকেলে বেহাল রাস্তায় চলেছে তাঁর কনভয়। পুজো দেখে খুশি তিনি। পুজোর কর্মকর্তা ও স্থানীয় আগুইবনি পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য জগদীশ মাহাতো বলেন, ‘‘আমরা স্পিকার সাহেবকে রাস্তাটি পাকা করার অনুরোধ জানাই। তখন পূর্ত কর্মধ্যক্ষও ঠাকুর দেখতে এসেছিলেন। ওঁর সামনেই স্পিকার সাহেব আশ্বাস দেন এবং পূর্ত কর্মধ্যক্ষকে পদক্ষেপ করতে বলেন।’’ ফলে সাধারণ মানুষও ‘এ বার কিছু একটা হবে’ বলে আশা করছেন।

কিন্তু আশ্বাস তো এই প্রথম নয়! রাজ্যের ক্ষমতার পালা বদলের পরেই প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় রাস্তাটি পাকা করার আশ্বাস দেওয়া হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, এলাকায় তিনটি হাইস্কুল রয়েছে। পড়ুয়া ও শিক্ষকদের যাতায়াত করতে খুব সমস্যা হয়। কৃষিনির্ভর এলাকায় বেশির ভাগ চাষি অর্থকরী আনাজ চাষ করেন। কিন্তু খারাপ রাস্তার জন্য গ্রামে পাইকার ব্যবসায়ীরা এখানে আসতে চান না। বাধ্য হয়ে চাষিরা ঝাড়গ্রামের হাটে আনাজ বেচতে যান। ফলে পরিবহণ খরচ বাড়ে।

বাসিন্দাদের দাবি, আগে পাঁচটি ট্রেকার চলত। এখন সারাদিনে একটা ট্রেকার দিনে দু’বার যাতায়াত করে ঝাড়গ্রাম ও ফাঁসিতলার মধ্যে। রাতবিরেতে কেউ অসুস্থ হলে অ্যাম্বুল্যান্সও ঢুকতে চায় না।

ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ‍্যক্ষ শুভ্রা মাহাতো বলেন, ‘‘কয়েক বছর আগে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদ থেকে রাস্তা পাকা করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু রাস্তার কিছুটা অংশ স্যাটেলাইট চিত্রে পাওয়া যাচ্ছিল না। সেই সমস্যা মিটেছে।’’ তাঁর দাবি, মাত্র কয়েক মাস হল ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদ গঠন হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ হলেই কাজ শুরু হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

speaker Road ঝাড়গ্রাম
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE