সাহায্য: ত্রাণ বিলিতে সোনাখালি স্কুলপাড়া পুজো কমিটির সদস্যরা। ছবি: কৌশিক সাঁতরা
বন্যার জল নেমেছে। হাসপাতাল, ব্যাঙ্ক, এটিএম, নাগরিক পরিষেবা সবে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। তবে মেলায়নি বন্যার ক্ষতচিহ্ন। তারই মধ্যে ঘাটালে শুরু হয়েছে পুজোর প্রস্তুতি।
বছর শেষে ঘরের মেয়ে বাড়ি ফিরবে। সাধ্যমতো আগমনী-আয়োজনে তাই যেন ফাঁক না থাকে, সেই তোড়জোড় শুরু হয়েছে। জাঁকজমক পাট সরিয়ে উৎসবের আনন্দে মন দিচ্ছেন পুজো উদ্যোক্তারা।
অনেকেই তাদের পুজোর বাজেট কমিয়ে বন্যার্তদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। অনেকেই বলছেন, ‘‘এই জল, বন্যা তো প্রতি বছরের। আবার দুর্গাও আসে প্রতি বছর। এটুকু আনন্দ না থাকলে বাঁচি কী করে?’’ তবে অনিশ্চয়তা একটা ছিলই। কী হবে, কেমন করে হবে! আপাতত সে সব দোলাচল কাটিয়ে পুরোদমে চলছে মণ্ডপ সজ্জার কাজ।
কুশপাতা পঞ্চপল্লি থেকে দাসপুরের সোনাখালি, পাঁচবেড়িয়া-চাঁইপাট সবর্ত্রই পুজো মণ্ডপে থিমের টান। এই সব পুজো কমিটি বাজেট কমিয়ে এনেছে, কারণ বন্যা। তবে জৌলুস কমছে না কোথাও।
চাঁইপাট স্কুলপাড়ার চমক বাহুবলি-২ সিনেমায় ব্যবহৃত নৌকা। প্লাইউড, কাঠ, থার্মোকল দিয়ে সে নৌকা তৈরি হচ্ছে। নৌকায় উঠলেই মূল মণ্ডপে ঢুকতে পারবেন দশর্করা। প্রায় ৭০ ফুট উচ্চতার মণ্ডপ তৈরি করছেন শিল্পী স্বদেশরঞ্জন মাইতি। সঙ্গে বাহারি আলোকসজ্জা।
পাঁচবেড়িয়া সানরাইজ পুজো কমিটির থিম ‘স্মৃতি জাল’। বহু ব্যবহৃত হারিয়ে যাওয়া নানা সামগ্রী দিয়ে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। পোস্ট কার্ড, কাঠের পুতুল, লণ্ঠন, চটের আসন দিয়ে সাত হাজার বর্গফুট এলাকা জুড়ে মণ্ডপটি তৈরি করছেন গৌরাঙ্গ কুইলা। মণ্ডপটি সাজানো হয়েছে হরেকরকমের রঙিন উল দিয়ে। কুমোরটলির মিন্টু পালের হাতে সাবেকি প্রতিমা। বাজেট ১৪ লক্ষ টাকা। উদ্যোক্তাদের পক্ষে নির্মল পালোধী বলেন, “এতদিন এলাকার মানুষ জলবন্দি অবস্থায় ছিলেন। অনেক ক্ষতি হয়েছে। তবু বাঁচতে হবে নতুন করে। তাই পুজোর আয়োজন। আমরা মানুষের পাশে আছি।’’ সকলেই সাধ্য মতো সাহায্যের চেষ্টা করছেন দুর্গতদের সাহায্য করার।
সোনাখালি স্কুলপাড়া পুজো কমিটি তাদের বাজেট কেটে ছেঁটে ১৭ লক্ষ টাকায় নামিয়ে এনেছে, জানালেন কমিটির সম্পাদক পবিত্র মণ্ডল। যেটুকু সঞ্চয় করা গিয়েছে, তা দিয়ে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। তবু থিম করেছে সোনাখালি স্কুলপাড়া— মহেঞ্জোদাড়ো সভ্যতা। চট, সিমেন্ট, প্যারিস-বাঁশ, কাঠ আড়াই হাজার বছর আগের সভ্যতার নির্মাণ। শিল্পী মিলন কুইলার হাতে ফুটে উঠছে পুরোহিত রাজ বা নর্তকীর মতো একাধিক বিখ্যাত মূর্তি।
কলাইকুণ্ডু চতুর্মুখ সবর্জনীনের থিম ‘সেভ ড্রিঙ্কিং ওয়াটার’। কাঠের গুঁড়ো, থার্মোকল, প্যারিস, ফাইবার দিয়ে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। পুজো কমিটির পক্ষে বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী বলেন, “আমাদের মূল উদ্দেশ্যই হল পানীয় জল অপচয় বন্ধ করা। জলই জীবন। ঘাটালের বন্যা পরিস্থিতিতে সেই জল আরও দুর্লভ হয়ে ওঠে।’’
১৭ পল্লি কুশপাতা যুবসঙ্ঘের পুজোয় ‘স্ট্যাচু অব লিবার্টি’ তৈরি হচ্ছে থার্মোকল, প্লাই, কাঠ, প্যারিস-মাটি দিয়ে প্রায় ৫০ ফুট উঁচু। পিছিয়ে নেই কুশপাতা পঞ্চপল্লিও। তাদের এ বারের থিম সার্কাস। খেলা, জোকারের নানা কসরত, বাঘ, হাতি, ঘোড়াকে মণ্ডপের মধ্যে হাজির করছেন উদ্যোক্তারা। সবই অবশ্য মাটি, কাঠ, দড়ি, থার্মোকলের। মণ্ডপ তৈরি করছেন শিল্পী সঞ্জয় মাইতি। পুজো কমিটির পক্ষে অরূপ মাঝি, তুফান মণ্ডলেরা বলেন, “দিন কুড়ি হল জল নেমেছে শহরে। বহু কাজ বাকি। সারারাত কাজ করছেন শিল্পী ও তাঁর সঙ্গীরা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy