Advertisement
E-Paper

খন্দপথে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই যাতায়াত

টানা বৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে সব্জি-মাছের। দফায় দফায় বৃষ্টির জেরে বেহাল পূর্ব মেদিনীপুর জেলার অধিকাংশ গ্রামীণ পাকা সড়ক ও মোরাম রাস্তাও। জীর্ণ পথে বাড়ছে দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও। নাভিশ্বাস স্থানীয় বাসিন্দাদের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:৪৭
তমলুক থেকে কোলাঘাট প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার বেহাল রাস্তা। —নিজস্ব চিত্র।

তমলুক থেকে কোলাঘাট প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার বেহাল রাস্তা। —নিজস্ব চিত্র।

টানা বৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে সব্জি-মাছের। দফায় দফায় বৃষ্টির জেরে বেহাল পূর্ব মেদিনীপুর জেলার অধিকাংশ গ্রামীণ পাকা সড়ক ও মোরাম রাস্তাও। জীর্ণ পথে বাড়ছে দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও। নাভিশ্বাস স্থানীয় বাসিন্দাদের। হয়রানির শিকার হচ্ছে ছাত্রছাত্রীরাও।

বৃষ্টির জেরে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা ও গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়ন তহবিল (আরআইডিএফ) থেকে বরাদ্দ অর্থে তৈরি জেলার গ্রামীণ পাকা রাস্তাগুলির অধিকাংশেই খানাখন্দ তৈরি হয়ে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ। ফলে ওইসব রাস্তায় ট্রেকার, মেশিন ভ্যান, ভ্যানরিকশা, মোটরবাইক, সাইকেলে যাতায়াত করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তমলুক, কাঁথি, এগরা ও হলদিয়া- জেলার চারটি মহকুমাতেই গ্রামীণ পাকা রাস্তার অধিকাংশের এই বেহাল অবস্থার কথা স্বীকার করেছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সোমনাথ বেরা। তিনি বলেন, ‘‘টানা বৃষ্টির কারণে জেলার প্রায় সব এলাকাতেই গ্রামীণ পাকা সড়ক ও মোরামেরা রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনা ও আরআইডিএফ প্রকল্পে তৈরি গ্রামীণ রাস্তাগুলির মধ্যে ৮ টি পাকা রাস্তা মেরামতির জন্য রাজ্য সরকারের কাছে ৬০ কোটি টাকা চেয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া মোরাম রাস্তা মেরামতির জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’’

জেলা পরিষদ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় গত কয়েক বছরে জেলায় মোট ১২১টি গ্রামীণ পাকা রাস্তা তৈরি হয়েছে। রাস্তাগুলির দৈর্ঘ্য প্রায় ৭৫৫ কিলোমিটার। এ ছাড়াও গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়ন তহবিল (আরআইডিএফ) থেকে বরাদ্দে অর্থে জেলায় বেশ কিছু গ্রামীণ রাস্তা পাকা করা হয়েছে। জেলা পরিষদের এইসব পাকা রাস্তার মধ্যে বেশ কিছু গ্রামীণ রাস্তা চলতি বছর বর্ষার আগে থেকেই বেহাল ছিল। গত জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে অগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত একটানা ভারী বৃষ্টিপাতের জেরে জেলার সর্বত্র গ্রামীণ পাকা রাস্তা, কংক্রিটের রাস্তা ও মোরাম রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে খানাখন্দ তৈরি হয়। ফলে অধিকাংশ গ্রামীণ রাস্তা বেহাল হয়ে যাতায়াতের পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

বেশ কয়েক বছর আগে পাঁশকুড়া পুরাতন বাজার থেকে মাইশোরা বাজার হয়ে শ্যামসুন্দরপুর পাটনা পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার কাঁসাই নদী বাঁধের রাস্তা প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় মোরাম থেকে পাকা করা হয়েছিল। সেই রাস্তা এখন বেহাল হয়ে গিয়েছে। স্থানীয় পূর্ব গুড়তলা গ্রামের বাসিন্দা স্বপন খাঁড়ার অভিযোগ, ‘‘কাঁসাই নদী থেকে বালি তুলে লরিতে করে এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াতের ফলে রাস্তা এমনিতেই খারাপ হয়ে গিয়েছিল। টানা ভারী বৃষ্টির জেরে ওই রাস্তায় বড়বড় খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। ফলে ওই রাস্তা দিয়ে ট্রেকারে পাঁশকুড়া যাতায়াত করা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। বাধ্য হয়ে কেশাপাট হয়ে পাঁশকুড়া বাজারে যাতায়াতে
করতে হচ্ছে।’’

একই ভাবে, চণ্ডীপুর ব্লকের চণ্ডীপুর বাজার থেকে বরোজ বাজার হয়ে যাদবমিশ্রচক পর্যন্ত প্রায় ৯ কিলোমিটার রাস্তা প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় তৈরি হয়েছিল বেশ কয়েকবছর আগে। ওই গ্রামীণ পাকা রাস্তায় স্থানীয় বাসিন্দাদের যাতায়াতের জন্য ট্রেকার চলে। এ ছাড়াও সাইকেল, মোটরসাইকেল, ভ্যান রিকশা চড়ে প্রতিদিন অনেক লোক চণ্ডীপুর বাজার থেকে বরোজ হাইস্কুল, চৌখালি হাইস্কুল, চৌখালি গার্লস হাইস্কুল, গোপীনাথপুর হাইস্কুল, গোপীনাথপুর গার্লস হাইস্কুল, আটাত্তর হাইস্কুলে যাতায়াত করে। এ ছাড়া স্থানীয় বাসিন্দারাও এই রাস্তা ধরেই চণ্ডীপুর বাজারে যাতায়াত করে। তবে ওই রাস্তা এখন বেহাল হয়ে পড়ায় যাতায়াত বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।

স্থানীয় দামোদরপুর গ্রামের বাসিন্দা সুপ্রভাত পাত্রের অভিযোগ, ‘‘গত প্রায় দু’বছর ধরে রাস্তার বেশ কয়েক জায়গায় গর্ত তৈরি হয়েছে। আর কিছুদিন আগে একটানা ভারী বৃষ্টির জেরে এই পাকা রাস্তার বেশির ভাগ অংশের অবস্থা খুব খারাপ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেকারে চড়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।’’

বেহাল রাস্তাগুলি সংস্কারের জন্য রাজ্য সরকারের কাছে অর্থ চেয়ে আবেদন করেছে জেলা পরিষদ। অতিরিক্ত জেলাশাসক ( উন্নয়ন) অজয় পাল বলেন, ‘‘ভারী বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামীণ সড়কগুলি মেরামতির জন্য অর্থ চেয়ে ইতিমধ্যে রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামীণ মোরাম রাস্তাগুলি মেরামতির জন্য সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। ওইসব রাস্তাঘাট মেরামতির জন্য পুজোর আগেই অর্থ পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। অর্থ বরাদ্দ হলে যাতে দ্রুত কাজ হয় সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে
বলা হয়েছে।’’

Tamluk Road heavy rain Damodor pur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy