Advertisement
১১ মে ২০২৪
পুজোর রেলশহরে আশঙ্কা

যানজটে আনন্দ মাটি হবে না তো!

গলিপথ হোক বা শহরের প্রধান রাস্তা, আধ কিলোমিটার পথ পেরোতে পাক্কা আধ ঘণ্টা। গাড়ি হোক বা মোটরবাইক, ক্লাচ টিপে-টিপে যানজট ঠেলে এগোনো মহা ঝক্কি।

গাড়ির সারিতে ভোগান্তির অপেক্ষা। খড়্গপুরের পুরাতনবাজারে। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

গাড়ির সারিতে ভোগান্তির অপেক্ষা। খড়্গপুরের পুরাতনবাজারে। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

দেবমাল্য বাগচী
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৪৪
Share: Save:

গলিপথ হোক বা শহরের প্রধান রাস্তা, আধ কিলোমিটার পথ পেরোতে পাক্কা আধ ঘণ্টা। গাড়ি হোক বা মোটরবাইক, ক্লাচ টিপে-টিপে যানজট ঠেলে এগোনো মহা ঝক্কি। পুজোর আগেই রেলশহর খড়্গপুরের যা অবস্থা, তাতে পুজোর চারদিন যানজটরূপী অসুরকে কী ভাবে সামলানো যাবে, সেটাই এখন চিন্তা।

খড়্গপুরবাসীর বিগত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা বলছে, একে সঙ্কীর্ণ সড়ক, তায় সুষ্ঠু ভাবে যান চলাচলের জন্য পরিকল্পনার অভাবই এই ভোগান্তির কারণ। এমনকী পুজোর আগে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা পরিকল্পনা করা হলেও পুজোর দিনগুলিতে ভিড়ের চাপে তা ভেস্তে যায় বলে অভিযোগ। স্ত্রীকে নিয়ে ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে নাজেহাল হয়েছিলেন সাঁজোয়ালের বাসিন্দা রেলকর্মী কৃশানু আচার্য। তিনটি মণ্ডপে ঘুরে কোনওক্রমে বাড়ি ফিরেছিলেন। সেই কৃশানুবাবু বলছেন, “প্রতিবছর পুজোর আনন্দ মাটি হয়ে যায় এই যানজটে। সঙ্কীর্ণ রাস্তায় জবরদখল তো রয়েছেই। আর পুলিশ নানা পরিকল্পনার কথা বললেও পুজোয় তো তা চোখে দেখতে পাই না। এ বারও নিশ্চয়ই তাই হবে।”

রেলশহর খড়্গপুরে এমনিতেই মিশ্র ভাষাভাষি মানুষের বাস। বারো মাসে তেরো পার্বণ লেগেই রয়েছে। তাছাড়া, জনসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চারচাকা ও মোটরবাইকের সংখ্যা। দুর্গাপুজোর সময় নতুন গাড়ি কেনার প্রবণতাও বাড়ে। শোরুমগুলিতে উৎসবের মরসুমে চলে নানা অফার। পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, খড়্গপুর মহকুমায় যে পরিমাণ মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন হয় তার সিংহভাগই খড়্গপুর শহরের। গত দু’মাসের প্রচুর বাইক বিক্রি হয়েছে মহকুমায়। গত অগস্টে প্রায় ৯৬৮টি আর সেপ্টেম্বরে ১২৪০টি মোটরবাইক রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। এই হারে গাড়ি বাড়লেও রাস্তার হাল ফেরেনি। ফলে, পুজোর ক’দিন কৌশল্যা, মালঞ্চ, টাউন থানার সেতু, গোলবাজার সেতু, নিমপুরা রোড, প্রেমবাজার, সুভাষপল্লিতে মারাত্মক যানজটের আশঙ্কা করছেন শহরবাসী। তাছাড়া, খরিদা ও গিরিময়দান রেলগেটের উপর উড়ালপুল না হওয়ায় সেখানেও যানজটের মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কলেজ পড়ুয়া সুস্মিতা চক্রবর্তীর কথায়, “প্রতিবার স্কুটি নিয়ে ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে যানজটে ফেঁসে নাজেহাল হতে হয়। তার উপর মোরাম দিয়ে রাস্তার খানাখন্দ ভরাট করায় যা ধুলো হয় তাতে পুরো সাজগোজ নষ্ট হয়ে যায়। পুজোর মুখে নয়, আরও আগে প্রশাসনের এ ব্যাপারে তৎপর হওয়া উচিত।’’

পুজোর ক’দিন শহরবাসীকে স্বস্তি দিতে পুলিশ-প্রশাসন অবশ্য নানা পরিকল্পনাই করছে। ঠিক হয়েছে, প্রতিটি মণ্ডপ লাগোয়া এলাকায় গড়ে তোলা হবে পার্কিং জোন। আর পুজোর দিনগুলিতে শহরে মালবাহী গাড়ি ঢুকতে দেওয়া হবে না। রাত দশটার আগে শহরের বাইরে থেকে আসা কোনও গাড়ি, বাসও ঢুকতে পারবে না। বাইরে থেকে কেউ গাড়িতে শহরে আসতে চাইলে ইন্দার কাছে গাড়ি রেখে হেঁটে ঠাকুর দেখতে হবে। এ ছাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে টোটো-অটো অন্য রুটে ঘুরিয়ে স্টেশন দিয়ে চলাচল করবে। গোলবাজার দিয়ে কোনও টোটো-অটো চলবে না বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তারপরেও যানজট সামলাতে বিশাল পুলিশ বাহিনী থাকবে রাস্তায়। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক গুপ্ত বলেন, “আমরা পুজোয় যাতে কোনও যানজট না হয় তার জন্য নানা পরিকল্পনা করেছি। আশা করছি সুষ্ঠুভাবে দর্শনার্থীরা মণ্ডপে ঘুরতে পারবেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Road Jam Public Suffers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE