দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে মোষ বাঁচিয়েই চলতে হয় পথ। খড়্গপুরে। নিজস্ব চিত্র
সিগন্যাল মানে না ওরা। রাস্তায় দ্রুত গতিতে গাড়ি চললেও কুছ পরোয়া নেই। দুলকি চালে রাজকীয় মেজাজে রেলশহরের রাস্তায় অবাধে ঘোরে গরু-মোষের দল! তাদের দেখে গাড়ির ব্রেক না কষলে দুর্ঘটনা অনিবার্য।
দিন কয়েক আগেই মোটরবাইকে সক্কাল সক্কাল বাজারে যাচ্ছিলেন খড়্গপুরের ঝাপেটাপুরের বাসিন্দা আশিস দত্ত। হঠাৎ সামনে হাজির একপাল মোষ। কোনওমতে ব্রেক কষে বাইক থামালেন তিনি। আশিসবাবুর বাইকের পিছনে থাকা গাড়িও সজোরে ঝাঁকুনি দিয়ে থামল। তারপরে তো আর এক কেলেঙ্কারি। গাড়ি যাওয়ার জায়গা না ছে়ড়েই মেজাজে চলেছে মোষের দল। তাই মোষের পিছনেই দুলকি চালে যেতে হবে। অন্য উপায় নেই। বাইকে যেতে যেতেই আশিসবাবু বলছিলেন, “প্রতিদিন এই এক যন্ত্রণা। সামনে এক পাল মোষ। পিছনে গাড়ির সারি। আমাদের দর্শক হয়ে দেখা ছাড়া গতি কী?”
নির্বিশেষে খড়্গপুরের সর্বত্রই কমবেশি একই ছবি। মোষের গুঁতো খাওয়ার ভয়ে দুর্ঘটনাও ঘটছে আকছার। আবার মোষের পিছনে ধাক্কা মেরে তাড়াও খেতে হচ্ছে। বছরের পর বছর এ ভাবে নাকাল হতে হতে এটাই অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছে, বলছিলেন খরিদার এক বাসিন্দা। শহরের বাসিন্দাদের দাবি, রাস্তায় গরু চলাচলে রাশ টানতে পদক্ষেপ করুক প্রশাসন। শহরের ঝাপেটাপুর মোড় থেকে কৌশল্যা যাওয়ার রাস্তায় সমস্যা সবচেয়ে বেশি। ঝাপেটাপুর মোড় থেকে কৌশল্যার রাস্তা এমনিতেই সঙ্কীর্ণ, তার উপর দিনের ব্যস্ত সময়ে এই রাস্তায় যানবাহনের চাপও যথেষ্ট বেশি। এমন সময় গরু-মোষের দাপটে যানজট নিত্যদিনের যন্ত্রণা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এত গরু-মোষ কোথা থেকে আসে, কেউ জানে না। এদের মালিক কে তাও জানা নেই। সমস্যার কথা স্বীকার করে এলাকার কাউন্সিলর তথা খড়্গপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পাণ্ডে বলছেন, “এই গরু-মোষগুলির মালিক কে তা আমরা জানি না। গরু-মোষগুলি রাস্তায় ঘুরে বেড়ানোয় সত্যিই সমস্যা হচ্ছে।” বুলবুলচটির বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত দিলীপ সরখেল বলেন, “যে ভাবে ঝাপেটাপুরের প্রধান রাস্তায় গরু-মোষ ঘুরে বেড়ায়, এর থেকে কবে মুক্তি পাব জানিনা।’’ তাঁর কথায়, ‘‘দিন কয়েক আগেই মোটরবাইকে যাওয়ার সময়ে গরুকে বাঁচাতে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা এক সাইকেল আরোহীকে ধাক্কা মারি। এ ভাবে প্রতিদিন ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে।’’ এ বিষয়ে খড়্গপুরের এসডিপিও সন্তোষ মণ্ডল বলেন, “এই বিষয় আমরা দেখিনা। মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করতে রাস্তায় গরু-মোষের ঘুরে বেড়ানো নিয়ন্ত্রণ করতে পারে পুরসভা।” অবশ্য পুরপ্রধান প্রদীপবাবু বলছেন, “পুরসভা এই ধরনের কাজ করতে পারে কি না তা জানতে হবে। সমস্যার সমাধান প্রয়োজন। খোঁজখবর নিয়ে পদক্ষেপ করব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy